করোনায় শুরু হওয়া রমজান যেভাবে কাটাবেন মুমিন
প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে রহমত বরকতের মাস রমজান। নীরবে অতিবাহিত হলো রজব ও শাবান। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব মুমিনের হৃদয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে অন্যরকম এক অনুভূতি। ক্ষমা ও পাপ থেকে মুক্তির অনুভূতি।
তাইতো মানুষ এবারের রমজানে মসজিদমুখী হতে না পারলেও প্রতিটি ঘরকে পরিণত করবে মসজিদ ও মাদরাসায়। যেখান থেকে বিচ্ছুরিত হবে আল্লাহু আকবার ধ্বনি ও কুরআনের সুর। ঘরে ঘরে নামাজের মসল্লায় সেজদায় লুটিয়ে পড়বে মুমিন। সুতরাং করোনা আক্রান্ত রমজান এমন হলে কেমন হয়-
>> রহমত লাভের প্রার্থনা
নিজেদের অবাধ্য পথচলার কারণই আজ সারাবিশ্ব মহামারি করোনায় আক্রান্ত। তা থেকে অব্যাহতি পায়নি অনেক মুমিন মুসলমান। যারা এখনো বেঁচে আছে তারা নিজেদের অপরাধ ও করোনা থেকে মুক্তিতে অশ্রু বিসর্জন দেবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় রত হবে। নিজেদের ভুলের অনুশোচনা করবে। রমজানের রহমতে হতাশা কাটিয়ে করোনার ভয়াল গ্রাস থেকে মুক্তির প্রার্থনা করবে। মহান আল্লাহ বলেন-
‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা যুমার, আয়াত : ৫৩)
>> সপরিবারে জাহান্নাম থেমে মুক্তির প্রার্থনা
মহামারি করোনায় হতাশা নয় বরং রহমতের মাসে তার রহমত লাভে ঘরে বসে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাই মুমিনের সর্বোত্তম কাজ। অন্যবারের তুলনায় এবারের রমজানের প্রস্তুতির ধরনই আলাদা। পরিবারের সঙ্গে হোমকোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছে সবাই। তাই পুরো পরিবার কুরআনের এ আয়াত বাস্তবায়নে নেক আমলে নিয়োজিত থাকা জরুরি। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেকে এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)
তাই রমজানের রহমত বরকত মাগফেরতা ও নাজাত কামনায় পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ইলমি আমলের পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে।
>> কুরআন শেখার চেষ্টা
প্রতিটি পরিবারের জন্য এবারের রমজান হতে পারে কুরআনি পরিবার ও পরিবেশ তৈরির মহাসুযোগ। পরিবারের যারা কুরআন পড়তে পারেন না তারা এ সুযোগে শিখে নিতে পারেন কুরআন। যারা ইসলাম সম্পর্কে জানেন না তারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। কেননা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানুষের জন্য এক অনন্য আলোকবর্তিকা। মহান আল্লাহ বলেন-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক আলোকবর্তিকা এবং এক উন্মুক্ত কিতাব।’ (সুরা মায়িদা : আয়াত ১৫)
তাছাড়া এই দুর্যোগ থেকে উদ্ধার পেতে হলে অবশ্যই কুরআনের পথে থাকাও জরুরি। কুরআনের মর্ম অনুধাবন করাও জরুরি। তাই কুরআনে শেখার প্রতি গুরুত্বারোপ করা। হাদিসে এসেছে-
‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’ (বুখারি)
>> পারস্পরিক সুসম্পর্ক মজবুত করা
করোনায় ঘরবন্দি মানুষ। ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখাও জরুরি। কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রযুক্তিগতভাবে পারস্পরিক খোঁজ খবরের মাধ্যমে তা সচল রাখার উপযুক্ত সময়। রোজার ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে হতে পারে এ যোগাযোগ।
>> অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা
স্বাভাবিক সময়ে মানুষ তাই প্রতিনিয়ত মিথ্যা, প্রতারণা, খেয়ানত, সুদ, ঘুষ, ঝগড়া-বিবাদসহ নানা অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ জাতীয় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার মহা সুযোগ এবারের রমজান, যা মানুষের সারাদিন উপবাস থেকে রোজা পালনকে নিষ্ফল করে দেয়। কেননা হাদিসে রোজাদারের জন্য বিশ্বনবির ঘোষণা ছিল এমন-
‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে পারল না, তার উপবাস থাকায় তথা পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)
>> প্রকৃত মিসকিনকে সাহায্য করা
সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা লজ্জায় আত্ম-সম্মানে বাধে বলে কারো কাছে খাবার চাইতে পারে না আবার ঘরেও খাবার নেই। এমন লোক চিহ্নিত করে তাদের সহযোগিতা করা। তাদের সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা। হাদিসের ওপর আমল করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়।’ (মুসনাদে আহমদ)
>> ভালো কাজে সম্পদ ব্যয় করা
সমাজে যারা সম্পদশালী মহামারির এ সময়ে অভাবিদের দিকে এগিয়ে যাওয়া তাদের জন্য আবশ্যক। কেননা সম্পদশালীর জন্য এটি একটি সৎ ও কল্যাণকর কাজ। আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে অসহায়দের উপকারে ব্যয় করার নির্দেশও দিয়েছেন মহান আল্লাহ।
আবার যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা রমজানের এ বরকতময় সময়ে অভাবিদের মাঝে তা যথাযথ বণ্টন করা। আর এতে রয়েছে সম্পদশালীদের জন্য মহা পুরষ্কার। আল্লাহ বলেন-
‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের পালন কর্তার পক্ষ থেকে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সুরা বাকারা, হাদিস : ২৭৭)
>> অসহায়দের প্রতি সদয় হওয়া
অসহায়দের প্রতি সদয় হওয়া, উদার হওয়া, তাদেরকে দান সহযোগিতা করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো, যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (আবু দাউদ)
সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে রহমতের এ মাসে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা জরুরি। নিজেদের অপরাধ ও কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে একান্ত মনে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই।
মহমিারির এ সময়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তার অসহায় বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। কেননা তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
হে আল্লাহ করোনার এ সময়ে রমজানের যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। মন্দ পরিহার করার তাওফিক দান করুন। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর