ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুসলিম উম্মাহর অনুপ্রেরণা হজরত সালমান ফারসি

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ০১ অক্টোবর ২০২০

একজন মানুষ ১৯ বার দাস হিসেবে বিক্রি হয়েছেন! অবশেষে ইসলাম গ্রহণের পর বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক কঠিন চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করেন। তিনি হলেন বিখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু। মুসলিম উম্মাহর জন্য যিনি এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

পারস্যের অধিবাসী বর্তমান ইরানের ইসপাহানে জন্ম গ্রহণ করেন হজরত সালামন ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি একবার, দুই বার নয় বরং ১৯ বার দাস হিসেবে বিক্রি হয়েছেন। দাসত্বের এ জীবনে তিনি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট মাড়িয়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাৎ লাভ করে ধন্য হন এবং পবিত্র ধর্ম ইসলামের ছায়া তলে আশ্রয় নেন।

ইসলাম গ্রহণ করার পর এক কঠিন শর্তের মধ্য দিয়ে তিনি মুক্তি লাভ করেন। যে শর্ত পালনে স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও কষ্ট করতে হয়েছে। কি ছিল সেই কঠিন শর্ত?

হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ইয়াহুদির দাস ছিলেন। ২টি বড় শর্ত পূরণ করেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মুক্ত করেন। শর্ত দুটি ছিল-
> ৩০০ খেজুর গাছ রোপন এবং দ্রুত তা থেকে শতভাগ ফলন নিশ্চিত।
> ৪০ উকিয়া স্বর্ণ প্রদান।

স্বাভাবিকভাবে যে কোনো ব্যক্তির জন্য এ শর্ত সহজ ছিল না। ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দেওয়া ছিল তুলনামূলক সহজ শর্ত। কিন্তু ৩০০ খেজুর গাছ রোপন করে তাতে দ্রুত শতভাগ ফলন নিশ্চিত করা কারো হাতে নির্ভর ছিল না। এ শর্ত ছিল খুবই কঠিন।

মানবদরদি ইসলামের নবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নির্যাতিত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু মুক্তির জন্য এ কঠিন শর্ত গ্রহণ করেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকি ৪০ উকিয়া স্বর্ণ দিয়ে হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মুক্ত করেন।

অল্প দিনের মধ্যে খেজুর গাছের বাগান তৈরি হওয়া এবং তাতে ফলন আসা ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেজা। এর চেয়ে বড় মুজেজা ছিল একটি গাছে খেজুর না হওয়া। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এত দিরহামের বিনিময়ে এবং শর্তে ক্রয় করেন যে-

‘সালমান তার ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবেন এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত (সে বাগানের) তত্ত্বাবধান করতে থাকবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম একটি চারা ছাড়া তাঁর নিজ হাতে সবগুলো চারা রোপন করেছিলেন। সে বছরই সব গাছে খেজুর আসল। কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি আমি রোপন করেছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই চারাটি ওঠিয়ে আবার রোপন করলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মুসনাদে বাজজার)

ফলে হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়াহুদি মুনিবের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেলেন। দাস থেকে মুক্ত হওয়ার পর হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংস্পর্শ ত্যাগ করেননি এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

যুদ্ধের ময়দানে হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রতিজ্ঞা ছিল এমন-
‘হে আল্লাহ! এই সালমান বেঁচে থাকবে আর তোমার দ্বীন কাফেরদের হাতে লাঞ্ছিত হবে- তা কোনোদিন হতে দেব না।’

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহু সংখ্যক সাহাবার মধ্যে একটি আয়াত তেলাওয়াত করেন-
‘শুন, তোমরাই তো তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহবান জানানো হচ্ছে, অতপর তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে। যারা কৃপণতা করছে, তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্থ। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না।’ (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ৩৮)

উপস্থিত আরব সাহাবারা এক বাক্যে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমরা আপনার আনীত দ্বীনকে অমান্য করলে আমাদের পরিবর্তে বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো কওম বা জাতি কি আছে? যারা ইসলাম ধর্মকে মান্য করার ব্যাপারে আমাদের চেয়েও ভালো হবে। যাদের বর্ণনা আল্লাহ তাআলা কুরআনে তুলে ধরেছেন।

তখন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বলেন, তোমাদের মধ্যে সালমান ফারসি। তিনি ও তার জাতি। তারা এমনই লৌহমানব, আল্লাহর দ্বীন যদি দুনিয়া থেকে আসমানের সুরাইয়া তারকার কাছেও চলে যায়, তবে সালমান ও তার লোকেরা তা পাবে।

উপস্থিত সাহাবাগণ তখন জানতে চান, হে আল্লাহর রাসুল! তখন আমাদের বংশধররা কী করবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের বংশধররা তখন আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকবে।’

বাস্তবের নমুনাও তাই। একদিন যে আরব জাতি খেজুর পাতার চাটাইয়ে বসে তারা যা অর্জন করেছিলেন, আজ সোনার গালিচায় বসে তারা সে অর্জন হারিয়ে ফেলেছে। সম্পদের মোহ ও বিলাসিতায় তারা আজ চেতনাহীন হয়ে পড়েছে।

বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশে আজ মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। সহায়-সম্বল ও আশ্রয়হীন। পথে প্রান্তরে উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন যাপন করছে। নির্যাতিত দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়েছে মুসলমান। কারণ তারা নিজেদের পরিচিতি হারিয়ে ফেলেছে। নিজেদের অবস্থান থেকে আজ অনেক দূরে।

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুকেই মুক্ত করেননি বরং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি বহু ক্রীতদাসকে অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে মুক্তি দিয়েছেন।

দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত সাহাবিরা ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে উৎসর্গ করেছেন নিজেদের জীবন। এ মুক্ত জীবন দিয়ে ইসলামের সুমহান মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে লড়াই করেছেন আমরণ। যা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিজয় লাভের পথ দেখিয়েছে। আর এসবই মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণা।

মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজন ও করণীয়-
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো মুসলিম উম্মাহর উচিত ইসলামের আদর্শকে গ্রহণ করা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের সুমহান আদর্শকে ধারণ করা। তবেই সম্ভব ইসলামের বিজয়।

হে আল্লাহ! মুমিন মুসলমানের হৃদয়কে সুদৃঢ় ঈমানের উপর অটল ও অবিচল করে দিন। ইসলামকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

আরও পড়ুন