ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যে কারেণ মানবজাতির আত্মার পবিত্রতা জরুরি

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ২৫ মার্চ ২০২০

মাহমুদ আহমদ : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

প্রাণঘাতী মহামারি করোনায় সবার মাঝেই এক অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ সংক্রমণে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ মহামারি থেকে আত্মরক্ষায় প্রথমেই প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি অর্জন তথা আত্মার পবিত্রতা।

প্রাণঘাতী মহামারি করনোর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে আমাদের নিয়ম-নীতি মেনে চলা যেমন আবশ্যক তেমনি আমাদের হৃদয়কেও করতে হবে স্বচ্ছ এবং পবিত্র। কেননা আল্লাহ তাআলা চান তার বান্দারা যেন স্বচ্ছ পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী হয়।

মানুষের মুখের কথাগুলো যেন হয় সহজ-সরল। সে যেন পরস্পরের সঙ্গে সুন্দর সুন্দর কথা বলে। মুখে যা বলে অন্তরেও যেন তা থাকে। মুখে এক আর অন্তরে আরেক এমন লোকদের তিনি মোটেও ভালবাসেন না। এমনকি আমাদের অন্তরে কী আছে তাও তিনি খুব ভালভাবে জানেন।

মানুষকে সহজেই নানান কৌশলে ধোঁকা দেয়া কিংবা বোকা বানানো সহজ কিন্তু মহান আল্লাহ তাআলাকে কোনোভাবেই ধোঁকা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ তিনি সেই মহান সত্ত্বা যিনি মানুষের প্রকাশ্য-গোপন ও ভেতর-বাহিরের সব কিছু সম্পর্কেই অবগত।

প্রকাশ্যে আর গোপনে কত পাপই না করে চলেছি আমরা। সব পাপের জন্যই প্রত্যেকের উচিত ক্ষমা চেয়ে হৃদয়কে পবিত্র করে নেয়া। আল্লাহ তাআলা কখনো তার সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করার পাপকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া তিনি অন্যান্য পাপ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন তার প্রতি অপবাদ আরোপ করল।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)

আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর এবং নিয়ত দেখে থাকেন। আমরা ভাল কাজ যতই করি না কেন হৃদয় যদি স্বচ্ছ না হয় এবং অন্তর যদি পবিত্র না হয় তাহলে এসব ভালো কাজ কোনো কাজেই লাগবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘বলে দিন, তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভাল কাজ করেছে; চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও দেখতে পাবে। ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দুরের হতো! আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ২৯-৩০)

এ কারণেই মানুষের উচিত তার আত্মাকে পবিত্র করা। আত্মা পবিত্র করতে দিনের নির্ধারিত পাঁচ সময়ে নামাজ আদায় করা। ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করা। অশ্লীয় ও বেহায়াপনা কাজ ছেড়ে দেয়া।

বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে সেবামূলক কাজ করা, সমাজ কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করেও আমরা আত্মাকে পবিত্র করে নিতে পারি। আর হৃদয়ের পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাতে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তুমি কি তাদেকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পূত-পবিত্র বলে থাকে অথচ পবিত্র করেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকেই? বস্তুতঃতাদের উপর সুতা পরিমাণ অন্যায়ও হবে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৯)

সুতরাং বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার জন্য আমরা যদি পবিত্র হৃদয় নিয়ে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে প্রার্থনা করি তাহলে হয়তো তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি ঠিক তেমন ধারণা করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি ও তার সাথে থাকি। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও আমার মনের মধ্যে তাকে স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তা হলে আমি তাকে এর চেয়েও উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি।’ (বুখারি, মুসলিম)

মনে রাখতে হবে
আমাদের হৃদয়কে পবিত্র করতে হলে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা জরুরি। আল্লাহর জিকিরে সময় অতিবাহিত করা। আল্লাহর জিকির ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যম পরিশুদ্ধ আত্মা গঠনের মাধ্যমেই দুনিয়ার যাবতীয় মহামারি, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাবে মুমিন মুসলমান।

কেননা আল্লাহর জিকিরে মাধ্যমেই তার সান্নিধ্য লাভ করার উপায়। তাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও আত্মাকে পবিত্র করতে কুরআন তেলাওয়াত ও কুরআনের অধ্যয়নের বিকল্প নেই। কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যার অধ্যয়ন মানুষের হৃদয়কে পবিত্র করতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর স্মরণ ও কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে পবিত্র করার তাওফিক দান করুন। তিনি সবাইকে ক্ষমা করুন এবং রহমতের চাদরে ঢেকে রাখুন। মহামারি করোনাসহ যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

আরও পড়ুন