নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হজে অংশগ্রহণের দৃশ্য
সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র হজ ২০২০। মহামারি করোনার ঝুঁকি থেকে হজে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্য দিয়ে আয়োজন করা হয় এবারের হজ। হজে অংশগ্রহণকারীদের কাবা শরিফ তাওয়াফ, ইবাদত-বন্দেগি, রোজানাজারী ও কংকর সংগ্রহসহ বেশ কিছু ছবি তুলে ধরা হলো-
হজ আয়োজনের শুরুতেই কাবা শরিফের চারদিকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তাওয়াফের জন্য সারিগুলো ডিজাইন করা হয়। যাতে সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই হজে অংশগ্রহণকারীরা তাওয়াফ করতে পারেন।
মহামারি করোনার বাস্তবতায় পুরোপুরি অচেনা রূপে শুরু হয়েছিল পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। এবারের হজের বর্হিঃবিশ্বের কোনো দেশ থেকেই হজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি কেউ। সৌদি আরবের বসবাসকারী বিশ্বের ১৬০ দেশের নাগরিক ও সৌদির স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবারের হজে অংশগ্রহণ করেন।
সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক হাজি এবারের হজে অংশগ্রহণ করেন। সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হজের সব রোকনে যথাযথ ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন।
আরাফাতের ময়দানে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার) ধ্বনিতে সারাদিন আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করেন।
রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করে ইবাদত বন্দেগিতে আত্মনিয়োগ করেন। পরদিন সকালে মিনায় গমন করেন।
মিনায় গমন করে জীবাণুমুক্ত কংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করে কুরবানি করেন এবং মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন পবিত্র হজ। এবার হজে অংশগ্রহণকারীদের দেয়া হয় পাঁচ তারকা মানের সুযোগ-সুবিধা। থাকা-খাওয়া থেকে শুরু করে মাথা মুণ্ডনেও ছিল পাঁচ তারকা হোটেল ব্যবস্থাপনার সুযোগ সুবিধা।
৩০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) যথাযোগ্য মর্যাদায় জাবালে রহমতের পাদদেশে মসজিদে নামিরা থেকে দেয়া হজের ঐতিহাসিক ভাষণ। এ ময়দান ও পাহারে অবস্থানের মাধ্যমে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। মহামারি করোনা থেকে মুক্তিসহ বিশ্ব মুসলিমের শান্তি কামনায় খুতবা দেন প্রবীণ খতিব শায়খ ড. আব্দুল্লাহ ইবনে সুলাইমান আল-মানিয়া।
হজে অংশগ্রহণকারীরা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। তাওবাহ-ইসতেগফারে কাটিয়েছে সারা দিন। জিকির-আজকার ও ক্ষমা প্রার্থনায় মশগুল ছিলেন হজে অংশগ্রহণকারীরা।
এদিকে হজ চলাকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার।
পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিনা অনুমতিতে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যাঁরা ২০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে হজের রোকন অঞ্চলে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য ১০ হাজার রিয়াল জরিমানার বিধান করা হয়েছে। বেশ কয়েক জনের উপর তা কার্যকরও করা হয়েছে। আবার একাধিকবার প্রবেশ করলে এ জরিমানা দ্বিগুণ হবেও আইন করেন হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ।
গত ২ আগস্ট রোববার মিনার কার্যক্রম শেষ করে বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে সোমবারই শেষ হয়েছে পবিত্র হজ। ঘরে যাওয়ার আগে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করছেন হজে অংশগ্রহণকারীরা। কোয়ারেন্টাইন শেষে যার গন্তব্যে ফিরে যাবেন হজে অংশগ্রহণকারী আল্লাহর মেহমানরা।
এদিকে সফলভাবে হজের আয়োজন সম্পন্ন করার পর যথাযথ নিরাপত্তা ও সতর্কতার সঙ্গে ওমরার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। সৌদি গেজেট/ওকাজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. হুসেইন আল-শরিফ জানান, শিগগিরই আসন্ন ওমরাহ মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু করবে সৌদি আরব। সে অপেক্ষায় সারা বিশ্বের লাখো মুসলিম উম্মাহ।
এমএমএস/এমএস