ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মেরাজের রাতে গিবতের যে শাস্তি দেখেছেন বিশ্বনবি

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ১৮ জুন ২০২০

সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বদ অভ্যাস হচ্ছে গিবত। এটি মারাত্মক ঘৃণিত কাজ। যে অন্যের দোষ তালাশ করে বুঝতে হবে তার অন্তর নষ্ট হয়ে গেছে। এ নষ্ট অন্তর অন্যের দোষ বলে বেড়ানোর মাধ্যমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ইসলামে এ কাজকে গিবত হিসেবে আখ্যায়িত করে। কুরআন এবং সুন্নায় গিবত করা সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমের আল্লাহ তাআলা বলেন-
'মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।' (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তারা যেন গিবত না করে। কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করে। কারও গোপন বিষয়ের তালাশে না ছুটে। আর কারও এমন বিষয় আলোচনা করো না, যা তার কানে গেলে সে অসন্তুষ্ট হয়। এ কারণেই বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এমন আছে, যে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে খুব পছন্দ করে? সুতরাং যেমনি ভাবে তোমাদের স্বভাব-সুরুচি বোধ তোমাদের এই বিষয়টি বাধা দেবে, তেমনিভাবে তোমাদের শরিয়তেও কোনো মুসলামান ভাইয়ের গিবত করতে বাধা দেয়।

মানুষ তো মুসলমান ভাইয়ের গোশত খাবে না, তার ভাই হওয়ার কারণে, আর মৃত হওয়ার কারণে, তাহলে এর থেকে আরও বেশি তার অপছন্দ হওয়া দরকার মুসলমান ভাইয়ের নিন্দা করা। দোষ চর্চা করা। সুতরাং এসব বিষয়ে মহান আল্লাহকে ভয় করাই শ্রেয়। আর পরকালের কঠিন আজাবকে ভয় করা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কোনো বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা থেকে বেঁচে থাক। কেননা কুচিন্তা হলো সবচেয়ে মিথ্যা কথা। কারও খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ না করা। আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লেগে থেকো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং ইসলামি শরিয়তে সব ধরনের গিবতই হারাম তথা কবিরা গোনাহ। চাই সে গিবত হোক- আকার-ইঙ্গিতে, কথার ছলে, হাতের ইশারায়, কাগজ কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখির দ্বারা।

মুমিন মুসলমানের চিন্তার বিষয়-
যে গিবত নিজেদের নেক আমলকে ধ্বংস করে দেবে, সে গিবত করা কি উচিত হবে? যে গিবত নিজের কষ্টের অর্জিত সাওয়াবগুলো কেড়ে নেবে, সে গিবত কি চালিয়ে যেতে হবে?

না, অবশ্যই না। আমল ও সাওয়াব ধ্বংসকারী গিবত এখনই বন্ধ করা জরুরি। এ গিবত এখনই বন্ধ না করলে তা হয়ে যাবে মানুষের নিত্য দিনের কাজ। নিজের আমল ও সাওয়াবগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে এখনই সতর্ক হোন।

গিবত পরিহার করুন। অন্যের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে বিরত থাকুন। অন্যের ব্যাপারে বিষোদ্বাগার করা থেকে বিরত থাকুন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইশারা-ইঙ্গিতে কারো ব্যাপারে কোনো কথা বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা মেনে জিনের পরকালীন জীবনকে সুন্দর করুন।

মেরাজের রাতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা গিবতকারীর সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে হেফাজত করুন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে ওপরে (মেরাজে) নিয়ে গেলেন, আমি সেখানে এমন লোকদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখ তামার তৈরি। নখ দ্বারা তারা তাদের মুখমণ্ডল ও বুক খামচিয়ে রক্তাক্ত করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিবরিল! এরা কারা?! হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা সেসব লোক, যারা মানুষের মাংস খায়, অর্থাৎ পরোক্ষ নিন্দা করে এবং মানুষের পেছনে লেগে থাকে।’ (আবু দাউদ)

যে গিবত নিজের আমল ও সাওয়াবকে নষ্ট ও ধ্বংস করে দেয়, সে গিবত থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্য জরুরি। সুতরাং অন্যের গিবত নয়, নিজের আমল ধ্বংস নয়, বরং নিজের আমল-ইবাদতে মনোযোগী হওয়াই জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গিবতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। গিবত পরিহার করে নিজের আমল ও সাওয়াবকে হেজফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন