কুরবানির গোশত কত ভাগ করা যাবে?
কুরবানির গোশত খাওয়া ও অন্যকে দেয়া সম্পর্কে কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে আর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।‘ (সুরা হজ : ২৮)
- অতঃপর যখন তারা কাঁত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু চায় তাকে আর যে চায় না তাকেও।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)
উল্লেখিত আয়াত দুটি থেকে বোঝা যায়, কুরবানির পশুর গোশত নিজেরা খেতে পারবে, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা চায় না তাদের দেয়া যাবে এবং যারা দুস্থ-অভাবগ্রস্ত তারাও খেতে পারবে।
কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াতে কারিমা থেকে কুরবানির গোশতকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করার একটি নির্দেশনা বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
কুরবানিদাতা তার নিজের পাওয়া গোশত ৩ ভাগ করে-
প্রথমত : নিজেদের জন্য রাখবে তথা আহার করবে।
দ্বিতীয়ত : আত্মীয়-স্বজনদের এক ভাগ দেবে।
তৃতীয়ত : যারা অভাবি বা গরিব তাদের এক ভাগ দেবে।
অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারদের মতে, কুরবানির পশুর গোশতকে এ তিন ভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।
তবে হ্যাঁ, যদি কেউ তিন ভাগ করার ক্ষেত্রে কমবেশি করে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কুরবানি হবে না বা কুরবানি নষ্ট হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কিংবা চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা একেবারে পাল্লায় মেপে তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক কোনো বিষয় নয়।
কুরবানির এ গোশত ভাগ না করে এমনিতেই প্রতিবেশী-আত্মীয়, গরিব-অসহায়কে দেয়া যাবে। এ জন্য ভাগ করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
একটি বিষয় সুস্পষ্ট হওয়া দরকার
কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রাখা যাবে কিনা। রাখলে তা ঠিক হবে কিনা। এ নিয়েও একটি ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না মর্মে কেউ কেউ একটি হাদিসের তথ্য তুলে ধরেন। এ বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট সমাধান হলো-
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারির একটি বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দিনের বেশি রেখে কুরবানির পশুর গোশত খেতে নিষেধ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পরবর্তীতে একটি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা তা রহিত হয়েছে, যা তিরমিজিসহ অন্যান্য হাদিসের কিতাবে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
যদি কেউ কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি রেখে খেতে চায় তবে তা সম্পূর্ণরূপে বৈধ। এটা নিয়েও বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং কুরবানিদাতা ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করে তা হাদিয়া বা দান করার পাশাপাশি নিজেরা আহার করতে পারেন। তাতে মুস্তাহাবের ওপর আমল হয়ে যাবে।
আবার চাইলে নিজের ইচ্ছা মতো ভাগ না করেও হাদিয়া দিতে পারেন বা দান করতে পারেন। তাতে কোনো সমস্যা নেই।
সমাজের ভাগ
দেশের অধিকাংশ এলাকায় সমাজের একটা ভাগ নাম দিয়ে বিভিন্ন কুরবানির পশুর গোশত এক স্থানে জমা করা হয়। পরে তা গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টন করা হয়।
এভাগে গোশত উঠিয়ে তা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ নিঃসন্দেহে ভালো কাজ যে, সামাজিকভাবে গরিব এবং অভাবি মানুষের কাছে গোশত পৌঁছে দেয়া হয়।
তবে এর একটা কুপ্রভাবও আছে-
যিনি কুরবানি করেছেন, তিনি হয়তো তার পরিচিত কোনো গরিব বা একান্ত কাউকে দেবেন। আবার হয়তো এখন কোনো গরিব বা অন্য কাউকে দেবেন না ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরে গরিব-অসহায়দের দেবেন বা খাওয়াবেন।
আবার হয়তো তিন ভাগের একভাগ হয়তো পুরোপুরি গরিবকে দেবেন না কিছু কম বেশি দেবেন। ইসলাম এ স্বাধীনতা প্রত্যেক কুরবানিদাতাকেই দিয়েছেন। সমাজের লোক যদি একভাগ গোশত নিয়ে যায়। তাতে তখন আর করার কিছু থাকে না।
অনেক সময় লজ্জায় পড়ে হলেও এক্ষেত্রে কিছু বলা যায় না। এ বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অবৈধ বা গোনাহের পর্যায়ে চলে যায়। কারণ মনে সন্তুষ্টিতে না দিয়ে সমাজের চাপের কারণে দিলে তা কোনো অবস্থাতেই বৈধ বা জায়েজ থাকে না।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার ভাগের কুরবানির পশুর গোশত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেভাবে দিকনির্দেশনা ও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের উপদেশ অনুযায়ী কুরবানির গোশত ভাগ ও আহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস