দুনিয়া ভর্তি স্বর্ণ দিয়েও যে তওবা কবুল হবে না
কুরআনুল কারিম মানুষের জন্য জীবন পরিচালনার গাইড। মানুষই এ কুরআনের আলোচ্য বিষয়। অথচ মানুষ কুরআনের নসিহত জানতে চায় না। আবার জানলেও মানতে চায় না। কুরআন অনুযায়ী আমল করে না। সে কারণেই মহান আল্লাহ কুরআন অস্বীকারকারীদের তওবাহ দুনিয়াভর্তি স্বর্ণের বিনিময়েও ক্ষমা করবেন না।
কোনো মানুষ যদি ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করে। তার পরিণতি কত কঠিন হবে তা তুলে ধরা হয়েছে কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে। ইসলাম ত্যাগ করার অপরাধ তওবায় ক্ষমা হবে না এমনকি যদি দুনিয়াভর্তি স্বর্ণও বিনিময় হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তাতেও ইসলাম অস্বীকারকারী তাওবা কবুল হবে না। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَمَاتُواْ وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ الأرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَى بِهِ أُوْلَـئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
‘যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব! পক্ষান্তরে তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯১)
দুনিয়া ভর্তি স্বর্ণের বিনিময়ে তওবা কবুল করা হবে না মর্মে আয়াত নাজিলের আগে মহান আল্লাহ মানুষকে সতর্ক ও নসিহত করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। তাহলো-
- وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৫)
- كَيْفَ يَهْدِي اللّهُ قَوْمًا كَفَرُواْ بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُواْ أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং রাসুলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের কাছে প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৬)
- أُوْلَـئِكَ جَزَآؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللّهِ وَالْمَلآئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ خَالِدِينَ فِيهَا لاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلاَ هُمْ يُنظَرُونَ
‘এমন (চরিত্রের) লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সব মানুষের অভিশাপ। সর্বক্ষণই তারা তাতে থাকবে। তাদের আজাব হালকাও হবে না এবং তার এত অবকাশও পাবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৭-৮৮)
- إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ مِن بَعْدِ ذَلِكَ وَأَصْلَحُواْ فَإِنَّ الله غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘কিন্তু যারা অতঃপর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৮৯)
- إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُواْ كُفْرًا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الضَّآلُّونَ
‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবাহ কবুল করা হবে না। আর তারা হলো পথভ্রষ্ট।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯০)
কুরআনুল কারিমে এসব ব্যক্তির ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তারা যদি শুধু তাওবাহ নয়, পুরো দুনিয়ার ভর্তি স্বর্ণের বিনিময়েও তাওবাহ করে, সাহায্য কামনা করে, তাদের তাওবাহ কবুল করা হবে না এমনকি তাদের সাহায্যও করা হবে না।
সুতরাং এত সুন্দর সুন্দর উপদেশ শোনার পর কি করে ইসলাম থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় মানুষ। যারাই ইসলাম গ্রহণ করার পর পুনরায় আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবি-রাসুলদের অস্বীকার করে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। না তাদের তাওবা কবুল করা হবে আর না কোনো দামি বিনিময় গ্রহণ করা হবে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ইসলাম গ্রহণ করার পর ইসলামের ওপর অটল-অবিচল থাকা। ইসলামের বিধি-বিধান নিজেদের জীবন যথাযথ বাস্তবায়ন করা। তবেই নিশ্চিত হবে পরকালের সফলতা। আর বেশি বেশি এ দোয়া করা-
اَللَّهُمَّ اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ - غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বিম। সিরাত্বাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম। গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম, ওয়া লাদদ্বাল্লিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের সঠিক পথ দান করুন। যে পথের অনুসারীদের আপনি নেয়ামত দান করেন। অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথে আমাদের দূরে রাখুন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের বিধান থেকে নিজেদের সরে যাওয়া বা অস্বীকার করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআনের নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস