কুরআনের শ্রেষ্ঠ ক্বারি ছিলেন সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বেশ কয়েকজন কুরআন সাধক ও বিখ্যাত ক্বারি ছিলেন। যাদের কুরআন তেলাওয়াত ও তালিম ছিল অসাধারণ। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু। সুমিষ্ট কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াতকারী হিসেবে পুরো মদিনা জুড়ে ছিল তার সুখ্যাতি।
বিশ্বনবি তার কণ্ঠকে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের কণ্ঠের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার মনোমুগ্ধকর কুরআন তেলাওয়াতে হৃদয় কেড়েছিল সবার। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কুরআন তেলাওয়াতের প্রশংসা করে বলেছেন-
‘আবু মুসা আশআরিকে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের সুমিষ্টি কণ্ঠের কিছু মিষ্টতা দান করা হয়েছে।’
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন প্রিয় নবি তার কণ্ঠের প্রশংসা করতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আবু মুসা আশআরির তেলাওয়াত শুনে বলতেন, ‘এ যেন (হজরত) দাউদ আলাইহিস সালামের কণ্ঠ।‘
সে কারণেই হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে কুরআন তেলাওয়াতের জন্য আহ্বান করতেন আর বলতেন- ‘হে আবু মুসা! আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আগ্রহী করে তোলো।’
ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত
সুমিষ্ট কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াতকারী সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ইয়েমেনের কাহতান অঞ্চলের অধিবাসী। আশআরি ছিল তার বংশীয় পদবি। তিনি পবিত্র নগরী মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।
কুরআন সাধক এ সাহাবি ইসলাম গ্রহণ করেই বসে থাকেননি তিনি নিজ গোত্রের কাছে ইসলামের সুমহান দাওয়াত নিয়ে উপস্থিত হন। অতঃপর সেখান থেকে তিনি হাবশায় হিজরত করে চলে আসেন।
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু খায়বার বিজয়ের দিন পবিত্র নগরী মদিনায় আসেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদের অংশ দেন।
বিশ্বনবির দোয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইন ও হাওয়াজিনের যুদ্ধের পর কুরআন সাধক এ সাহাবির জন্য এভাবে দোয়া করেন-
‘হে আল্লাহ! আবদুল্লাহ বিন কায়েসের গোনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং তাকে কেয়ামতের দিন সম্মানজনক স্থান দান করুন।’
আবু মুসার কুরআনের শিক্ষক বিশ্বনবি
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআনের শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং বিশ্বনবি। তিনি কুরআন মুখস্ত করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শোনাতেন।
কুরআনের খেদমত
কুরআন মুখস্ত করে তা বিশ্বনবিকে শোনানোর পর তিনি মানুষকে এ কোরআন শেখাতেন এবং তাদের কাছ থেকেও কুরআনের সবক শুনতেন। বসরায় অবস্থানকালেও হজরত আবু মুসা আশআরি মানুষকে পবিত্র কুরআন শেখাতেন।
বসরায় অবস্থান কালে প্রতিদিন ফজর নামাজের পর লোকেরা তাঁর কাছে কুরআন শিখতে ভিড় করতো। তিনি লোকদেরকে ধারাবাহিকভাবে একজন একজন কর কুরআন শেখাতেন।
হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসা
কুরআন সাধক সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি সম্পর্কে প্রশংসা ও মূল্যায়ন করেন হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু। কুরআনের সেবার মুল্যায়ন করতে গিয়ে হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
‘কোনো প্রশাসক বসরাবাসীকে তাঁর (হজরত আবু মুসা) থেকে উত্তম কিছু দিতে পারেনি।’
তাঁর কাছ থেকে কুরআন শিখে বিখ্যাত কয়েকজন হলেন-
>> হজরত হাতান বিন আবদুল্লাহ;
>> হজরত আবু রেজা;
>> আবু শায়খ হানায়ি প্রমুখ।
দক্ষ শাসক ও যোদ্ধা আবু মুসা
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু শুধু কুরআনের শিক্ষক ও ফকিহ-ই ছিলেন না, তিনি একজন দক্ষ শাসক ও বীর যোদ্ধাও ছিলেন।
গভর্ণর আবু মুসা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দুইটি অঞ্চলের গভর্ণর নিযুক্ত করেন। তিনি জাবিদ ও আদনের গভর্নর হিসেবেও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বসরার গভর্ণরের দায়িত্ব দেন এবং হজরত ওসমান তাঁকে কুফার গভর্ণর নিযুক্ত করেন।
শাম বিজয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর তিনি শাম বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ওফাত
সুকণ্ঠের অধিকারী কুরআন সেবক সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু ৪৪ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত আবু মুসা আশআরির মতো কুরআনের সেবক ও খাদেম হিসেবে কবুল করুন। তাদের হৃদয়ে কুরআনের অনুরাগ, প্রেম ও মহব্বত পয়দা করে দিন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম