ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

বিপদে যেসব দোয়া করতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দোয়াই ইবাদত। মানুষ বিপদ ও হতাশায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে থাকেন। বিপদ-হতাশা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এমনকি দোয়া? যা করতে নিষেধ করেছেন বিশ্বনবি!

হ্যাঁ, বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে দুটি দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। একটি হলো মৃত্যু কামনা করে দোয়া। দ্বিতীয় হলো শাস্তি কামনা করে দোয়া। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত।

-দুনিয়াতে মৃত্যু কামনা না করা
এমন কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যে সময় চরম বিপদ-মুসিবত হলেও সে বিষয়গুলো কামনা করে দোয়া করা যাবে না। আর তাহলো- দুনিয়াতে মৃত্যু কিংবা শাস্তি কামনা করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক বর্ণনায় তা নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

- হজরত হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে যেন মৃত্যুর জন্য দোয়া না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণেই বাড়ানো হয়।’ (মুসলিম)

- হজরত কায়স ইবনু আবু হাজিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমরা খাব্বাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলাম। তিনি তার উদরে সাতবার লোহা গরম করে সেক দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বললেন, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মৃত্যু কামনা করে দোয়া করতে বারণ না করতেন তাহলে অবশ্যই আমি মৃত্যুর জন্য দোয়া করতাম। (মুসলিম)

- হজরত নাজর ইবনু আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (হজরত) আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তখন জীবিত ছিলেন। তিনি (নাজর) বলেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি না বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কখনো মৃত্যুর আশা করবে না’। তাহলে অবশ্যই আমি মৃত্যু কামনা করতাম।’ (মুসলিম)

-একান্ত মৃত্যু কামনায় কল্যাণের এ দোয়া পড়া
বিপদে বা কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করা ঠিক নয়। একান্তই যদি মৃত্যু কামনা করতে হয়, তবে সে পদ্ধতিও হাদিস পাকে তুলে ধরা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বিপদে পড়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। তবে (একান্তই যদি) মৃত্যু তার কামনা হয়, তাহলে সে যেন (এভাবে) বলে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহয়িনি মা কানাতিল হায়াতু খাইরান লি ওয়া তাওয়াফফানি ইজা কানাতিল ওয়াফাতু খাইরান লি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত আমার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়, তবে আমাকে মৃত্যু দিয়ে দিন।’ (মুসলিম)

-দুনিয়াতে শাস্তি কামনা না করা
এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় শাস্তি কামনা করার ব্যাপারেও নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন মুসলিম রোগীর সেবা করতে গেলেন। সে (অসুখে কাতর হয়ে) অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এমনকি সে পাখির ছানার মতো হয়ে গেল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, তুমি কি কোনো বিষয় প্রার্থনা করছিলে অথবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু চেয়েছিলে?

সে বলল, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম- হে আল্লাহ! আপনি পরকালে আমাকে যে সাজা দেবেন তা এ দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন সামর্থ্য নেই যে, তা বহন করবে? অথবা তুমি তা সহ্য করতে পরবে না।
তুমি এমনটি বললে না কেন?-
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান নার।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দাও দুনিয়াতে এবং কল্যাণ দান করো পরকালেও। আর জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন। (মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কখনোই বিপদ কিংবা হতাশায় আল্লাহর কাছে মৃত্যু কামনা না করা। একান্তই যদি মৃত্যু কামনা করতে হয় তবে হাদিসে উল্লেখিত নিয়মে তা কামনা করা। আর পরকালের শান্তি দুনিয়ায় কোনোভাবেই কামনা না করা। বরং পরকালের জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তিতে হাদিসে সেখানো দ্বিতীয় দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন