কীসের এত অহংকার?
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো। বিশ্বব্যাপী মহাবিপর্যয় নামিয়ে এনেছে করোনাভাইরাস। ক্ষমতা আর অস্ত্রের সেই শক্তি করোনার কাছে আজ কিছুই না। সবাই আজ প্রার্থনা করছেন আকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতার মালিক সৃষ্টিকর্তার কাছে।
আজ কোথায় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার অহংকার? সবার অহংকার যে তিনি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন তার পরেও কি আমার বিবেক জাগ্রত হবে না? কীসের এত অহংকার আমার?
নিজেকে অন্যের তুলনায় উত্তম ও শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে নিজের তুলনায় তুচ্ছ ও ঘৃণ্য মনে করার নামই অহংকার। অহংকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার একক বৈশিষ্ট্য ও অভ্যাস। এটি বান্দার জন্য শোভা পায় না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
‘অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান : আয়াত ১৮)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে এক কণা পরিমাণ অহংকার আছে সে কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’
একজন সাহাবি বললেন, যদি কেউ সুন্দর পোশাক ও জুতা পসন্দ করে? এতে ু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অহংকার বলতে আত্মাভিমানে সত্যকে অস্বীকার করা এবং অন্যকে হেয় চক্ষে দেখা বুঝায়’ (মুসলিম)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, কোনো অহংকারীকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না।
আমরা সাধারণত দেখি, অনেকেই এমন আছেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ বা জ্ঞানের অধিকারী করেছেন তারা নিজেকে অনেক কিছু মনে করে আর অন্যদের কিছুই মনে করে না। তারা নিজেদের অর্থের বা জ্ঞানের অহংকার করে, যার ফলে সাধারণ লোকদের সাথে কথা পর্যন্ত বলতে লজ্জাবোধ করে, এমনকি নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাথেও খারাপ আচরণ করতেও দ্বিধা করে না। আল্লাহ তাআরা বলেন-
وَلَا تَمْشِ فِى الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا
‘আর জমিনে গর্বভরে চলাফেরা করো না, তুমি কক্ষনো জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায় পর্বতের ন্যায়ও হতে পারবে না।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩৭)
এই আয়াত থেকে সুস্পষ্ট হয় মানুষ অতি দুর্বল, তার কোনো মর্যাদাও নাই, তাহলে মানুষের মাঝে কিসের এত অহংকার। মহামারি করোনায়ও কি তদের অহংকার ও বিবেকবোধ জাগ্রত হবে না?
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেয়ামত দিন তোমাদের মধ্য থেকে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আর সবচেয়ে নৈকট্য লাভকারী হবে ওইসব ব্যক্তি যারা সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্রের অধিকারী।
আর তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত আর আমার থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে সেই সব ‘ছরছার’ লোকেরা অর্থাৎ যারা কথা বানিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলে ‘মুতাসাদ্দিক’ অর্থাৎ বড়াই করে মুখ ফুলিয়ে কথাবার্তা বলে আর ‘মুতাফাইহিক’ অর্থাৎ মানুষের ওপর ঔদ্ধত্য ফলায়।
সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছরছার আর মুতাসাদ্দিক-এর অর্থ তো আমরা জানি তবে মুতফাইহিক কারা? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, মুতাফাইহিক হলো তারা যারা আত্মম্ভরিতা, অহংকার ও ঔদ্ধত্যের সাথে কথা বলে।’ (তিরমিজি)
বর্তমানে সারাবিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণে আতঙ্কিত। প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
এমতাবস্থায় আমাদেরকে মহান আল্লাহর দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় দোয়া করতে হবে। কেননা এখন কেবলমাত্র তিনিই পারেন তার সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে রক্ষা করতে।
আসুন, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার দরবারে নিজেদের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই। অহংকারের পোশাক খুলে আত্মাকে করি পরিশুদ্ধ। হে দয়াময় প্রভু! তুমি আমাদেরকে অহংকার থেকে মুক্ত করো। জাগ্রত করে দাও আমাদের বিবেকবোধ। আমাদেরকে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা কর।’ আমিন।
এমএমএস/পিআর