ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

বিশ্বনবির প্রতি হজরত আলির ভালোবাসা

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:১৬ পিএম, ২৮ জুন ২০২০

যুবকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। ৪০ হিজরির ২১ রমজান তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তিনি হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার পরেই ইসলাম গ্রহণ করেন। সে হিসেবে তিনি ছিলেন ইসলাম গ্রহণকারী তৃতীয় ব্যক্তি।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাবা আবু তালিবের দীর্ঘ তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত ও তৈরি হন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। খুব কাছে থেকেই তিনি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাচার-চলাফেরা দেখেছেন।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর মা ফাতিমা বিনতে আসাদ। এ মহিয়সী নারী বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লালন-পালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বাবা আবু তালেব, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাবা আবদুল্লাহ এবং যুবাইর এ তিনজনই ছিলেন সহদর ভাই।

মক্কায় যখন কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করার সাহস করতো না, তখন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় নিজেকে উৎসর্গ করে দেন। ইসলামের দাওয়াতে তিনি প্রিয় নবিকে সময় দেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কার বনু হাশেম গোত্রকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, সে সময় হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বিশ্বনবির সঙ্গে থাকার দুঃসাহসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন কিশোর।

এমনকি মক্কায় চরম বিপদের সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের রাতে তাঁর নিজের বিছানায় নির্ভয়চিত্ত হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শুইয়ে রেখে মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। যাতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মানুষের গচ্ছিত রাখা আমানত (সম্পদগুলো) যথাযথ সততার সঙ্গে প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিতে পারেন।

অথচ সে রাতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার বিছানায় রেখেই হত্যার মাধ্যমে চিরতরে শেষ করে সিদ্ধান্ত ছিল। আর হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে চরম আত্মত্যাগের সিদ্ধান্তে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় শুয়ে ছিলেন। তা ছিল বিশ্বনবির প্রতি হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় সংঘটিত ইসলামের প্রত্যেকটি যুদ্ধেই অংশ গ্রহণ করে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বীরত্ব ও সাহসিকতার এমন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যা আজো ইসলামের ইতিহাসে স্মরণীয়।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ভালোবাসার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কলিজার টুকরা হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাঁর কাছে বিয়ে দেন। অথচ হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করার মতো অনেক বড় বড় প্রস্তাব ছিল। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু পক্ষ থেকে প্রস্তাবে বিনা বাক্যেই তিনি রাজি হয়ে যান।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় অপ্রতিদ্বন্দ্বি। তাঁর সম্পর্কে বিশ্বনবির বক্তব্য ছিল এমন যে, আমি জ্ঞানে শহর আর সে শহরের দরজা হলো আলি। তাইতো হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় বাইয়াতে রিদওয়ানের চুক্তিপত্র লেখেন হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু।

নবম হিজরিতে হজরত আবু বকরের নেতৃত্বে হজ পালনের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তিনি (হরজত আলি) সুরা তাওবার ১ থেকে ৩৭ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করে হজে আগত লোকদের শোনান। এ আয়াতগুলোতে ছিল মুক্তির ঘোষণা এবং কাফের মুশরিকদের হজ্ব সম্পাদনে অনুমতি দানের অস্বীকৃতি।

ইসলামের ইতিহাসে যুবকদের মধ্যে হজরত আলি ছিলেন প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার পাত্র হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা। হজরত ওমর, ওসমানের পর হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুও আততায়ীর হাতে তরবারির আঘাতে শাহাদাত বরণ করেন।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফজরের নামাজ আদায় করার সময় ইবনে মুলযান নামক এক ব্যক্তি তাঁকে তরবারি দ্বারা আঘাত করেন। ৪০ হিজরির ২১ রমজান তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কলিজার টুকরা জামাতা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের অন্যতম একজন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।

তাঁর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত হোক মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণা। আল্লাহ তাআলা মুসলমান জাতিকে তাঁদের অনুসরণ ও অনুকরণে ঈমানের স্পৃহা বৃদ্ধি বাড়িয়ে দিন। তাদের মতো বাস্তবজীবনে ইসলামকে একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন