যেসব অবস্থায় মানুষের গোনাহ হয় না
আল্লাহর অবাধ্যতা তথা অন্যায় কাজে গোনাহ সংঘটিত হয়। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এমন ৩ কিংবা ৪টি অবস্থা রয়েছে, যেসব অবস্থায় অন্যায় করলে তা গোনাহ হিসেবে গণ্য হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা অনুযায়ী যেসব অবস্থায় গোনাহ হয় না, তাহলো-
> নাবালেগ অবস্থায়
অনেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকেন যে, অপ্রাপ্ত বা ছোট বয়সে অন্যায় কাজ করলে তার জন্য কোনো গোনাহ হবে কিনা। নাবালেগ ছোট শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরই তাদের উপর ইসলামের বিধান মেনে চলার হুকুম চলে আসে। ১৪ বছরের ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নাবালেগ হওয়ার কারণে উহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি পাননি। পরবর্তীতে খন্দকের যুদ্ধের সময় তাঁকে জেহাদের অনুমতি দেয়া হয়।
> যখন মানুষ ঘুমে থাকে
ঘুমে থাকা অবস্থায় মানুষের কোনো গোনাহ হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে ঘুমে থাকা ব্যক্তির গোনাহ হয় না মর্মে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন।
> পাগল বা মস্তিষ্ক বিকৃতি হলে
যদি কোনো ব্যক্তি পাগল হয় কিংবা মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে, তখন ওই ব্যক্তির অন্যায়মূলক কোনো কাজেও গোনাহ হয় না। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে তা প্রমাণিত।
> বেহুঁশ হয়ে গেলে
কোনো কারণে যদি কেউ বেহুঁশ হয়ে যায়। তার হুঁশ ফিরে আসা পর্যন্ত অন্যায় কাজেও গোনাহ হবে না বলে হাদিসের এক বর্ণনায় উঠে এসেছে।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রমাণে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বর্ণিত হাদিসগুলো হলো-
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তি থেকে কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে- ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা সুস্থ হয়। অধস্তন রাবি আবু বাকর রহমাতুল্লাহি আলাইহির এক বর্ণনায় এসেছে- বেহুঁশ ব্যক্তি যতক্ষণ না সে হুঁশ ফিরে পায়।’ (ইবনে মাজাহ)
- হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- ঘুমে থাকা ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, যতক্ষণ না বালেগ হয়।’ (আবু দাউদ)
- হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে- ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জেগে ওঠে। নাবালেগ, যতক্ষণ না তার বীর্যপাত হয় এবং পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়।’ (আবু দাউদ)
হাদিসে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের এ সময়ে ঘটিত কোনো কাজ গোনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ না হওয়াই বুঝানো হয়েছে।
সুতরাং উল্লেখিত অবস্থায় সংঘটিত যে কোনো অন্যায় বা গোনাহের ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। এ অবস্থার সম্মুখীন নারী-পুরুষ থাকবে গোনাহমুক্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গোনাহমুক্ত জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত অবচেতন, মস্তিষ্কবিকৃতি, বেহুঁশ হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম