যে আমলের কথা বলে কুরআন
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মানুষের করণীয় ও প্রাপ্তি সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানদার অবস্থায় ভালো কাজ করবে পুরুষ কিংবা নারী হোক, তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণও বিনষ্ট হবে না। যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের মাথা নত করে, ভালো কাজে নিয়োজিত থাকে আর ইবরাহিমের জীবন-ব্যবস্থা অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তার চেয়ে উত্তম জীবন ব্যবস্থা কার হতে পারে? আল্লাহ তাআলা ইবরাহিমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১২৪-১২৫)
কুরআনুল কারিমে এ আয়াত দুটিতে বান্দার করণীয় কী হবে, সে সম্পর্কে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। বান্দা যদি আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজেদের মতের চেয়ে আল্লাহর বিধানকে প্রাধান্য দেয় এবং মেনে নেয়। সে হবে মহান আল্লাহর বন্ধু। যে আদর্শ মেনে বন্ধু হয়েছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আর তাতেই আমলকারী নারী-পুরুষের জন্য জান্নাত নির্ধারিত। ভালো কাজের প্রাপ্য লাভে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না বলেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ঈমানদার অবস্থায় মানুষের যে কোনো ভালো কাজই এ শর্তের অনুকূলে গন্য হবে। মানুষের এ ভালো কাজ হতে পারে আল্লাহর জন্য, হতে পারে মানুষের জন্য, ভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখির জন্য, হতে পারে দেশের জন্য কিংবা সমাজের জন্য। এ সব কাজই ঈমানের অপরিহার্য অংশ। যারা এসব ক্ষেত্রে নিজেদের ভালো কাজের সঙ্গে নিয়োজিত রাখবে, তাদের জন্য প্রস্তুত থাকবে জান্নাত।
ঈমানদার ব্যক্তি মহান রবের উদ্দেশ্যে সেজদা, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত এবং কুরআনের প্রচার-প্রসার ইত্যাদি কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। আবার মানুষের কল্যাণে দান-সাদকা, পরোপকারসহ দিকনির্দেশনামূলক বিষয়ে উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে নিজেকে আমলকারী হিসেবে নিয়োজিত করতে পারেন।
সমাজ কিংবা দেশের প্রয়োজনে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, নানান প্রজাতির গাছ রোপন এবং দুঃস্থ-অসহায় লোকের সেবা ও সহযোগিতাও হতে পারে উত্তম আমলে করার মাধ্যম। আর তাতে মিলবে জান্নাত।
মনে রাখতে হবে
মুমিন বান্দার প্রতিটি কাজ যেন এমন হয় যে, আমলনামায় ভালো কাজ ছাড়া মন্দ কাজের স্থান না হয়। তাই শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেথে কল্যাণমূলক সব কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখে ভালো কাজের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা। আর তাতেই মিলবে উত্তম প্রাপ্তি ও জান্নাত। এ আমলের কথাই মহান আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা করেছেন।
এক মুমিন আরেক মুমিনের প্রতি দায়িত্ব পালনে থাকবে সচেতন। মুমিনের কল্যাণের কথা ভেবেই মহান আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন-
‘(কোনো কারণে) যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দাও আর ইনছাফ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ৯)
সমাজ ও দেশের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হয়ে ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার ঘোষণাও এসেছে কুরআনে। কোনো অবস্থাতেই যেন নিজের আমলনামায় মন্দ কাজ স্থান না পায়। তাই সমাজের সর্ব মহলে সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-
‘ভালো কাজ ও আল্লাহকে ভয় করার কাজে একে অন্যের সহযোগী হওয়া; অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অন্যের সহায়তা করা থেকে বিরত থাকা। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)
সুতরাং ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের সার্বিক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের নিয়োজিত রাখা যেমন জরুরি। তেমনি এসব কাজে নিয়োজিত থেকে নিজেদের আমলনামাকে ভালো কাজের মাধ্যমে সাজানোও ঈমানের একান্ত দাবি। মন্দ কাজে যেন আমলনামা নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা অতিব জরুরি।
যদি ভালো কাজে আমলনামা সাজানোর পাশাপাশি মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়, তবেই কুরআনের ঘোষণা হবে বান্দার জন্য যথার্থ। আল্লাহ তাআলা সে আমলের কথাগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-
- ‘আর যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দ কাজের বিপরীতে ভালো কাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের ঘর।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২২)
- আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ভালো কাজ করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজগুলো মুছে দেব এবং তাদেরকে (ভালো) কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৭)
- ‘আর যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মারহর সবাইকে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী ভালো কাজের আমলকারী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস