ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

সাওয়াব লাভে নিয়ত যে কারণে জরুরি

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০১৯

ছোট ছোট বিন্দু মিলে যেমন মহাসিন্ধু তৈরি হয় তেমনি ছোট ছোট আমলের দ্বারা সহজে আল্লাহর নেয়ামত লাভ হয়। মানুষ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ নেয়ামত লাভ করে। তবে আল্লাহর এসব নেয়ামত লাভে নিয়ত ও তার বিশুদ্ধতা জরুরি।

হাদিসে কুদসি প্রমাণ করে বহু আমলধারী লোক সারা জীবন আমল করা সত্বেও জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপিত হবে। যার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র নিয়তের বিশুদ্ধতার অভাব।

নিয়ত বলতে আমরা কী বুঝি?
নিয়ত হচ্ছে মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। যা মানুষের মনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আর বিশুদ্ধ নিয়ত হচ্ছে কোনো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে সফলতা লাভ করা।

তাই মুমিন বান্দা চাইলে তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব কাজকেই নেকির কাজে পরিণত করতে পারে। ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি নিয়তের হাদিস দ্বারাই শুরু করেছেনবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারি-
হজরত আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লাইসি থেকে বর্ণিত, আমি হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় প্রত্যেক কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া অথবা কোনো মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যে জন্যে সে হিজরত করেছে। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কারো বাহ্যিক অবকাঠামো ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না। আল্লাহ তার বান্দার অন্তরের দিকে এবং কর্মের দিকে লক্ষ্য করেন।’ (মুসলিম)

হাদিসে কুদসি থেকে জানা যায়, যার নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন যে ব্যক্তির ওপর সর্বপ্রথম ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি শহিদ। তাকে ডাকা হবে এবং তার ওপর আল্লাহর দেয়া নেয়ামতগুলো একে একে স্মরণ করানো হবে।
অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি এসব নেয়ামত ভোগ করেছিলে? সে স্বীকার করে নিবে। বলবে, হ্যাঁ, এসব নেয়ামত আমি ভোগ করেছি। তখন আল্লাহ বলবেন, ওই সব নেয়ামতের শোকরিয়ায় তুমি কী আমল করেছ?
সে বলবে, আমি আপনার রাস্তায় লড়াই করে শাহাদাতবরণ করেছি।
আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ; তুমি তো এই জন্য লড়াই করেছ, যেন তোমাকে লোকে বীর বলে ডাকবে।দুনিয়াতে তো তা দেয়া হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আনা হবে-
যে নিজে ইলম শিখেছে, কুরআন পড়েছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে। তাকেও পূর্ববর্তী ব্যক্তির মতো আল্লাহর নেয়ামতগুলো স্মরণ করানো হবে এবং সে তা স্বীকার করে নিবে।
আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন করবেন, এর প্রতিদানে তুমি কী আমল করেছ?
সে বলবে, আমি তোমার জন্য ইলম শিখেছি, কুরআন পড়েছি এবং অপরকে শিখিয়েছি।
আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি তো এই জন্য ইলম শিখেছ যাতে লোকে তোমাকে আলেম বলে, কুরআনের ক্বারি বলে। দুনিয়ায় তা তো বলা হয়েছে।
অতঃপর তাকে আল্লাহর নির্দেশে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর তৃতীয় ব্যক্তিকে আনা হবে-
যাকে আল্লাহ তায়ালা স্বচ্ছলতা দিয়েছেন ও সর্বপ্রকার সম্পদ দান করেছেন,। তাকে আল্লাহর নেয়ামতের কথা জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে।
আল্লাহ বলবেন, তুমি, এর প্রতিদানে কী আমল করেছ?
সে বলবে, যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন, এমন কোনো খাত বাকি নেই, যেখানে আমি খরচ করিনি।
আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ; বরং তুমি তা করেছ যেন লোকে তোমাকে দানবীর বলে। অতএব তোমাকে দানশীল বলা হয়েছে।
অতঃপর তার ব্যাপারে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে। তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম ও নাসাঈ)।

নিয়তের বিশুদ্ধতা ও মর্যাদায় হাদিসের ঘোষণা
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ বলেন- আমার বান্দা যখন কোনো পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না, যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে তবে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে (আল্লাহর ভয়ে অন্যায়) ত্যাগ করে, তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসাবে লিখ।
আর যদি সে নেকি (ভালো কাজ) করার ইচ্ছা করে কিন্তু তা সে করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসাবে লিখ। অতপর যদি সে তা (কাজটি) করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাত শ’ গুণ পর্যন্ত লিখ। (বুখারি, মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে-
যে কানো ভালো কাজের নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গেই সাওয়াব শুরু হয়ে যায়। আবার কাজ ভালো কিন্তু নিয়ত বিশুদ্ধ নয়, তবে সে কাজেও সফলতা আসবে না বরং তাকে কঠিন জাহান্নামে নিক্ষেপ হতে হবে।

সুতরাং মানুষের উচিত প্রথমে নিয়ত ঠিক করা। অতঃপর আমল করা। যদি নিয়ত ঠিক হয় তবে আমলও পাওয়া যাবে পরিপূর্ণ। আর যদি নিয়ত ঠিক না হয় তবে ভালো কাজেও সাওয়াব পাওয়া যাবে না বরং তার জন্য জাহান্নামের আজাব সুনিশ্চিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়ত বিশুদ্ধ করার তাওফিক দান করুন। পরিশুদ্ধ নিয়ত ব্যতিত ভালো কাজ করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। যে কোনো ভালো কাজের নিয়তের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। নিয়ত শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন