বিশ্বনবিকে যেমন ভালোবাসতেন মুহাজের সাহাবি হজরত মুসআব
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত উক্তি বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সতর্কবার্তা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যথাযথ ভালোবাসা প্রদর্শন না করায় তিনি ছন্দে ছন্দে গেয়ে ওঠেন-
‘রবিউল আউয়াল এলে তোমারই গান গাই;
রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যাই’
১২ রবিউল আউয়াল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত তথা জন্ম উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী চলে নানা আয়োজন ও অনুষ্ঠান। প্রিয় নবিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ ও তাঁর পরিপূর্ণ জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই মুসলিম উম্মাহর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেলাদাত উপলক্ষ্যে তাঁর প্রতি বর্তমান সময়ের মুমিন মুসলমানদের ভালোবাসা থাকলেও কাজে তার বাস্তবায়ন একেবারেই কম। সাহাবায়ে কেরামের ভালোবাসাই তার প্রমাণ।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসে যে জীবন গ্রহণ করেছিলেন মক্কার মুহাজের যুবক হজরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহু। জেনে নেই বিশ্বনবিকে ভালোবেসে কেমন ছিল তার জীবন ও পথচলা। আর তাহলো-
মক্কার সুদর্শন যুবক মুসআব
মক্কার সুদর্শন যুবক হজরত মুসআব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু। ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা বেশি পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্যের অধিকারী।
অনেক দামি রেশমি পোশাক পরিধান করতে তিনি। উন্নত মানের সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি যে এলাকা দিয়ে যেতেন সে এলাকা সুরভিত হয়ে যেতো।
প্রিয়নবিকে ভালোবেসে ইসরাম গ্রহণ
আলীশান জীবন ও শান-শওকতে বসবাসকারী মুসআব যখন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন। তাঁর সাক্ষাত লাভ করলেন, তখন ঘটে গেল এক নতুন ঘটনা। তার জীবনের মোড় ঘুরে গেল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামের দাওয়াতের পয়গাম তার হৃদয়ে গভীরভাবে প্রবেশ করলো। তাঁর জীবনাচারে ঘটে গেল আমূল পরিবর্তন। তাকে দেখে আগের মুসআব মনেই হয় না।
হজরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মমতাময়ী মুশরিকা মা-ও তার চলাফেরায় তাকে দেখে ঘৃণা করতে শুরু করলেন। শুধু ঘৃনা করে শেষ নয়, বরং তার ওপর শুরু হলো চরম অতাচার ও নির্যাতন।
হজরত মুসআন ধনাঢ্য ও সুদর্শন যুবক থেকে ছিন্ন-মলিন কাপড় পরিহিত এক হতদরিদ্র ব্যক্তিতে পরিণত হলেন। তালি দেয়া ছিন্ন-মলিন পোশক পরিধান করতনে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন তাঁকে দেখলেন যে, তিনি পুরাতন চামড়ার তালি দেয়া চ্ছিন্ন কাপড় পরে আছেন। বিশ্বনবিকে ভালোবেসে পবিত্র ও সত্য ধর্ম ইসলাম গ্রহণে তিনি বরণ করে নিয়েছিলেন কী কঠিন দুঃসহ জীবন।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুসআব সম্পর্কে বলেছেন, ‘কয়েক বছর আগেও তাকে দেখেছি, তখন তার চেয়ে সুদর্শন ও সৌন্দর্যবিলাসী ও উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ পরা দ্বিতীয় ব্যক্তি আর কেউ মক্কায় ছিল না।
আর আজ শুধু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসার কারণে তার জীবনের সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে কুরবানি করে দিয়েছিলেন।’
পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মদিনার আনসারদের জন্য প্রথম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
বদর যুদ্ধে হজরত মুসআব মুহাজিরদের পক্ষ থেকে ইসলামের পতাকা বহন করেছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে হরজত মুসআন রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাতবরণ করেন।
মক্কার সবচেয়ে সুদর্শন যুবক ও দামি পোশাক পরা মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পর তার জন্য প্রয়োজনীয় কাফনের কাপড়ও ছিল না। কাপড়ের অভাবে তার শরীরের নিম্নাংশ ঘাস-পাতা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল।
হাদিসে বর্ণনা মতে, তাঁর দাফনের সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করেছিলেন-
‘মুমিনদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২৩)
হজরত মুসাআব রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন ওয়াদা পালনকারীদের একজন।
সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুখে মুখে ভালোবাসা নয়, বরং তার জীবন-দর্শনের আলোকে পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ করাই হলো আশেকে রাসুলদের মূল পরিচয়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা হোক মুসলিম উম্মাহর প্রতিজ্ঞা।
আল্লাহ তাআলা হজরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। আল্লাহ তাআলা হজরত মুসআব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা মুসলিম উম্মাহকে দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম