ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

সতর্ক হই সুস্থ থাকি

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। এ প্রাণঘাতী ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। আধুনিক সব প্রতিরোধ ব্যবস্থা, প্রযুক্তি এবং বহু উদ্ভাবিত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে হার মানিয়ে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এই মহামারি করোনা। এ পরিস্থিতিতে সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সুস্থ থাকার বিকল্প নেই।

করোনার আক্রমণ থেকে আমরা নিরাপদ এ কথা আজ কেউ বলতে পারি না। আমরা যারা এখনও সুস্থ আছি এটা সৃষ্টি কর্তার বিশেষ এক কৃপা। এ কৃপার কৃজ্ঞতা জ্ঞাপন করা চাই।

সুস্বাস্থ্য মহান আল্লাহ পাকের এক বিশেষ নেয়ামত। আমরা যদি এ নেয়ামতের মুল্যায়ন না করি তাহলে আল্লাহ তাআলার হক আদায় থেকেও যেমন বঞ্চিত থাকব তেমনি বঞ্চিত থাকব বান্দার প্রাপ্য প্রদানের ক্ষেত্রেও।

আমার স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে আমি কোনো কিছুরই যোগ্য হব না। তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক কিংবা বাহ্যিক কাজকর্মই হোক না কেন। এ কারণেই স্বাস্থ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখার বিষয়ে অত্যধিক তাকিদ প্রদান করেছে ইসলাম।

আমরা লক্ষ্য করছি বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় আইনভঙ্গ করে জনসমাগম হচ্ছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে মোটেও ঠিক নয়। আমরা যদি সতর্ক থাকি তাহলে নিজেও যেমন সুস্থ থাকব তেমনি অন্যকেও সুস্থ রাখব।

আর আমি যখন সুস্থ থাকব তখনই আমার ইবাদত-বন্দেগী সুন্দরভাবে করতে পারব। কেননা একজন সুস্থ মানুষই পারে সঠিকভাবে ইবাদত করতে।

তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সরকার প্রণীত নিয়ম-নীতি মেনে চলা যেমন আবশ্যক তেমনি নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখারও বিকল্প নেই। মানুষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে এটাই ইসলামের সুমহান শিক্ষা এবং আল্লাহর ভালোবাসা লাভের উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)

একইভাবে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্বারোপ করে তার উম্মতকে নসিহত করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু মালেক আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম)

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাকে ইসলাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, ঘরের পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা-ঘাটসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।

ইসলামে এসব পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করার কারণ কি? এর মূল কারণ হল- আমরা যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে আমরা সুস্থ থাকব, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কেননা বেশিরভাগ রোগ ব্যাধি শরীরের দানা বাধার অন্যতম কারণ একমাত্র অপরিচ্ছন্নতা।

এমন অনেকে আছে যে, নিয়মিত গোসল করে না, ঠিকমত দাঁত ব্রাশ বা মেসওয়াক করে না, এর ফলে শরীরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট রোগ-ব্যধির সৃষ্টি হয়। এই ছোট ছোট রোগগুলোই একদিন বড় আকার ধারণ করে।

যদিও সুস্থ থাকার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার কোনো শেষ নেই। পৃথিবীতে সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমাদের কত আকুতি, কত পরিশ্রম, কত সাধনা করে থাকি। সত্যিকার অর্থে যে পথে সুস্থ থাকা যায় তার সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে আজ বিশ্বে এমন সব রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে, যেগুলো থেকে পরিত্রাণের আর কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জীবনের বড় একটি সম্পদ সুস্থতা। তাই সময় থাকতে এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আমার উম্মত, পাঁচটি সম্পদ হারানোর আগে তার মর্যাদা দাও-
- মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে।
- বার্ধক্যের আগে যৌবনকে।
- দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতাকে।
- অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে। আর
- ব্যস্ততার আগে অবসরকে।’ (মুসতাদরিকে হাকেম)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে সৎ কাজে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, সুস্বাস্থ্যকে কাজে লাগাও, সুস্বাস্থ্যকে রক্ষা কর।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি সারা দিন রোজা রাখতেন, সারা রাত নফল নামাজ পড়তেন। তিনি তাকে ডেকে বললেন- হে আমার সাহাবি, জেনে রাখ! ‘নিশ্চয় তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে।’ (বুখারি)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, ইসলাম এমন কিছু করতে বলে না যা থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

আমরা যদি সব কিছু ভুলে গিয়ে কেবল দিন-রাত ইবাদতে মগ্ন থাকি আর শরীরের প্রতি, ঘর-সংসারের প্রতি, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি খেয়াল না রাখি তবে কী মহান আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন?
মোটেও না। বরং আমাদের ইবাদত, ঘর-সংসার সব কিছুই করতে হবে আবার স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বস্থির ওপরই একাগ্রচিত্তে ইবাদত নির্ভরশীল।

এ কারণেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ পাকের দু’টি বিশেষ নেয়ামত সম্পর্কে খুবই অমনোযোগী। একটি হলো স্বাস্থ্য। আর অপরটি হলো অবসর।’ (বুখারি ও তিরমিজি)

মনে রাখতে হবে
রোগাক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ এবং সর্বোচ্চ সতর্কতার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আবার অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সর্বোত্তম। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণাও এমন। এ কারণেই কেয়ামতের দিন বান্দাকে সুস্বাস্থ্যের নেয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে। তাকে সেদিন বলা হবে- আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা আমাদের এখনও তার অশেষ কৃপায় সুস্থ রেখেছেন। তাই আমাদের প্রতিটি নিশ্বাসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কৃতজ্ঞা জ্ঞাপন করাই উচিত।

সর্বোপরি মহান রাব্বুল আলামিনের কৃজ্ঞতার পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনার নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক বেশি সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। আমরা যদি এখনও সতর্ক না হই তাহলে আমাদের অবস্থাও হতে পারে বিপর্যয়কর। মহান আল্লাহ তাআলা বিশ্বমানবতাকে ক্ষমা করুন। আমাদের প্রতি তার রহমত নাজিল করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

আরও পড়ুন