ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

বিশ্বনবি ছিলেন দয়ার মহাসাগর

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১১:১১ এএম, ২০ অক্টোবর ২০২০

আলহামদুলিল্লাহ! পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস অতিবাহিত করছি আমরা। এ পবিত্র মাসেই সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)

শান্তি ও রহমতের বার্তা নিয়েই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পৃথিবীতে এসেছেন। তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য কেবল রহমত এবং শান্তির কারণই ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন সকল গুণে পরিপূর্ণ। এমন কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট নেই; যা তার মাঝে ছিল না। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

لَوْ أَنزَلْنَا هَذَا الْقُرْآنَ عَلَى جَبَلٍ لَّرَأَيْتَهُ خَاشِعًا مُّتَصَدِّعًا مِّنْ خَشْيَةِ اللَّهِ وَتِلْكَ الْأَمْثَالُ نَضْرِبُهَا لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

‘যদি আমি এ কুরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি অবশ্যই দেখতে যে, আল্লাহর ভয়ে পাহাড় বিনীত হয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা হাশর : আয়াত ২১)

এ আয়াতে সেই নিগুঢ় তত্বই বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সত্তা-ই ছিল সেই সত্তা, যিনি বিনয় এবং নম্রতা অবলম্বনের ক্ষেত্রে সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী ছিলেন। একারণেই পবিত্র কুরআনের মত মহা মর্যাদাপূর্ণ বাণী তাঁর পবিত্র হৃদয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল।

আর বিনয়, নম্রতা ও কোমলতায় উন্নতি করে তিনি আপন সত্তাকে আল্লাহর রাহে এত বেশি বিলীন করে দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর নৈকট্যের ক্ষেত্রে তিনি সেই মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন; যেখানে পৌঁছতে পারেনি কোনো ফেরেশতা।

মানুষের জন্য এত দরদ, এত প্রেম, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা দুনিয়ার অন্য কারও মাঝেই পাওয়া যায়নি। কেননা তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের এবং সমগ্র জাতির জন্য হেদায়েতের মানদণ্ড। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ

‘অবশ্যই তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১২৮)

বিশ্ব মানবতার প্রতি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে ভালোবাসা ছিল, তা তার জীবনের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলেই বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তায়েফ সফরের ঘটনা সবর্জন বিদিত ও পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনার সাক্ষী।

মক্কায় আল্লাহ তাআলার তাওহিদ তথা একত্ববাদের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে সাড়া না পেয়ে তিনি মক্কার পাশ্ববর্তী তায়েফ নগরীতে গমন করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাবলেন, তায়েফবাসী হয়তো বা তার কথা শুনবে। তাকে মেনে নেবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার তাওহিদের বাণী তায়েববাসীরা শোনাতো দূরের কথা, বরং তিনি সেখানে চরম অমানবিক জুলুম-অত্যাচারের শিকার হলেন।

তায়েফের লোকেরা একশ্রেণির বখাটেদের বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে নির্যাতন ও পাথর নিক্ষেপের জন্য লেলিয়ে দেয়। তারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্যোতির্ময় পবিত্র দেহকে পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত করে দেয়।

আত্মরক্ষার্থে উম্মতের দরদীবিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত তায়েফ ত্যাগ করেন। তিনি যখন তায়েফের উপকণ্ঠে পৌঁছেন তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ফেরেশতা এসে বললেন-

‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যদি চান, তাহলে এই জালিম অধিবাসীর শহরকে আল্লাহ তাদের পাপের দরুন ধ্বংস করে দেবেন।’ ফেরেশতার কথার জবাবে উম্মতের দরদীনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার দরবারে দুই হাত তুলে এভাবে দোয়া করলেন-

হে আল্লাহ! তারা অজ্ঞ, তাই তারা আমার ওপর জুলুম করেছে। তুমি এদেরকে ক্ষমা কর এবং হেদায়াত দাও।’

কতই না মহান শিক্ষার সূচনা করলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হায় আফসোস! মুসলিম বিশ্ব যদি এই দরদীনবির কর্মময় জীবন থেকে সামান্যও শিক্ষা গ্রহণ করতো তাহলেই বিশ্বের আনাচে-কানাচে কোনো অরাজকতা থাকতো না।

নবুওয়ত লাভের পর মক্কার জীবনে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রিয় সাহাবাগণ যে পৈশাচিক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন; তার ইতিহাস আমরা সবাই জানি।

আবু জাহল ও আবু লাহাবের দল তার ওপর জঘন্য শারিরীক নির্যাতন চালিয়েছিল। সে সময় বহু নিরপরাধ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। অবশেষে জালিমদের জুলুম-নির্যাতনে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় চলে গেলেন।

যেদিন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহা বিজয়ী বেশে পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশ করেন; সেদিন মক্কাবাসীরা ভেবে ছিল- আজ নিশ্চয়ই তাদের নিস্তার নেই। তারা ভয়ানক শাস্তির প্রতীক্ষা করছিল। কিন্তু রাহমাতুল্লিল আলামিন, মানব দরদী রাসুল সবাইকে অবাক করে দিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন-

‘আজ যারা বিলালের পতাকার নিচে এসে দাড়াবে, তাদের সকলকে ক্ষমা করা হবে।‘ সুবহানাল্লাহ!

মহান আল্লাহ তাআলার রহিমিয়াত ও রহমানিয়াতের গুণে পরিপূর্ণরূপে গুণান্বিত না হলে এমন সাধারণ-ক্ষমা করা কি সম্ভব? শুধু কি তাই! যেমন ছিলেন বিশ্বনবি-

- বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই মানব-দরদী রাসুল; যিনি বিচলিত চিত্তে এক ইহুদি শিশুকে তার মৃত্যুশয্যায় দেখতে যান এবং দরদ ভরা হৃদয়ে তাকে তাওহিদের বাণী শুনান।

- তিনি সেই রাহমাতুল্লিল আলামিন; যিনি মানবতার সম্মানে এক ইহুদীর লাশ দেখে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান।

- তিনিই সেই ক্ষমাশীল রাসুল; যার মহান ক্ষমায় তারই সামনে নিবেদিত হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় হাজার হাজার বিধর্মীরা আশ্রয় গ্রহণ করে।

- তিনি সেই পরম স্নেহময় রাসুল; যার অকৃত্রিম স্নেহের স্পর্শে পালিত পুত্র জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় পিতামাতার কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায় এবং স্নেহময় রাসুলের কাছেই কাটিয়ে দেন সারাটি জীবন।

- তিনিই তো সেই বাদশাহ রাসুল; যিনি তার সব কিছু দুই হাতে বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় তার পরম স্নেহময় প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তন করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেম-ভালোবাসা, দয়া এবং তার পবিত্রকরণ শক্তির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শত্রু-মিত্র সব মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন।

- শ্রেষ্ঠনবির উম্মত হিসেবে নিজেদের মাঝে তার আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

- মানুষকে ভালোবাসতে হবে।

- মানুষের প্রতি সর্বোচ্চ দয়া দেখাতে হবে।

- সব ধর্মের অনুসারীদের প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।

- অন্যের বিপদ-আপদে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।

- ক্ষমার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

আমরা মুখে মুখে নিজেদের শ্রেষ্ঠনবির শ্রেষ্ঠ উম্মত দাবি করি ঠিকই কিন্তু বাস্তবে কাজের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের কোনো কাজই করি না। যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদর্শের বিপরীত। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ নিজেদের জীবনে ধারণ করা। কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। যাতে নিহিত রয়েছে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি।

আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে রবিউল আউয়ালের এ পবিত্র মাসের তাঁরই আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবির আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে চলার তাওফিক করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন