কেউ সালাম দিলে নীরবে উত্তর দেয়া যাবে কি?
ভাব বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম সালাম। সালাম দেয়া সুন্নাত হলেও এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব। আর ওয়াজিব তরক করা বড় গোনাহের কারণ।
জানা বিষয় হলো-
কেউ কাউকে সালাম দিলে সালামের উত্তর নিীবে দেয়া যাবে কি? কীভাবে সালামের উত্তর দিতে হবে? বিষয়টি ছোট হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সালামের উত্তর দেয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?
‘হ্যাঁ’ নীরবে সালামের উত্তর দিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে নীরবে উত্তর না দিয়ে উচ্চস্বরে এবং সুন্দরভাবে মিষ্টি ভাষায় সালামের উত্তর দেয়া জরুরি। তা না হলে এতে বেশকিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। সালামের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তাছাড়া কুরআন এবং সুন্নায় সালামের উত্তর সুন্দর ও উত্তমভাবে দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
সালাম হলো দোয়া। সালামের অর্থ হলো- আপনার ওপর শান্তি এবং বরকত বর্ষিত হোক। সুতরাং সালামের উত্তরও সুন্দরভাবে সালাম প্রদানকারীকে শুনিয়ে তার জন্য এভাবে দোয়া করা যে, আপনার ওপরও শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক। হাদিসের নির্দেশনা হলো- সম্ভব হলে আরও বেশি বাড়িয়ে দোয়া করা।
দোয়া করা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا
‘আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর শুনিয়ে সুন্দরভাবে আরও বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। সম্ভব হলে বেশি দোয়া করা। সম্ভব না হলে যেটুকু সালাম বা দোয়া করা হয় ন্যূনতম ততটুকু উত্তর দেয়া বা দোয়া করা জরুরি। এতে পরস্পরের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শত্রুতা দূর হয়ে যায়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।
পক্ষান্তরে কেউ যদি সালামের উত্তর সুন্দরভাবে না দেয় বা উচ্চস্বরে শুনিয়ে না দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তাতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। তা এমন-
যেমন অনেকেই সালামের উত্তম মনে মনে (নীরবে) দিয়ে থাকে। এমনভাবে সালামের উত্তর দেয় যে, এর মাধ্যমে ভালোবাসা সৃষ্টির পরিবর্তে মনের মধ্যে বিদ্বেষ জন্ম নেয়ার অবস্থা তৈরি হয়।
কেউ কাউকে আগ্রহ নিয়ে সালাম দিল, কিন্তু আগ্রহের সঙ্গে উত্তর না পেলে কিংবা খুব নিম্ন স্বরে বা নীরবে উত্তর এলে তাতে সালাম দেয়া ব্যক্তির মনে সন্দেহ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, মনোক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিংবা ওই ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়।
সালাম দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি এভাবে নিয়মিত হতে থাকলে তা এক সময় ভুল বোঝাবুঝিতে পরিণত হয়। পরস্পর সালাম বিনিময়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
সে কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে উত্তম ভাষায় সালাম ও দোয়ার উত্তর দেয়ার প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মনে রাখতে হবে
একে অপরকে দেখলেই সালাম দেয়া ইসলামের রীতি ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। হাদিসে এসেছে, ‘কথা বলার আগেই সালাম দেয়া।’ (মেশকাত)
যত কথা ও কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে সালাম দিতে হয়। এ সালাম দেয়া সুন্নাত। সালামের উত্তর দেয়া প্রত্যেকের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।
সালাম এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের সব তিক্ততা-হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মেশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সালাম দেয়ার পর শুনিয়ে বাড়িয়ে উত্তম ভাষায় সালামের উত্তর দেয়ার তাওফিক দান করুন। সালাম উত্তরে যথাযথ হক আদায় করুন। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর ও প্রচলন অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস