চরম বিপদেও যেভাবে আল্লাহর রহমত পাবে মানুষ
মানুষের প্রতি আল্লাহ তাআলা দয়া বা করুণাই হচ্ছে তার রহমত। পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার দয়া অফুরন্ত। তার অপার করুণার মধ্যেই পুরো মাখলুকাত নিমজ্জিত। দুনিয়ার যে দিকেই তাকাবে দেখবে বান্দা দেখবে তার রহমত বা করুণার কোনো শেষ নেই।
বিশ্ব বিধাতা দুনিয়াতে ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বোধ-শক্তি, বিচার-বুদ্ধি, জ্ঞান-গরিমা আর কোনো প্রাণীকে দেননি। মানুষকে আল্লাহ তার খলিফা ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে আকাশচুম্বী মর্যাদা দান করেছেন। মানুষকে সেজদা করেছেন সব ফেরেশতা।
দুনিয়ার জলে ও স্থলে একমাত্র মানুষের নিয়ন্ত্রণ। সর্বোপরি কুরআন মাজিদে বনি আদমকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় ভূষিত করার কারণে তার রহমতের চিরায়ত অংশীদার শুধুই মানুষ। এ জন্য প্রতিনিয়ম মানুষ আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বাধ্য।
সৃষ্টির দিকে তাকালে মানুষ বুঝতে পারে যে, তার রহমতের সীমা নেই। মানুসের জন্মের আগের একটি বিষয নিয়ে একটু চিন্তা করলেই মানুষ বুঝতে পারবে যে, আল্লাহ মানুষের প্রতি কী পরিমাণ রহমত করেছেন। তিনি মানুষকে মাতৃগর্ভে কেমন করে বাঁচিয়ে রেখেছেন। মাতৃগর্ভের অবস্থান তো তার মহান কুদরতেই নিদর্শন।
সব সৃষ্টির মধ্যে মানব আকৃতি অত্যন্ত সুন্দর অবয়বে সৃষ্ট। তাইতো কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির সুন্দরের কথা তুলে ধরে ঘোষণা করেন –
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।’ (সুরা ত্বীন : আয়াত ৪)
মানুষ প্রতিনিয়ত আল্লাহ তাআলার এমন সব নেয়ামতে হাবুডুবো খাচ্ছে যা বলে বা গুণে শেষ করা যাবে না। তাইতো আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে তার রহমতের বর্ণনা দিয়ে বলেন-
- وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا إِنَّ اللّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘আর যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে তা শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১৮)
দুনিয়াজুড়ে মহান আল্লাহর তাআলার রহমতই মানুষকে বেষ্টন করে আছে। যা গুণে শেষ করা যাবে না।
নেয়ামত দেয়ার কারণ
আল্লাহ তাআলা মানুষকে এত নেয়ামত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ শয়তনের ধোঁকায় পড়ে সে মহান আল্লাহর নাফরমানি করে বেড়ায়। তারপরও আল্লাহ তাআলা তার সেরা সৃষ্টি মানুষের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে।
মানুষ যখনই তার ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে তখনই আল্লাহ তাআলা মানুষকে ক্ষমা করে দেন। আর বার বার তার সেই রহমতের কথা এভাবে স্মরণ করিয়ে দেন-
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)
এ আয়াতের আলো মানুষ বড় গোনাহ বা ভুল করেও চরম বিপদে পড়ে আর সে সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এ আয়াতই তার প্রমাণ যে, মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করে দেবন।
আর যেহেতু তিনি দয়ালু তিনি মানুষকে চরম বিপদ থেকেও হেফাজত করবেন। আল্লাহ তাআলার রহমতের সীমা অপরিসীম। হাদিসে এসেছে-
‘দিনের পর যখন রাত হয়, গভীর রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ডেকে ডেকে বলে-
- ওহে কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী?
আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব।
- ওহে কে আছ রিজিকের কষ্টে?
আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে উত্তর রিজিক দান করব।
- ওহে কে আছ রোগে-শোকে জর্জরিত?
আমার কাছে আরোগ্য ও শান্তি চাও, আমি তোমাদের আরোগ্য ও প্রশান্তি দান করব।
এছাড়াও মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি রহমত স্বরূপ কুরআনুল কারিমে আরও ঘোষণা করেন-
- ‘তুমি আমাকে ডাকো আমি তোমার ডাকে সাড়া দিব।’
অন্য আয়াতে বান্দার প্রতি রহমতের অনন্য কথা তুলে ধরেন এভাবে-
- তুমি আমাকে স্মরণ কর আমিও তোমাকে স্মরণ করব।
হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করার ব্যাপারে বর্ণনা করেন-
‘বান্দা আল্লাহকে যে অবস্থায় ডাকে, আল্লাহ বান্দাকে তার চেয়ে উত্তম পন্থায় উত্তম মজলিশে স্মরণ করে।’
আর মানুষের হৃদয়ে সেরা প্রশান্তি রয়েছে মহান আল্লাহ জিকির তথা স্মরনের মধ্যেই নিহিত। জিকিরের মাধ্যমেই বান্দার সঙ্গে আল্লাহর গোপন বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তৈরি হয়।
গভীর রাতে ঘুম থেকে ওঠে বান্দা যখন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে মনের আকুতি ও নিবেদন জানাতে থাকে তখন মাওলার রহমতের দরজা খুলে যায়, তার রহমতের দ্বারা বান্দার সব গোনাহ মাফ হয়ে যায়। সব অভাব পুরণ হয়ে যায়।
বান্দার জন্র দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার ৪টি রহমত সদা বিরাজমান। আল্লাহ যার প্রতি বেশি খুশি হন তাকে এ ৪টি রহমত দিয়ে পরীক্ষা করেন। আর তাহলো-
- কন্যা সন্তান।
- মেহমান।
- রোগ-ব্যধি।
- বৃষ্টি।
মানুষ কখনোই এ ৪টি রহমতের কদর করে না। এর তাৎপর্য অনুধাবন করে না। অথচ এ ৪টি রহমতের পরিচর্যার মধ্যেই সর্বোচ্চ সফলতা জান্নাত ও আল্লাহর দিদার লুকায়িত।
মানুষের জন্য আল্লাহ পক্ষ থেকে সেরা রহমত হলো-
শয়তানের সব ধরনের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তাওবার দরজা খোলা রাখবেন।
মানুষের মৃত্যুর আগ মূহূর্তে তথা জান কবরেজর আগেও যদি মানুষ একনিষ্ঠ নিয়তে তাওবা করে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার অতিতের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তাকে দান করবেন চিরস্থায়ী জান্নাত। এটি হলো বান্দার প্রতি তার একান্ত রহমত।
সুতরাং মহামারি করোনায় হতাশা নয়, বরং এ আশা করা যে, এটি মুমিন মুসলমানের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। এ থেকে মুক্তি লাভে হাদিসের ওপর আমলের পাশাপাশি গোনাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহর রহমতের আশা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার রহমত লাভের সবগুলো সুযোগ গ্রহণের করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকলের সফলতা দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম