ফেতনার সময় মুমিনের করণীয়
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাজে অহরহ ফেতনা সংঘটিত হচ্ছে। অপ্রয়োজন ও অযথা কথা ও কাজে মানুষ ফেতনার পেছনে দৌড়াচ্ছে। অথচ হাদিসে পাকে প্রিয় নবি মুমিন মুসলমানের উদ্দেশ্যে চরম ফেতনার সময় কী করতে হবে তা সুস্পষ্টভাবে নসিহত করেছেন।
ফেতনা হচ্ছে মারাত্মক অপরাধ। কঠিন পরিস্থিতিতেও ফেতনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘বস্তুত ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯১)
মূলত হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হত্যার মাধ্যমে ফেতনার সূচনা হয়। কেয়ামত পর্যন্তই এ ফেতনা চলবে। যুদ্ধ কিংবা জটিল সমস্যার সময় কোনো বিষয়কে সমর্থন করা সম্পর্কে ফেতনা থেকে সতর্ক থাকতে কাউকে না বুঝে সমর্থন না করার ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। কেননা জটিল সমস্যা ঘটার সময় কোন বিষয়টি সঠিক আর কোনটি ঠিক নয়; তা বুঝা কষ্টকর।
চরম ফেতনার সময় মুমিনদের করণীয় সম্পর্কে হাদিসের সুস্পষ্ট ঘোষণা হলো-
রাসুলুল্লাহ সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অচিরেই বিভিন্ন রকম ফেতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফেতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি ফেতনার দিকে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হওয়া ব্যক্তির চেয়ে নিরাপদ ও উত্তম। আবার পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ ও উত্তম হবে।
ফেতনা শুরু হয়ে গেলে যার উট থাকবে; সে যেন উটের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার ছাগল থাকবে, সে যেন ছাগলের পালের রাখালি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার চাষাবাদের জমিন আছে, সে যেন চাষাবাদের কাজে ব্যস্ত থাকে।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যার কোনো কিছুই (উট, ছাগল, চাষাবাদের জমি) নেই; সে কী করবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘পাথর দিয়ে তার তলোয়ারকে ভোঁতা করে নিরস্ত্র হয়ে যাবে এবং ফেতনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করবে। অতপর তিনি আরও বললেন-
‘হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি আমার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি?
অতপর অন্য এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন- হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কেউ যদি আমাকে জোর করে কোনো দলের দিকে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে কারো তলোয়ার বা তীরের আঘাতে আমি নিহত হই; তবে আমার কী হবে?
উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সে তার পাপ এবং তোমার পাপের বোঝা নিয়ে জাহান্নামের অধিবাসী হবে।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজে ফেতনা থেকে মুক্ত থাকা। অন্য মুমিনকেও ফেতনা থেকে মুক্ত রাখা। ইসলামের বিধান সম্পর্কে অযথা মনগড়া তথ্য প্রচার না করা। অন্যকে ফেতনার কাজে সহযোগিতা না করা। আর এটাই হলো ঈমানের জন্য নিরাপদ কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে দুনিয়ার সব ফেতনা থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। অন্যকে ফেতনা থেকে হেফাজতে সহযোগিতা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস