যে গুণে মুমিনের জান্নাত সুনিশ্চিত
জান্নাত মুমিনের অতিরিক্ত পুরস্কার। মুমিনের আসল প্রতিদান হলো মহান আল্লাহর সান্নিধ্য বা দিদার। যে ব্যক্তি বা যাদের সঙ্গে মহান আল্লাহর দিদার হবে কিংবা যে মুমিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবে তার জন্য ‘জান্নাত’ অতিরিক্ত পুরস্কার মাত্র। এ পুরস্কার লাভের ছোট্ট একটি গুণ হলো প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা।
আল্লাহ প্রেমিক অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, আমি সে জান্নাতে যেতে চাই না যেখানে মিলবে না আল্লাহর দিদার বরং আমার জন্য সে জাহান্নামই শ্রেষ্ঠ যেখানে থাকবে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য বা দিদার।’
মুমিন ব্যক্তি যখনই নিজেকে আল্লাহর প্রেমে একাকার করে দিতে পারবে তখনই তার জন্য পরকালের সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। চিরস্থায়ী বসবাসের স্থান জান্নাত হয়ে যাবে সুনিশ্চিত।
কে পাবে এ জান্নাত?
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’
হাদিসের আলোকে কোনো মুমিন বান্দা যদি অল্প কিংবা একটি আমল বা গুণ যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরে তার জন্য আল্লাহর নৈকট্য অর্জন একেবারেই সহজ হয়ে যায়।
এমনই একটি সহজ আমল বা গুণ হলো মুক্তাকি হওয়া বা আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করা। আর এ ঘোষণা এসেছে পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ বলেন-
‘আর জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে মুত্তাকিদের জন্য, (সেখানে) কোনো দূরত্ব থাকবে না। এরই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল প্রত্যেক (আল্লাহ) অভিমুখী, (তাঁর হুকুমের) হিফাজতকারীর জন্য। যারা না দেখে পরম দয়াময়কে ভয় করে এবং (আল্লাহ) অভিমুখী ক্বলবে (অন্তর নিয়ে) উপস্থিত হয়।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ৩১-৩৩)
যারা আল্লাহকে ভয় করে। যে ভয় নিজেদের রাখে পাপমুক্ত। তাদের জন্য জান্নাতকে রাখা হবে খুব কাছে। পরকালের বিচার দিবসে হাশরের ময়দান থেকেই দেখা যাবে এ জান্নাত। তখন জান্নাতের দিকে ইশারা করে বলা হবে, দুনিয়াতে তোমাদেরকে যে জান্নাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, এটিই সেই জান্নাত।
এ আয়াতে মুত্তাকি হওয়ার ৪টি উপায় তুলে ধরা হয়েছে। যার দুটি প্রকাশ্য আর দুটি গোপনীয়। প্রকাশ্য উপায় দুটি তখনই সফলতা লাভ করবে, যখন গোপনীয় দুটি উপায়ে মানুষ নিজেকে তৈরি করে নেবে।
প্রকাশ্য বা বাহ্যিক উপায়
তাকওয়ার গুণ লাভে মানুষের দুটি উপায় প্রকাশ্য বা দৃশ্যমান। যা দেখা যায়। অন্যায় বা গোনাহ করলে যেমন দেখা যায় তেমনি মানুষের গোনাহমুক্ত জীবন-যাপনও প্রকাশ পায়।
> ‘আওয়াব’ বা প্রত্যাবর্তনকারী
আল্লাহর দিকে খুব বেশি ফিরে আসা। গোনাহ হয়ে গেলেই তাওবা করে ফিরে আসা। অত্যাধিক তাওবা-ইসতেগফার এবং তাসবিহ-তাহলিল ও জিকির-আজকার করা। ঘটে যাওয়া গোনাহের কথা স্মরণ করে নির্জনে আল্লাহর দরবারর মিনতি করে ফিরে আসা।
> ‘হাফিজ’ বা নিজেকে সংরক্ষণকারী
নিজেকে বিশুদ্ধ রাখা। গোনাহমুক্ত রাখা। কোনো মানুষই জন্মের সময় পাপ বো গোনাহ নিয়ে জম্মায়নি কিংবা অপরাধী হয়ে জন্মায়নি। মানুষ যেভাবে জন্ম নিয়েছে ঠিক সেভাবে নিজেকে সংরক্ষণ করা।
আবার এ সংরক্ষণ দ্বারা মহান আল্লাহ বিধানকে সংরক্ষণ করার কথাও বলা হয়েছে। তাই নিজেকে সংরক্ষণ করা কিংবা মহান আল্লাহর বিধানকে সংরক্ষণ করার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন ও গোনাহমুক্ত জীবন গঠন করাই অন্যতম উদ্দেশ্য।
অপ্রকাশ্য বা গোপনীয় উপায়
মানুষের প্রকাশ্য বা বাহ্যিক উপায় অবলম্বন করা তখনই সফল হবে যখন অপ্রকাশ্য উপায় দুটি মানুষ যথাযথ পালন করতে পারবে। আর তাহলো-
> আল্লাহকে না দেখে ভয় করা
‘মান খাশিয়ার রাহমানা বিল গাইবি’ অর্থাৎ রহমানকে না দেখে ভয় করে অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহকে দেখেনি কিন্তু তাকে ভয় করে। আল্লাহ যেমন দয়াময় তেমনি তিনি কাহহার বা পরাক্রমশালী।
যদিও আল্লাহকে ক্ষমতা ও কঠোরতায় ভয় করার কথা। তথাপিও মানুষ পরাক্রমশালী আল্লাহকে এ গুণে ভয় না করে বরং দয়াময় আল্লাহকে ভালোবাসায় হৃদয় দিয়ে ভয় করবে।
> আল্লাহমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হওয়া
দয়াময় আল্লাহকে ভয় করার জন্য কালবে মুনিব তথা আল্লাহমুখী ক্বলব বা অন্তর নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হওয়া। একনিষ্ঠ অন্তর নিয়ে আল্লাহর দিকে অগ্রসর না হলে তা তার ভালোবাসা বা নৈকট্য পাওয়া যাবে না।
সুতরাং যখনই কোনো বান্দার মধ্যে ভালোবাসামিশ্রিত ভয় এবং আল্লাহমুখী অন্তরে নিয়ে তার দিকে উপস্থিত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, তখনই সেখানে পাওয়া যাবে প্রকাশ্য উপায় ‘আওয়াব ও হাফিজ’।
উল্লেখিত ৪টি উপায়ের সমষ্টিতেই তৈরি হয় একটি গুণ ‘তাকওয়া’। তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিই হলেন মুত্তাকি। আর মুত্তাকি ব্যক্তিই মহান আল্লাহকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে ভালোবাসে।
তাই আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভে কুরআনের নির্দেশিত উপায়ে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা জরুরি। যা মানুষ সকাল-সন্ধ্যাসহ সব সময় পড়তে থাকবে। আর তাতে হয়ে উঠবে মুত্তাকি। মুত্তাকি ব্যক্তিই সব সময় তাওবা-ইসতেগফারে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে-
> সব সময় ইসতেগফার পড়া-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।
আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
মানুষের মনে রাখা জরুরি
> সব সময় আল্লাহকে ভয় করে চলা।
> আল্লাহর ভয়ে নিজেকে হাফিজ তথা বিশুদ্ধ রাখা।
> আল্লাহর বিধান মেনে চলা।
> বেদায়াতমুক্ত হয়ে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
> বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।
> সকাল-সন্ধ্যা সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া।
> ভালোবাসার সঙ্গে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করা এবং
> একনিষ্ঠ অন্তর নিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
তবে ই আল্লাহ বান্দাকে দান করবেন তার দিদার ও চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত। পাবে জান্নাতের সব নেয়ামত। যে কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-
‘তোমরা সেখানে শান্তিতে প্রবেশ কর এবং এটিই চিরকালের আবাসস্থলে প্রবেশের দিন। জান্নাতে যা তাদের মনে চায় সব পাবে এবং আল্লাহর কাছে আছে আরো বেশি।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ৩৪-৩৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে তার নৈকট্য ও জান্নাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম