মহামারিতে নেয়ামত লাভে যা করবে মুমিন
পৃথিবীর সুচনালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যুগে যুগে অনেক মহামারি ও দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়েছে। এসব মহামারি ও দুর্ভেক্ষের সময় মুসলিমদের আমল ও দায়িত্ববোধের কথা উঠে এসেছে ইতিহাস ও হাদিসে। যথাযথ দায়িত্ব পালন ও আমলের কারণে তারা পেয়েছে অনেক নেয়ামত ও সুসংবাদ।
দুনিয়ার এসব মহামারি বা দুর্ভিক্ষ বান্দার মন্দ আমলের পরিণতি। তা থেকে উত্তরণে এমন কিছু কাজ ও আমল রয়েছে যা বান্দার জন্য খুবই কার্যকরী। মহামারির এ সময়ে বান্দার নেয়ামত লাভের উপায়গুলো হলো-
- আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেয়া
সুখে-দুঃখে আল্লাহ তাআলা বান্দার তকদিরে যা রেখেছে সে ফায়সালার উপর নিজেকে ন্যস্ত করা। তাঁর ফায়সালাতেই সন্তুষ্ট থাকা। ভালো মন্দ সব তাকদীর তাঁর পক্ষ থেকেই এ বিশ্বাস রাখা জরুরি। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘(হে নবি! আপনি) বলে দিন, আমাদের জন্য আল্লাহ যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতিত আমাদের জন্য কিছু হবে না। তিনি আমাদের অভিভবক। আর আল্লাহর উপরই মুমিনের নির্ভর করা উচিত।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৫১)
- আল্লাহর কাছে তাওবাহ করা।
নিজেদের অন্যায় ও গোনাহের কথা স্মরণ করে মহান আল্লাহর কাছে খাঁটি অন্তরে তাওবাহ করা। বিগত জীবনে করা মন্দ কাজের কারণে সংঘটিত দুর্যোগের পর আর এসব অন্যায় কাজ না করার দৃঢ় সংকল্প করা। আল্লাহর কাছে তাওবাহ করতে কুরআন-সুন্নাহ ঘোষিত দোয়ার মধ্যমে তাওবা ও প্রার্থনা করার এখনই সময়।
- আল্লাহর কাছে নিরপত্তা চাওয়া।
বিপদে মুসিবতে খুলুসিয়তের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি কামনা করা। যেভাবে নিরাপত্তা চাইতে বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
‘তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে সব বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি প্রার্থনা করো, ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা ইয়াকিনের (বিশ্বাসের) পর আফিয়াত বা নিরাপত্তা থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো নেআমত কাউকে দেয়া হয়নি।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)
- আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মহামারি থেকে রক্ষার জন্য চিকিৎসাগত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ মহামারি বা দুর্যোগে পদক্ষেপ বা চিকিৎসা গ্রহণ তাকদির থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। বরং পদক্ষেপ বা চিকিৎসা গ্রহণ করাই তাকদির।
- ধৈর্যধারণ করা।
মহামারি ও দুর্যোগে ধৈর্যধারণ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বনবি। মহামারিতে ধৈর্যধারণে আজর ও সাওয়াবের নির্দেশনা রয়েছে। হাদিসে এসেছে-
‘যদি কেউ মহামারি প্লেগে তাকদিরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক নিজ আবাসস্থলে ধৈর্যধারন করে অবস্থান করেন তবে আল্লাহ তাআলা ওই প্রত্যেক মুমিনকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সর্বোপরি-
রোগে আক্রান্তদের খোঁজ-খবর নেয়াও অনেক বড় নেয়ামতের কাজ। যার যার অবস্থান থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করাও নেয়ামত লাভের অন্যতম মাধ্যম এবং হাদিসের নির্দেশনা। হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে দেখতে যায় (রোগীর খোঁজ-খবর নেয়) আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা ওই ব্যক্তির জন্য ঘোষণা করতে থাকেন- তোমার জীবন সুখের হোক এবং তোমার চলা উত্তম হোক। তুমি জান্নাতে তোমার ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছো।’ (ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে যথাযথ বিশ্বাস স্থাপন ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তার ঘোষিত নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর