ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

সুন্দর পোশাক পরা কি অহংকার?

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২৮ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২০

সুন্দরের বহিঃপ্রকাশ উত্তম পোশাক পরা। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরা ইসলামের নির্দেশনাও বটে। কিন্তু সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরায় কি অহংকার প্রকাশ পায়? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?

ইসলামের নির্দেশনা হলো নিজেদের ক্ষমতা ও মর্যাদা অনুযায়ী পোশাক পরবে। নিজেকে সুন্দর ও মার্জিত পোশাকে প্রদর্শন করায় কোনো অহংকার নেই। এ সম্পর্কে হাদিসের অনেক নির্দেশনা রয়েছে। এ হাদিসের বেশ কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল- (হে আল্লাহর রাসুল!) প্রত্যেক ব্যক্তিই তো এটা চায় যে, তার কাপড়খানা সুন্দর হোক, তার জুতা জোড়া উত্তম হোক। (এটাও কি অহংকারের অন্তর্ভূক্ত?)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ স্বয়ং সুন্দরকে ভালোবাসেন। (অর্থাৎ উত্তম পোশাক পরা অহংকারের অন্তর্ভূক্ত নয় বরং তা সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত।)
প্রকৃতপক্ষে অহংকার হলো- সত্যের পরোয়া না করা আর অন্যকে হীন, নিকৃষ্ট বা অধম মনে করা।’ (মুসলিম)

উত্তম বা সুন্দর পোশাক পরায় কোনো অহংকার নেই। যার যার অবস্থান অনুযায়ী পোশাক পরাও ইসলামের বিধান ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের শোকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। হাদিসের বর্ণনায়ও তা উঠে এসেছে-
- হজরত আবু আহওয়াছ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাবা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে খুব নিম্নমানের কাপড় পরিধান করে উপস্থিত হলাম।
তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কী কোনো ধন-সম্পদ আছে?
আমি বললাম- জ্বী, আছে।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন- কী ধরণের ধন-সম্পদ আছে?
আমি বললাম- আল্লাহ তাআলা আমাকে উট, গরু, বকরি, ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি সব ধরণের ধন-সম্পদই দান করেছেন।
তিনি বললেন- আল্লাহ তাআলা যখন তোমাকে সব ধরণের ধন-সম্পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন তখন তোমার শরীরেও তাঁর দান ও অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ থাকা উচিত।’ (মিশকাত)

সুন্দর ও উত্তম পোশাক ও জিনিসপত্র ব্যবহারের আকাঙ্খাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমর্থন করেছেন। সম্মতি দিয়েছেন উত্তম জিনিস ব্যবহারের। হাদিসে এসেছে-
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার আকাঙ্ক্ষা হয় যে, আমার পোশাক অত্যন্ত উত্তম হোক, মাথায় তেল দেয়া থাকুক, জুতাগুলোও উত্তম হোক। এভাবে সে অনেকগুলো জিনিসের কথা বলল। এমনকি সে বলল- আমার আকাঙ্ক্ষা হয় যে, আমার হাতের লাঠিটিও অত্যন্ত সুন্দর হোক!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তরে বললেন, ‘এসব কথা পছন্দনীয়, আর আল্লাহ তাআলা সুন্দর রুচিকে ভালোবাসেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)

মোট কথা সুন্দর ও উত্তম কাপড় কিংবা ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা অহংকার বা গোনাহের কারণ নয় বরং সুন্দর পোশাকে ব্যাপারেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লহার রাসুল! আমার মনোরম ও উত্তম কাপড় পরা কি গৌরব ও অহংকার হবে? তিনি বললেন- ‘না’, এটাতো সৌন্দর্য আর আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।’ (ইবনে মাজাহ)
- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরও একটি বর্ণনা রয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজ আদায় করার জন্য উত্তম কাপড় পরবে (অর্থাৎ পরিপূর্ণ পোশাক পরে সেজে-গুজে যাবে)। ওই ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যধিক যোগ্য যে, মানুষ তাঁর দরবারে উপস্থিতির সময় (অর্থাৎ নামাজ আদায়ের সময়) ভালোভাবে সেজে-গুজে যাবে।’ (মিশকাত)

মনে রাখতে হবে
সুন্দর ও উত্তম পোশাক বলতে দামি পোশাকই নয় বরং রুচিশীল, মার্জিত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকই সুন্দর ও উত্তম পোশাক। আর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ নিজেকে পরহেজগারী কিংবা সুফি-দরবেশ হিসেবে জাহির করতে ছেঁড়া কিংবা ময়লা কাপড় পরে, তবে তা সুফি কিংবা পরহেজগারির বহিঃপ্রকাশ নয়। বরং সুফি কিংবা পরহেজগারি নিঃসন্দেহে অন্তরের বিষয়। ছেঁড়া, ময়লা কিংবা অগুছালো পোশাক পরার মাধ্যমে নিজেকে পরহেজগার হিসেবে প্রকাশ করার ধারণা মারাত্মক ভুল। তা থেকে বিরত থাকা সবার জন্যই জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী উত্তম ও সুন্দর পোশাক পরে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ সুন্দর। তিনি সুন্দরকে ভালোবাসেন। তাই সুন্দর পোশাক পরে নিজেদের আল্লাহর রঙে রঙিন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন