মুসলিম নির্যাতন প্রতিরোধে ভারতীয় আলেম ও নেতাদের নির্দেশ
ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর দেশটিতে মুসলমানদের ওপর চলছে অত্যাচার-নির্যাতন। জোরপূর্বক ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বল প্রয়োগ ও নিরাপরাধ মুসলিম কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধদের পিটিয়ে জখম করে চলেছে।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে জমিয়তে ওলামা হিন্দের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাইয়্যেদ মাহমুদ মাদানি উগ্র কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নির্যাতন প্রতিরোধে মুসলমানদের আত্মরক্ষা ও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মাহমুদ মাদানি এক ভিডিও বার্তা বলেন, ‘মুসলমানদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। উগ্রপন্থীদের কাছে হার মানার কোনো কারণ নেই। এতে তারা (উগ্রপন্থীরা) আরও উৎসাহিত হয়ে ওঠবে। নিজেকে রক্ষা করার অধিকার সবার আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোথাও কোনো সমস্যা হলে তা এড়িয়ে যাবেন। উগ্রপন্থী হিন্দুদের সঙ্গে প্রথমেই বিরোধে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু সে সমস্যা থেকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে নিজেকে রক্ষা করুন।
ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, মুসলিম যুবকদের বলব, সাহস সঞ্চয় করুন। প্রয়োজনে তাদের সাবধান করে দিন। যদি একাও আক্রান্ত হন তবুও সেখান থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না। যুক্তি তর্কের মুখোমুখি হলেও নিজের মেধা খাটাতে দ্বিধা করবেন না। যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি হাসি মুখে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুত থাকুন।
সর্বোপরি আত্মরক্ষার সব প্রচেষ্ট ব্যর্থ হলে জীবন-মৃত্যুর ভয় করবেন না। কেননা ভয় পেলেই উগ্রপন্থীরা সুযোগ নেবে। তারা নির্যাতনের সাহস পেয়ে যাবে। তাই নিজের আত্মরক্ষার অধিকারেই প্রতিরোধের চেষ্টা করুন।
দলীয় সভায় আরশাদ মাদানি
এদিকে গত ৪ জুলাই দলীয় বৈঠকে জমিয়তে ওলামা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, ‘মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় দেশের সংবিধান প্রশ্নবিদ্ধ। বিচার ব্যবস্থা উপর তৈরি হচ্ছে মানুষের অনাস্থা। সুপ্রীম কোর্টের স্পষ্ট আদেশ সত্ত্বেও মুসলিমদের উপর গণহত্যা, নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি ১৯৪৭ সালের চেয়ে আরও খারাপ ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের ১৭ জুলাই সুপ্রীম কোর্ট এক আদেশে স্পষ্ট বলেছে, যে কেউ নিজের হাতে আইন নিতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য সংসদে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। অথচ মুসলিম নির্যাতনের ঘটনা ক্রমাগত ঘটছে। সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশের পর প্রায় ৫৬ জন মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো এ ধরনের মুসলিম নির্যাতন বন্ধ হয়নি। ঝাড়খণ্ডের ঘটনায় ইতোমধ্যেই হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামি শরিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন কোনো আইন গ্রহণ করা হবে না এ দেশে।
বিধানসভায় মমতা
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মাদ্রাসা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডির বিরূপ মন্তব্যের জেরে বিধান সভায় কেন্দ্রের প্রতি তোপ দাগেন।
মমতা ব্যনার্জি বলেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, গত ২৮ জুন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল সীমান্তবর্তী মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদেরকে মৌলবাদ বা জিহাদি কার্যকলাপ শেখানো হচ্ছে কি না।
জবাবে আমরা জানিয়েছিলাম, এমন কোনো প্রশ্নই নেই।
কিন্তু কেন্দ্র এ রিপোর্টকে সংসদে উত্থাপনই করেনি, বরং তাদের নিজেদের মতো করে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তারা (কেন্দ্র) কিভাবে আমাদের অভিমতকে উপেক্ষা করে তাদের মতামতকে তুলে ধরে? আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। এটা পুরো একটা সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ধর্মের ভিত্তিতে কেউ কাউকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিতে পারে না। সন্ত্রাসবাদ কখনও জাতি-বর্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। যেটা সন্ত্রাসবাদ সেটা সন্ত্রাসবাদই। একজন চোর-চোরই হয়। যদি এরকম কোনো ঘটনা ঘটে তবে কেন্দ্র তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করাটা একদমই ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, ওলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারি মাহমুদ মাদানি নির্বাচনে জয় লাভের পর নরেন্দ্র মোদিকে মুসলমানদের বিষয়ে সর্তক করে চিঠি পাঠিয়েছেন, ‘ওই চিঠিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সব নাগরিককে এক দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানান।
ধর্মীয় উগ্রতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা আশা করছি আপনি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন। যাতে মুসলমানরা ভারতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ধর্মীয় উগ্রতার কারণে মুসলমানরা ভীতসন্ত্রস্ত না হয়।
এমএমএস/জেআইএম