আল্লাহকে ভালোবেসে মুমিন যেভাবে প্রার্থনা করে
মুমিন মুসলমান আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এ ভালোবাসার কারণেই মুমিন মুসলমান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করে। ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা কোনো কিছু চাওয়ার সময় আল্লাহর ক্ষমতার কথা বা প্রশংসা দিয়েই শুরু করে। যে ক্ষমতার কথা তিনি কুরআনে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহকে ভয় পায় এমন তাকওয়াবান বান্দারা তার সীমাহীন ক্ষমতার কথা স্মরণ করেই চোখের পানি ফেলে রোনাজারি করে। কেননা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া বান্দার কোনো চাওয়া বা প্রার্থনাই যে পূর্ণ হয় না। আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতার কাছে বান্দা তো একেবারেই অসহায়। আল্লাহর ক্ষমতার বর্ণনা ও মুমিনের জন্য প্রার্থনার সে বাণীও এমনই-
أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
উচ্চারণ : 'আন্নাল কুয়্যাতা লিল্লাহি ঝামিআও ওয়া আন্নাল্লাহা শাদিদুল আজাব।'
অর্থ : 'নিশ্চয় যাবতীয় ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই জন্য আর নিশ্চয় আল্লাহর আজাবই সবচেয়ে কঠিনতর। (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৫)
মুমিন মুসলমান আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে দোয়া কিংবা প্রার্থনায় বারবার কুরআনের এ কথা স্মরণ করে। মহান আল্লাহ বান্দার আশা-আকাঙ্ক্ষা, রোনাজারি ও চাওয়া-পাওয়ার সব বিষয়গুলোই দেখেন এবং বুঝেন। যার কান্না ও রোনাজারি আল্লাহর পছন্দ হয়ে যায়, তার প্রতি নাজিল হয় মহান আল্লাহর অবিরত রহমত ও বরকত। পরকালের আজাবও তার জন্য ক্ষমা করে দেন।
মহান আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার উদ্দেশ্যে পুরো আয়াতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। আল্লাহর প্রতি মুমিনের বিশ্বাস কেমন হবে, আল্লাহর প্রতি ঈমানদারের ভালোবাসা কেমন হবে। যারা এ বিষয়গুলো বুঝতে পারে, তারাই আল্লাহর ক্ষমতার কথা স্মরণ করেই তার কাছে প্রার্থনা করে। আল্লাহ ঘোষণা করেন-
'আর কোনো লোক এমনও রয়েছে যারা অপরকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোনো কোনো আজাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, নিশ্চয় যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আজাবই সবচেয়ে কঠিনতর।‘ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৬৫)
উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মুমিন বান্দার জন্য সুসংবাদ তুলে ধরে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। যাতে রয়েছে বিশ্বনবির পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা আর বিশ্বনবির কথার বিপরীতে মুমিন মুসলমানের জন্য রয়েছে সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহর পক্ষ থেকে একটি সুসংবাদ। হাদিসটি হলো-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কথা বলেছেন আর আমি (তার বিপরীতে) আরেকটি কথা বলছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে ডাকা অবস্থায় এবং তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা অবস্থায় (শিরক করে) মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
আর আমি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ) বলছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে না ডেকে বা সমকক্ষ মনে না করে মৃত্যুবরণ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।' (বুখারি)
সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত, মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা। প্রার্থনার শুরুতেই বার বার আল্লাহর ক্ষমতার কথা স্মরণ করা। আর তা বার বার স্মরণ করার জন্যই মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনের জন্য কুরআনুল কারিমে তা তুলে ধরেছেন।
মুমিন বান্দাকে সেই আল্লাহই যাবতীয় বিষয়ে সাহায্য করবেন, যিনি যাবতীয় বিষয়ে ক্ষমতাধর। আবার পরকালে যিনি সবাইকে সব ধরণের আজাব বা শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় মহান আল্লাহর ক্ষমতা ও শাস্তির কথা স্মরণ করার লক্ষ্যে বেশি বেশি এ আয়াতাংশ পড়ার তাওফিক দান করুন। আয়াত উপলক্ষে বর্ণিত হাদিসেরও যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে জান্নাতের মেহমান হওয়ার তাওফিক দান করুন। এ আয়াতাংশ দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে ধরণা দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস