কুরআন সংরক্ষণের অগ্রসেনানী জায়েদ ইবনে সাবিত
আল্লাহ তাআলার ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআন। যা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিশ্বমানবতার কল্যাণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিল হয়েছিল। এ কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ ধারক, বাহক ও প্রচারক ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। কুরআনের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি নিবেদিত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত। কুরআন সংরক্ষণের যার ভূমিকা ছিল অনন্য।
হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের ভূমিকা ও সাহাবায়ে কেরামের ঐকান্তি প্রচেষ্টা ও মহান আল্লাহর রহমতেই আজো কুরআন অবিকৃত অবস্থায় দুনিয়ায় বিদ্যমান। যা মুসলিম উম্মাহর কাছে এক অনন্য আমানত। কুরআন সংরক্ষণের অগ্রসেনানী হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও কুরআন সংরক্ষণের ঘটনা তুলে ধরা হলো-
বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর কাছে আজ যে অবিকৃত ও অখণ্ড কুরআন রয়েছে, এ কুরআন প্রাপ্তিতে হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের অবদান সবচেয়ে বেশি। মাত্র ২২ বছর বয়সের জায়েদ পবিত্র কুরআনের আয়াত, সুরাগুলো সংরক্ষণ ও সংগ্রহে নিরলস কাজ করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের পর ১১ বছর বয়সে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি মদিনার বনু নাজ্জার গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন।
ছোটবেলাতেই হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত জ্ঞানচর্চায় বেশ মনোযোগি ছিলেন। বিশেষ করে ইসলাম গ্রহণের পর কুরআন মুখস্ত করাসহ ইলম অর্জনে তার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। কুরআন মুখস্তের প্রচেষ্টা ও ইলম অর্জনের আগ্রহ দেখে বিশ্বনবি তাঁকে কাতেবে ওহি তথা ওহি লেখকের মর্যাদা দেন। সে সময় থেকে আজও তিনি বিশ্বব্যাপী কাতেবে ওহি হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বনবি তার ক্ষুরধার মেধাশক্তি দেখেই তাকে ইয়াহুদিদের ধর্মগ্রন্থ শেখার নির্দেশ দেন। মাত্র ১৫ দিনে তিনি ইয়াহুদিদের পুরো ধর্মগ্রন্থ আত্মস্থ করে নেন। অতঃপর তিনি হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতকে সুরিয়ানি ভাষা শেখার নির্দেশ দেন।
ইলম শেখার এ আগ্রহ, প্রখর মেধাশক্তি ও জ্ঞানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে শায়খুল কুররা এবং মুফতিউল মাদিনা বলা হতো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে তিনি পুরো কুরআন মুখস্ত করেন এবং বিশ্বনবির ইন্তেকালের বছর জায়েদ ইবনে সাবিত বিশ্বনবিকে দুইবার পুরো কুরআন পাঠ করে শোনান।
হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতই বিশ্বনবির ইন্তেকালের আগে সর্বশেষ বিশ্বনবিকে পুরো কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান। তখনও কুরআন লিপিবদ্ধ আকারে ছিল না। তখন সাহাবায়ে কেরামের সিনায় তথা হাফেজে কুরআনের বুকে পবিত্র কুরআন সংরক্ষিত ছিল। কুরআনের পাণ্ডুলিপিগুলো যা কিছু লেখা ছিল, তাও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগে বিভিন্ন যুদ্ধে হাফেজ সাহাবিদের শাহাদাতবরণ বিজ্ঞ সাহাবিদের চিন্তিত করে তোলে।
অবশেষে হজরত ওমর ও হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কুরআন সংরক্ষণের জন্য জোর তাগিদ দেন।
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরআন সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব হজরত জায়েদ ইবনে সাবিতের ওপর অর্পন করেন।
খলিফা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জায়েদ ইবনে সাবিতকে লক্ষ্য করেন বলেন, ‘নিশ্চয় তুমি একজন বুদ্ধিমান যুবক। তোমার ব্যাপারে আমরা কোনো মন্দ ধারণা পোষণ করি না।
হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের এ আস্থা অটুট রেখে পবিত্র কুরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন।
কুরআন সংরক্ষণের গুরুদায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে হজরত জায়িদ ইবনে সাবিত বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! যদি আমাকে কোনো পাহাড় স্থানান্তর করার দায়িত্ব দেয়া হতো, তবে তা আমার কাছে কুরআন সংরক্ষণের চেয়ে অনেক সহজ হতো।
পবিত্র কুরআন সংকলনের জন্য হজরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলা জামেউল কুরআন। কুরআন বিশেষজ্ঞ ১২ সাহাবার সমন্বয়ে এক কমিটি গঠন করে পবিত্র কুরআন সংকলন চূড়ান্ত করেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু সে বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
কুরআন সংরক্ষণের অনন্য ভূমিকা পালনকারী হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত ৪৫ হিজরিতে পবিত্র নগরী মদিনায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা ডাকে সাড়া দিয়ে চলেগেছেন পরকালের সুন্দর ভুবনে।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর নেক আমলের ফায়েজ ও বরকত মুসলিম উম্মাহকে দান করুন। মুসলিম উম্মাহকে বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে নিজেদের ঈমান বাড়ানোসহ কুরআনের সমাজ বিনির্মাণের হিম্মত দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম