ফ্রান্সের পণ্য বর্জনে বিশ্ববিখ্যাত আলেমরা যা বললেন
কবির কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়- ‘রাসুল আমার ভালোবাসা, রাসুল আমার আলো আশা, রাসুল আমার প্রেম বিরহের মূল আলোচনা, রাসুল আমার কাজে-কর্মে অনুপ্রেরণা’ সত্যিই সূচনাকাল থেকে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন, ভালোবাসার পাত্র ছিলেন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বিশ্বনবির প্রতি মুসলিম উম্মাহর আজন্ম ভালোবাসা দেখেই ঈর্ষায় জ্বলে-পুড়ে মরে কাফির অবিশ্বাসী সম্প্রদায়। যার প্রকাশ ঘটে বিপথঘামী কিছু অমুসলিমদের কার্যকলাপে।
সম্প্রতি ফ্রান্সের ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোয় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র ছাপানো ও দেশটির প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বাক-স্বাধীনতার নামে তা সমর্থন এবং প্রটোকল দেয়ায়ও হিংসার প্রমাণ মেলে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র প্রচারের ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধতা না করে বরং তা সমর্থন করায় বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এ প্রেক্ষিতে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলাররা ফ্রান্সের পণ্য বয়কটে তাদের মতামত তুলে ধরেন। তাহলো-
> ইউসুফ আল-কারযাভি
أمة الإسلام لا يمكن أن تفرّط في حق نبيها.. إن محمدًا صلى الله عليه وسلم ليس هينًا علينا.. كيف أشتري بضاعة قوم يهينون سيد الخلق ورسول الحق؟! pic.twitter.com/2FPMQYMGnJ
— يوسف القرضاوي (@alqaradawy) October 26, 2020
আরববিশ্বের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা ইউসুফ কারযাভি লিখেছেন, মুসলিম উম্মাহর পক্ষে এটি কখনো সম্ভব নয় তারা তাদের নবিজীর হক আদায়ে গড়িমসি করবে। হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আমাদের সবকিছুর চেয়ে প্রিয়। আমি কিভাবে এমন কোনো জাতির পণ্য কিনবো; যারা আমার নবিজীকে অপমান করে? কিভাবে আমরা আমাদের সম্পদ তাদেরকে দেই? কিভাবে আমাদের সম্পদে তাদেরকে লাভবান হতে দেই? ‘না’, তা কখনো হতে পারে না। আমাদের সে সব পণ্যের বিকল্প ব্যবহার করতে হবে। তাদের পণ্য ব্যবহারে মুখাপেক্ষী হওয়া যাবে না।
> মুফতি তকি ওসমানি
سروردوجہاں صلی اللہ علیہ وسلم کے خلاف #فرانس اور اسکے صدر کی کمینگی کے بعد کیا ہم اب بھی فرانس کی مصنوعات کی خریدو فروخت استعمال اور درآمد جاری رکھینگے ؟ ان دولت کے پجاریوں کو سبق اسی وقت ملیگا جب عالم اسلام انکی مصنوعات کا بائیکاٹ کریگا یہ کم سے کم ردعمل ہے جو ہم دے سکتے ہیں
— Muhammad Taqi Usmani (@muftitaqiusmani) October 26, 2020
বিশ্ববিখ্যাত আলেম মুফতি তাকি উসমানি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন- ‘দুই জাহানের বাদশাহ হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তারপরও কি কোনো মুসলমানের পক্ষে এটা সম্ভব যে, দেশটির (ফ্রান্সের) পণ্য কেনাবেচা কিংবা আমদানি রফতানি করবে। এই সম্পদ পূজারিদের তখনই উচিত শিক্ষা হবে যখন ইসলামি বিশ্ব তাদের পণ্য বয়কট করবে। এটা হল সর্বনিম্ম একটি প্রতিক্রিয়া যা আমরা এই মুহূর্তে দেখাতে পারি।
> ড. জাকির নায়েক
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ডা. জাকির নায়েক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেইজে ফ্রান্সের সকল সেবা ও পণ্য বয়কট করতে সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘হজরত মুহাম্মাদু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননার কারণে আমাদের সবার উচিৎ ফ্রান্সের পণ্য ও সেবা বর্জন করা। তিনি তার পোস্টে ফ্রান্সের বিভিন্ন পণ্য ও সেবাদানকারী কোম্পানির লোগো এবং তালিকা প্রকাশ করেন।
> শায়খুল হাদিস শরিফ হাতেম
لقد نصبت الحكومةُ الفرنسية محاكمَ التفتيش ضد المسلمين: إما أن يقبلوا بشتم نبيهم صلى الله عليه وسلم وإلا فهم عندها إرهابيون!
— أ.د/الشريف حاتم العوني (@Al3uny) October 24, 2020
لقد عادت تلك الحكومة للقرون الوسطى ، لكن من بوابة كنيسة العلمانية وباباها المسمى بماكرون الأول .
ولربما غدا يدعو لحروب مقدسة ضدهم
#مقاطعة_البضائع_الفرنسية
আরব বিশ্বের প্রথিতযশা আরেক আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা শরিফ হাতেম লিখেছেন, ফ্রান্স সরকার মুসলমানদের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে। তাদের দেয়া চ্যালেঞ্জ হলো- হয় তোমরা তোমাদের নবিজীকে দেয়া গালি মেনে নাও আর নয়তো তুমি সন্ত্রাসী! সত্যি কথা বলতে কি, ফ্রান্স সরকার তাদের সেই মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছে। তবে এবার খৃস্টধর্মের গীর্জা দিয়ে নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা নামক ধর্মের গীর্জা দিয়ে, যার বর্তমান পাদ্রী ম্যাক্রো।
> তারিক জামিল
বিশ্ববিখ্যাত দাঈ ও আলেম মাওলানা তারিক জামিল তার টুইট বার্তায় লিখেছেন- ‘রাসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে বেয়াদবি করায় সব মুসলিমের হৃদয় ব্যথিত।’
তিনি মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান জানান যে, ‘আমি প্রত্যেক মুসলিম ভাইকেই বলব, ফ্রান্সের পণ্য বর্জন করতে বয়কট আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে এই বস্তুপূজারিদের ভোগবিলাসে আপনি একটা আঘাত হলেও করতে পারেন। নিজের সাধ্যের ভিতরে প্রত্যেক মুলমান ফ্রান্সের পণ্য বয়কটকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নিন।
এ ছাড়াও ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ইরান, পাকিস্তান, তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও ইসলামিক স্কললারা। তারা ফ্রান্সের নিন্দা ও সমালোচনা করে তাদের সেবা ও পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ফ্রান্স থেকে পাকিস্তান তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের সংসদে প্রস্তাবনা পাসে করেছেন।
আরব বিশ্বের দেশ কুয়েত ও কাতারের অনেক চেইন শপ থেকে ফ্রান্সের পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফ্রান্সের লেবেলযুক্ত পণ্য সামগ্রী কেনা বেচা থেকে বিতর থাকার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
এমএমএস/পিআর