যে সাক্ষাৎ শেষে বিদায় হওয়ার আগেই ক্ষমা পায় মুমিন
পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময় ইসলামে ইবাদত ও সাওয়াবের কাজ। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজের অনেক বড় সাওয়াব ঘোষণা করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত বারাআ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা্লাম বলেছেন, দুই জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে (তারা) পরস্পর বিচ্ছিন্ন (বিদায়) হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (আবু দাউদ)
মানুষ সামাজিক জীবন। আর সমাজ জীবনে চলতে গেলে নানা কারণে একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে হয়। তাই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে পরস্পরকে মুসাহাফা করার নসিহত পেশ করেছেন। ঘোষণা করেছেন মুসাফাহার ফজিলত।
কোনো মুসলিম অপর কোনো মুসলিমের সঙ্গে দেখা হলে যদি হাসি মুখে কথা বলে, তাতেই তার জন্য রয়েছে সাদকার সাওয়াব। তাই সামাজিক জীবনে মিলেমিশে থাকার পাশাপাশি প্রয়োজনে একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর তাহলো-
> দেখা-সাক্ষাতে সালাম বিনিময়
সালাম বিনিময়ে মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে। প্রিয় নবি বলেন-
‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ঈমানদার হতে পারবে না পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি না হলে। আমি কি তোমাদের এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম)
> মোসাফাহা করা বা হাত মেলানো
সালাম বিনিময়ের পর পরস্পর মোসাহাফা করা। কেননা মোসাহাফা করে বিদায় নেয়ার আগে তাদের উভয়কে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত বারাআ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সা্লাম বলেছেন, দুই জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে (তারা) পরস্পর বিচ্ছিন্ন (বিদায়) হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (আবু দাউদ)
> একে অপরকে অভিনন্দন জানানো
পরস্পর সাক্ষাতে এক মুসলিম অপর মুসলিমকে অভিনন্দন জানাবে। একে অপরকে সম্মান করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘মদিনার বনু কুরাইজার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডেকে পাঠান। হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি গাধায় চড়ে আসেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নেতা সাদের দিকে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাও।’ (মুসলিম)
> হাসিমুখে মিলিত হওয়া
পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় হাসি মুখে মিলিত হওয়া। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাম হাসি মুখে সাক্ষাতকে সাওয়াবের কাজ বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোনো ভালো কাজকে ছোট মনে করবে না, যদিও তা অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাতের ব্যাপারেই হোক না কেন।’ (মুসলিম)
> দৃষ্টি সংযত করা
মাহরাম ছাড়া কোনো নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে তাকাবে না। তাদের দৃষ্টির হেফাজত করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘মুমিনদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩০)
এমনকি মাহরাম ছাড়া অন্য কোনো নারীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমাদের কেউ যেন কোনো (বেগানা) নারীর সঙ্গে নির্জনে না বসে। কেননা শয়তান তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে যায়। (সে তাদের কুমন্ত্রণা দেয়)।’ (তিরমিজি)
> সাক্ষাতে মাথা নত না করা
কারো সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হলেই তার সম্মানে মাথা নত করা কিংবা সেজদা করা যাবে না। হাদিসে এসেছে-
‘এক ব্যক্তি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কেউ যখন ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে, তখন কি মস্তক (মাথা) অবনত করবে? প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘না’, (নত বা সেজদা করা যাবে না) কিন্তু মোসাহাফা করবে।’ (ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দেখা-সাক্ষাতে মোসাহাফা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত মোসাহাফার ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর