জেরুজালেম নিয়ে যা বললেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি
বর্ণবাদ বিরোধী ও তরুণ প্রজন্মের অধিকার আন্দোলনের নেতা ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলা। তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি। জেরুজালেম ইস্যুতে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের এক ভার্চুয়াল অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সে অধিবেশনে তিনি জেরুজালেমের প্রকৃত মালিকানা ফিলিস্তিনিদের বলে উল্লেখ করেন। ফিলিস্তিনভিত্তিক গণমাধ্যমসহ অনেক গণমাধ্যমেই তার বক্তব্য তুলে ধরেন। খবর আনাদোলু এজেন্সি।
গত শনি ও রোববার দুইদিনব্যাপী মুক্তির আন্দোলনে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিলিস্তিন ও মুসলিম উম্মাহর পূন্য নগরী জেরুজালেম তথা আল কুদস-এর প্রতি বিশ্ব সংহতি বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ ভার্চুয়াল অধিবেশনের স্লোগান ছিল- ‘আল কুদসু আমানাতুন, ওয়াত তাতবিয়ু খিয়ানাতুন’ অর্থাৎ ‘জেরুজালেম একটি আমানত এবং নরমালাইজেশন একটি খেয়ানত’।
বিশ্বের বড় বড় ইসলামিক স্কলার, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের এ ভার্চুয়াল অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ‘ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলা’ও এ ভার্চুয়াল অধিবেশনে যোগদান করেন।
ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলা বলেন, ‘আমার দাদা নেলসন ম্যান্ডেলা রিক্তহস্তে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন যেভাবে শুরু করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরাও খালি হাতে ঠিক সেভাবে দখলদার ইসরায়েলিদের মোকাবেলা করছে। এই জেরুজালেম তথা আল কুদস ফিলিস্তিনের স্থায়ী রাজধানী। এ ক্ষেত্রে যারা ইসরাইলের সমর্থক অচিরেই তাদের সময় শেষ হয়ে আসছে। যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পতন হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এ নেতা আরও জানান, ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল প্রশ্নে আমাদের দেশের জনগণের সমর্থন ফিলিস্তিনিদের অনুকূলেই রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- জেরুজালেম তথা আল কুদস প্রকৃত অর্থে কখনোই অন্য কারো হবে না। ফিলিস্তিনিরাই জেরুজালেম তথা আল কুদস-এর মূল মালিক।
আফ্রিকার সবচেয়ে সঙ্কটময় মুহূর্তে ফিলিস্তিনি জনগণের অবস্থান যেমন আমাদের পক্ষে ছিল, তেমনি ইসরাইলের দখলনীতির মোকাবেলায় আমি আজ আবার ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। ফিলিস্তিনিরা বর্ণবাদ বন্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিটি ফোরামে শুরু থেকেই আমাদের পক্ষে আওয়াজ তুলেছে।
ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলা আরও বলেন, ‘আমরা আল কুদস (জেরুজালেম) নগরীকে ফিলিস্তিনের স্থায়ী রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করি এবং এর স্বীকৃতি দিই।’
জেরুজালেম ইস্যুতে তিনি সদ্যবিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের প্রসঙ্গে টেনে এনে বলেন, ‘ট্রাম্প আল কুদসকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার ঘোষণায় মনে হয়েছে যেন- তিনি নিজেই আল কুদস তথা জেরুজালেমের মালিক।
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যারাই জেরুজালেম ইস্যুতে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ইসরাইলের পক্ষ অবলম্বন করেছে, তারা এ পবিত্র ভূমির প্রতি ধৃষ্টতা ও মুর্খতা প্রদর্শন করেছে। কেননা এ পবিত্র ভূমি কোনো বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়।
বিশেষ করে যারা স্বাভাবিক সুসম্পর্ক স্থাপনের নামে ‘নরমালাইজেশন ডিড’-এর পক্ষ অবলম্বন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সামনে তাদের মাথা নত করেছে, শিগগির যুক্তরাষ্ট্রের মতো তাদের পতনও অবশম্ভাবী। তাদের সময়ও শেষ হয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেন নেলসন ম্যান্ডেলার এ নাতি।
বিশ্ববাসীর প্রতি ম্যান্ডেলা ম্যান্ডেলার আহ্বান-
মানবতার পক্ষ হয়ে আমি পৃথিবীর সব স্বাধীন মানুষ ও সরকারকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের আহবান জানাচ্ছি। যেন ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ফিরে পায়।
তিনি বলেন, ‘দখলদার ইসরাইল যতক্ষণ পর্যন্ত আল-কুদসসহ ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চল ত্যাগ না করবে ততক্ষণ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। কমবে না অস্থিতিশীলতা। ইসরাইল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড ত্যাগ করে ফিরে যাবে। ফিলিস্তিনি বন্দিদেরমুক্তি দেবে। ফিলিস্তিনের শান্তির জন্য দখলদারিত্বের কারণে ইসরাইল ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ আগের সব ইসরাইলি নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এমএমএস/পিআর