সততার পুরস্কার এমনই হয়…
ফেসবুকের টাইমলাইনে থাকা ছোট ৪টি বাক্যের একটি শিরোনাম দেখে তা পড়তে উৎসাহবোধ করলাম। শিরোনামটি ছিল হুবহু এমন- ‘গল্পটা সংগৃহীত। তবে সত্যিই দারুণ শিক্ষণীয়। সে কারণেই টাইমলাইনে রেখে দিলাম। পড়ে দেখতে পারেন....।
গল্পটি পড়ে বুঝলাম এটি সততার একটি গল্প। এখানে ওঠে এসেছে একজন সৎ মানুষের গল্প। আবার একজন মানুষের সৎ হওয়ার গল্প। যে সততার কারণে সে মানুষটি হয়েছিল নাম-ঠিকানাবিহীন স্বনামধন্য একটি কোম্পানির সিইও।
সত্যিই এটি ছিল শিক্ষণীয় একিট গল্প। যা মানুষকে সৎ ও পরিশ্রমী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলতে সহায়তা করবে। তাই গল্পটি তুলে ধরা হলো-
ষাটোর্ধ্ব একজন সিইও অবসর নেয়ার আগে তার স্বনামধন্য কোম্পানির উত্তরাধিকার হিসেবে একজন সৎ ও যোগ্য সিইও নির্বাচন করতে চাইলেন।
তবে চিরায়ত নিয়মে তিনি তার পরিচালক পর্ষদ বা ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে কাউকে উত্তরাধিকার না করে ভিন্নধর্মী কিছু করার চিন্তা করলেন।
সিইও’র ঘোষণা
তাই একদিন সকল এক্সিকিউটিভদের বললেন- ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাদের মধ্য থেকে একজন পরবর্তী সিইও নিয়োগ করবো।’
এ কথা শুনে তো সবাই হতবাক! তবে আবার খুশিও হলো। সিইও হওয়ার স্বপ্নে তাদের মন উৎফল্লিত হলো।
তিনি বলে চললেন ‘আমি আপনাদের প্রত্যেককে একটি করে ‘বীজ’ দেব। এই বীজ আপনারা টবে রোপণ করবেন, পানি দেবেন, যত্ন করবেন। আর ঠিক এক বছর পর তা আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আমি তখন সেই বীজ থেকে বেড়ে ওঠা চারাগাছ দেখেই সিদ্ধান্ত নেব, কে হবেন পরবর্তী সিইও?’
বীজের পরিচর্যা-
উপস্থিত এক্সিকিউটিভদের মধ্যে অলিভার নামে একজন ছিল। যে অন্য সবার মতোই বীজ নিয়ে বাসায় ফিরলেন। বীজটি রোপণ করার জন্য তার স্ত্রী একটি টব, মাটি ও সার জোগাড় করলো এবং সেই টবে অলিভার বীজটি রোপণ করলেন।
প্রতিদিন সে বীজটির খুব যত্ন করতে লাগলেন। নিয়মিত পানি দিতে থাকলেন।
সপ্তাহ তিনেক পর তার সহকর্মীরা তাদের বীজ থেকে বেড়ে ওঠা চারাগাছ সম্পর্কে বলাবলি করতে লাগল। কিন্তু হায়! অলিভারের বীজ থেকে তো কিছুই জন্মাচ্ছে না। এভাবে তিন-চার-পাঁচ সপ্তাহ পার হয়ে গেল। তিনি নিজেকে ব্যর্থ ভাবতে শুরু করলেন।
বীজ থেকে চারাগাছ না জন্মানোর কারণ তিনি নিজ ভাবনা থেকে বললেন, ‘সম্ভবত আমি রোপণের সময়ই বীজটি নষ্ট করে ফেলেছি।’ তাই সে তার সহকর্মীদের সঙ্গে লজ্জায় এ বিষয়ে কোনো কথাও বলতেন না।
এক বছর পর...
অবশেষে একটি বছর অতিবাহিত হলো। কোম্পানির সব এক্সিকিউটিভরা তাদের বড় হওয়া সুন্দর সুন্দর চারাগাছের টবগুলো তাদের সিইও’র কাছে নিয়ে এলো।
কিন্তু অলিভার কী করবেন? তার টবে তো কোনো চারাগাছ জন্মায়নি। চারাগাছ ছাড়া খালি টব নিয়ে অফিসে যাওয়াও মান-সম্মানের বিষয়। আবার চারাগাছ না জন্মানোর কারণে চাকরি চলে যায় কি-না এ ভয়ও রয়েছে অলিভারের মনে।
কিন্তু অলিভারের স্ত্রী তাকে সৎ থাকতে পরামর্শ দিলেন এবং খালি টব নিয়েই সিইও’র কাছে যাওয়ার কথা বললেন। যা সত্য তাই সিইওকে বলার পরামর্শ দিলেন। অলিভার বিব্রত ও দুশ্চিন্তায় থাকা সত্ত্বেও খালি টব নিয়ে যেতেই রাজি হলেন।
অলিভার আজ খুবই বিব্রত। এই দুশ্চিন্তায় অলিভার অসুস্থতা বোধ করতে থাকলেন। তবে ভরসা রাখলেন স্ত্রীর কথার ওপর। সিইওকে সত্য বলতে স্ত্রীর পরামর্শকেই গ্রহণ করলেন।
খালি টব নিয়ে অলিভার
সে তার খালি টব নিয়ে বোর্ডরুমে ঢুকেই দেখলেন সবার টবে কী সুন্দর সুন্দর গাছ! অলিভার তার টবটি রুমের মেঝেতে রাখলেন। আর এতে অনেকেই হাসাহাসি করলেন আবার কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করলেন।
সিইও বোর্ডরুমে এসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরো রুম পরিদর্শন করলেন। আর বললেন, ‘ও মাই গড! আপনারা কী সুন্দর চারাগাছ ও ফুল জন্মিয়েছেন।’
হঠাৎ তার (সিইও) চোখ গিয়ে পড়লো অলিভারের দিকে। অলিভার লজ্জায় পেছনে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সিইও অলিভারকে সামনে আসতে বললেন।
অলিভার খুব বিব্রত ও ভীত হয়ে পড়লেন। ভাবলেন নির্ঘাত সে আজ তার চাকরি হারাবেন।
সিইও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার অলিভার? আপনার বীজের কি হয়েছে?
অলিভার সিইওকে বীজ রোপণ ও পরিচর্যার সত্য ঘটনা খুলে বললেন। সিইও সবাইকে বসতে বললেন। আর শুধু অলিভারকে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন।
সিইও নির্বাচন
সিইও অলিভারের দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আপনার আমাদের নতুন সিইওকে ভালো করে দেখুন, তার নাম অলিভার!’
অলিভার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না! তার টবে তো কোনো চারাগাছ জন্মায়নি।
সবাই একে অপরের দিকে তাকাতে থাকলো। তারাও বুঝলো না, অলিভার কীভাবে সিইও হলো?
যে সততায় অলিভার সিইও নির্বাচিত হলো-
সিইও বললেন, ‘এক বছর আগে আমি প্রত্যেককে যে বীজ দিয়েছিলাম, তা সবই ছিল মৃত। কারণ সেগুলো ছিল সিদ্ধ করা বীজ। তাই সেগুলো থেকে কোনো চারাগাছ জন্মানোর সুযোগই ছিল না।
কোনো চারা জন্মাতে না দেখে হতাশ হয়ে আপনারা আমার দেয়া বীজটি ফেলে দিয়ে নতুন বীজ লাগিয়েছেন।
আর শুধুমাত্র অলিভারই সাহস ও সততার সঙ্গে সে মরা বীজের পরিচর্যা করেছিলেন।
চারাগাছ না জন্মালেও তিনি খালি টব নিয়েই এসেছেন। যে টবে আমার দেয়া বীজটিই রয়েছে।
সুতরাং সবাই অলিভারকে করতালি দিয়ে অভিনন্দিত করুন।’
মনে রাখবেন-
- যদি সততা রোপণ করেন, তবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবেন।
- যদি সৎ গুণ রোপণ করেন, তবে ভালো বন্ধুত্ব অর্জন করবেন।
- যদি কঠোর পরিশ্রম রোপণ করেন, তবে সাফল্য অর্জন করবেন।
- যদি সুবিবেচনা রোপণ করেন, তবে আপনি যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবেন।
সুতরাং আপনি কী রোপণ করছেন; সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আর তা-ই নির্ধারণ করে দেবে ভবিষ্যতে আপনি কী অর্জন করবেন। জীবনকে আপনি যা দিবেন, জীবন আপনাকে তাই ফেরত দেবে।
ফেসবুকের টাইম লাইনের রাখা এ গল্পটি সত্যি শিক্ষণীয়। সততা ও পরিশ্রমই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৎ ও পরিশ্রমী হওয়াই হোক জীবনের লক্ষ্য।
এমএমএস/এমএস