বারবার তাওবাহ ভঙ্গ করলে কি গোনাহ মাফ হয়?
গোনাহের প্রতিবিধান হলো তাওবাহ করা ও সংশোধন হওয়া। শুধু তাওবাহ করে সংশোধন না হলে তথা তাওবাহ বজায় না রাখলে এর হক আদায় হয় না। এমন অনেক মানুষ আছে যারা বারবার গোনাহ করে আর তাওবাহ করে। তবে তাওবাহ করার পর গোনাহ করে সে তাওবাহ ভাঙলে কি মানুষ এসব গোনাহ থেকে মুক্তি পাবে। এসব গোনাহের কি কোনো কাফফারা আছে?
গোনাহের প্রতিবাধান হলো তাওবাহ করা। কৃত অপরাধ থেকে সংশোধন হয়ে গোনাহ ছেড়ে দেয়া। তাওবাহ করার পর মানুষ যতবারই তা ভঙ্গ করুক না কেন, আবার তাকে তাওবাহ করা উচিত এবং প্রতিবারই নতুন করে সংশোধন হওয়ার প্রচেষ্টা চালানো জরুরি।
বারবার তাওবাহ করার মূল উদ্দেশ্য হলো গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করা, পরকালের মুক্তি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য দুনিয়া শত বাধা-বিপত্তির মাঝেও তা অব্যাহত রাখা। এতে যত ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন? বারবার তাওবাহ প্রসঙ্গে একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা যেতে পারে-
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো কঠিন পর্বত চুড়ায় আরোহন করতে চায়। আর তাতে ওঠার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে তার যাত্রা পথে যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, তাকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। পাহাড়-পর্বতের অসমতল পথে চলতে গিয়ে বার বার পিছলে পড়ে গেলেও সেখান থেকে ওঠে আবারও পথ চলতে হবে।
যতবারই সে পা পিছলে পড়ুক না কেন, প্রতিবারই তাকে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং পর্বত চুড়ায় আরোহনের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই গন্তব্যে পৌছা সম্ভব হবে।
আর যে ব্যক্তি পিছলে পড়ে থেকে যায় কিংবা গন্তব্যে পৌছার হিম্মত হারিয়ে ফেলে তবে সে কখনো নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না। সে হবে ব্যর্থ।
ঠিক তেমনিভাবে নৈতিকতা ও পূণ্যের উচ্চ শিখরে উঠার সিদ্ধান্তে অটল ব্যক্তিকে প্রতি পদস্খলনে কিংবা গোনাহের পর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামলে নিতে হবে। সত্যের পথে সুদৃঢ় থাকার প্রচেষ্টায় অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ বারবার গোনাহ বা পদস্খলনের জন্য পাকড়াও করবেন না। সাফল্য থেকেও বঞ্চিত করবেন না। তাকে সফলতা দান করবেন। অব্যাহত প্রচেষ্টাকারী ব্যক্তি হবে সফল ও স্বার্থক।
পক্ষান্তরে যারা একবার তাওবাহ করার পর পুনরায় গোনাহ করে বসে এবং দ্বিতীয়বার তাওবাহ না করে সে পাপের উপর স্থির থাকে, তাদের জন্য রয়েছে করুণ পরিণতি।
এ করুণ পরিণতি থেকে বাঁচতে বারবার তাওবাহকারী ব্যক্তি নিজের পদস্খলনের জন্য অন্তরে লজ্জা ও অনুতাপের অনুভূতি জাগ্রত রাখা জরুরি। জীবনভর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকা জরুরি।
ক্ষমা প্রার্থনায় এ লজ্জা ও অনুতাপ যেন কখনও মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না করে। কেননা এ ধরনের হতাশা আল্লাহ তাআলার রহমতের প্রতি কুধারণার নামান্তর। শয়তান মানুষকে পথহারা করতেই রহমত থেকে হতাশা নামক কুধারণার দিকে ধাবিত করে এবং সহজেই গোনাহের দিকে ধাবিত করে।
অথচ আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার রহমতের প্রতি নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
(হে রাসুল আপনি) বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা; আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' (সুরা যুমার : আয়াত ৩৯)
তাওবাহ ভঙ্গ করা থেকে বাঁচার উপায়
গোনাহমুক্ত জীবন লাভে তাওবাহকে শক্তিশালী করার এবং বারবার তাওবাহ ভঙ্গ করা রোধে ৩টি কার্যকরী উপায় রয়েছে। আর তাহলো-
- অবসর হলেই নফল নামাজ পড়া।
- প্রতি মাসেই নফল রোজা রাখা।
- নফল সাদকার বাড়িয়ে দেয়া।
এ কাজগুলো মানুষকে শুধু তাওবাহ ভঙ্গ করা থেকেই বিরত রাখে না, বরং এগুলো-
- মানুষের গোনাহের কাফফারা হিসেবে পরিগণিত হয়।
- মানুষকে আল্লাহর রহমতের দিকে আকৃষ্ট করে।
- অসৎ প্রবণতা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে তার আত্মাকে অধিকতর শক্তিশালী করে তোলে।
মনে রাখতে হবে
কেউ যদি তাওবাহ করার সময় কসম খায় তবে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। কসম ভঙ্গের কাফফারা হলো ১০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো কিংবা তিন দিন রোজা রাখা।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত তার রহমতের উপর সুদৃঢ় আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপনের পাশাপাশি যখনই গোনাহ করবে সঙ্গে সঙ্গেই তা থেকে তাওবাহ করে নেয়া। যাতে আল্লাহ তাআলা সঙ্গে সঙ্গেই তাওবাহ কবুল করে গোনাহ মাফ করে দেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার রহমতের উপর অটল থাকার তাওফিক দান করুন। বারবার তাওবাহ করে তা ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম