সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গোনাহ মাফ হয় যে নামাজে
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। ফরজ নামাজ ছাড়াও রয়েছে নফল নামাজ। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, বরকত লাভ এবং গোনাহের কাফফারায় নামাজের ভূমিকা অপরিসীমস। হাদিসে কুদসিতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
‘আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার কাছাকাছি হয়। এক পর্যায়ে সে আমার প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়।’ (বুখারি)
ফরজ নামাজ ছাড়াও এমন একটি নফল নামাজ আছে; যে নামাজকে আল্লাহভিরুদের নামাজ বলা হয়। আর তাহলো- ‘আউয়াবিন’। এ নামাজটি পড়ার ব্যাপারে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। তবে অনেক মানুষ এটিকে মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পর পড়ে থাকেন।
‘আউয়াবিন’ ফার্সি শব্দ। এর অর্থ হলো- আল্লাহভিরু। অনেকে মাগরিবের পর থেকে ইশার আগ পর্যন্ত নামাজটি আদায় করে থাকেন। এ নামাজ সম্পর্কে হাদিসের কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলো-
- হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে (নিভৃতে) যে নামাজ পড়া হয় একে সালাতুল আউয়াবিন (আউয়াবিন নামাজ) বলে।’ (কিয়ামুল লাইল)
- মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে মুরসাল সূত্রে এসেছে- নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আউয়াবিন (আউয়াবিনের নামাজ) বলে।’ (জামে সাগির)
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আউয়াবিনের ওয়াক্ত ওই সময় থেকে শুরু হয়, যখন নামাজি মাগরিবের নামাজ পড়ে শেষ করে এবং এর ওয়াক্ত ইশার ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত থাকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)
এ নামাজের ফজিলত
নামাজ অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে সমুদ্রের ফেনা সমপরিমান গোনাহও মাফ হয়ে যায়। মাগরিব ও ইশা পরবর্তী এ নামাজের ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে এসেছে-
- হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাআত নফল নামাজ পড়বে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ)
- হজরত সালে রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার পিতা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাআত নামাজ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (নাইলুল আওতার)
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ (ইতহাফুস সাদাহ)
- অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘এ নামাজে গুরুত্বারোপকারী বান্দা আওয়াবিন তথা আল্লাহমুখী, আনুগত্যকারী ও নেককার বান্দাদের গণ্য হবে।’
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাআত নামাজ পড়বে তাকে আউয়াবিন তথা নেককার, আনুগত্যকারী বান্দাদের মধ্যে লেখা হবে এবং কুরআনের এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল; বনি ইসরাইল : আয়াত ২৫ । (বাহরুর রায়েক : ২/৫০)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত ফজিলতপূর্ণ এ নামাজ নিয়মিত আদায় করা। নিয়মিত এ নামাজ আদায়কারীর জন্য জান্নাতে ঘর তৈরির কথা এসেছে হাদিসে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাআত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর তৈরি করবেন (অর্থাৎ সে বেহেশতে যাবে)।’ (তিরমিজি)
মুমিন মুলমানের উচিত, মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পর দুই দুই রাকাআত করে তিন সালামে ৬ রাকাআত আউয়াবিনের নামাজ আদায় করা। এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আউয়াবিনের নামাজ পড়ার মাধ্যমে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ এবং বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর