অমুসলিমদের সঙ্গে কি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করা যাবে?
যে জিনিস আহার করলে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়, তাকে মদ বা মাদকদ্রব্য বলে। কুরআনের পরিভাষায় ‘খামর-خمر’ দ্বারা মদ ব মাদকজাতীয় দ্রব্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইসলামে মাদক গ্রহণ বা ব্যবসা করা হারাম। কিন্তু অমুসলিমদের সঙ্গে কি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করা যাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কি?
ইসলামে মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা হারাম। মাদকদ্রব্যের পরিমাণ কম হোক আর বেশি হোক, উভয় অবস্থাই তা হরাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-
হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া কিছুই নয়। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক; যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনও কি নিবৃত্ত হবে না?' (সুরা মায়েদা : ৯০-৯১)
মদ গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে সন্দেহের নিরসন করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিস পাকে বর্ণনা করেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে জিনিসের অধিক পরিমাণ (গ্রহণে) নেশাগ্রস্ত করে, তার কম পরিমাণও হারাম।’ (তিরমিজি)
ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো- ‘যে দ্রব্য মানুষের বিবেক-বুদ্ধি আচ্ছন্ন করে, অনুভূতি ও বোধশক্তি হরণ করে বা প্রভাবিত করে, তা নিষিদ্ধ। যেসব দ্রব্য মদের মতোই মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধিকে হরণ করে, চেতনাকে বিলোপ করে, শরিয়তের দৃষ্টিতে তা হারাম বা নিষিদ্ধ। সে আলোকে গাঁজা, আফিম, কোকেন প্রভৃতি এ পর্যায়ের জিনিস। এসব বস্তু মানুষের বিবেক-বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দেয়। এমনকি এতে মানুষ নিজের সত্তা, নিজের দ্বীন, ধর্ম ও দুনিয়া সব কিছুই ভুলে গিয়ে নিছক কল্পনার জগতে বিচরণ করতে শুরু করে।’ (ইসলামে হালাল-হারামের বিধান)
মাদকদ্রব্যের ব্যবসা
মাদকদ্রব্য জাতীয় জিনিস নিজে গ্রহণ না করে এর ব্যবসা করায়ও রয়েছে ইসলামের দিকনির্দেশনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদের ব্যবসাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। এমনকি অমুসলিমদের সঙ্গেও এ ব্যবসা করা জায়েজ বা বৈধ নয়। বরং মদ ও মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, রফতানি সব কিছুই নিষিদ্ধ। এমনকি এসব কারখানায় চাকরি করাও সমানভাবে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে রয়েছে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনা। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদের ব্যাপারে ১০ ব্যক্তির ওপর অভিশাপ করেছেন। তারা হলো-
- মদ উৎপাদনকারী; যে মদ উৎপাদন করায়।
- মদ্যপায়ী, মদ পানকারী।
- মদ বহনকারী।
- যার কাছে মদ বহন করে নেয়া হয়।
- পরিবেশনকারী, যে মদ পান করায়।
- বিক্রয়কারী
- মূল্য গ্রহণকারী
- ভক্ষণকারী।
- ক্রয়কারী এবং
- যার জন্য তা ক্রয় করা হয়। এ সবারই ওপর অভিশাপ।’
মদের ব্যবসা করা নিষিদ্ধ বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। বরং মদ তৈরির উদ্দেশ্যে যদি কেউ আঙুর বা উপাদান কেনে তা-ও বিক্রি করা হারাম বা নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আঙুরের ফসল কেটে তা জমা করে রাখে কোনো ইয়াহুদি, খ্রিষ্টান বা এমন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে; যে তা থেকে মদ তৈরি করবে, তাহলে সে জেনেশুনেই আগুনে ঝাপ দিল।’
হাদিসের উল্লেখিত বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, মদ পান করাই হারাম বা নিষিদ্ধ নয়; বরং মদের ব্যবসা করাসহ অমুসলিমদের কাছে মদ তৈরির যে কোনো উপাদান বিক্রয় করাও হারাম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেশা সৃষ্টিকারী জিনিসের ব্যবহার থেকে হেফাজত করুন। মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ ব্যক্তি থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দিন। অমুসলিমদের সঙ্গে এসব বেচাকেনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর