শবে কদর পেতে রমজানের শেষ দশকে করণীয়
বিশ্বব্যাপী বহুল প্রচলিত একটি তারিখ ২৭ রমজান। এ রাতকে লাইলাতুল কাদর বা শবে কদর হিসেবে জানে। প্রকৃত পক্ষে লাইলাতুল কদর নির্ধারিত কোনো রাতে হয় না। তা শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
লাইলাতুল কদরে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। এ কারণেই এ রাতের মর্যাদা অনেক বেশি। শবে কদরের ফজিলত ঘোষণায় আল্লাহ তাআলা পুরো একটি সুরা নাজিল করেছেন। আর তাতে বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’
মুমিন মুসলমান এ রাতটি পেতে উদগ্রীব থাকে। রাত জেগে নামাজ, জিকির-আজকার, ইবাদত-বন্দেগি ও কুরআন তেলাওয়াতে নিয়োজিত থাকে। লাইলাতুল কদর তালাশ ও ইবাদত বন্দেগিতে মুমিন মুসলমানের জন্য রয়েছে বেশ কিছু করণীয়। আর তাহলো-
>> কদর তালাশ
রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতেই কদর তালাশ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’
>> কুরআন তেলাওয়াত
এ রাতেই নাজিল হয় পবিত্র কুরআন। তাই কুরআন তেলাওয়াত ও এর বিধান পালনের মাধ্যমেই এ রাত অতিবাহিত করা। কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগিতে শেষ দশক অতিবাহত করা।
আরও পড়ুন > সালাতুত তাসবিহ পড়বেন যেভাবে
>> গোনাহ মাফ চাওয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। তাই মুমিন মুসলমান রমজানের শেষ দশকে এ দোয়া বেশি বেশি পড়বে-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ`ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ`ফওয়া; ফা`ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
>> কল্যাণের দোয়া করা
হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রাত লাইলাতুল কদর। এ রাতের হক হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি মানুষের দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা। যাতে এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন। দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান করেন।
>> জ্ঞানার্জন করা
রমজান এবং কদর ছাড়াও জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব অত্যাধিক। তাই এ রাতে জ্ঞানার্জনের জন্য কুরআন ও হাদিসের পেছনে কিছু সময় ব্যয় করা। যে সামান্য সময়ের মর্যাদা অনেক বেশি।
>> কাযা নামাজ পড়া
বিভিন্ন কারণে বছরজুড়ে মানুষের অনেক নামাজ কাজা হয়ে যায়। অনেকে আবার সফরে থাকার কারণে নামাজ আদায় করতে পরেনা। তাই রমজানের শেষ ১০ দিন কদর তালাশে প্রতিদিন ১৭ রাকাআত ফরজ নামাজের কাযা আদায় করা উত্তম।
যদি কেউ কদরের রাত পেয়ে যায়, আর সে রাতে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের কাযা নামাজ আদায় করে তবে তার জীবনের হাজার মাসের ছেড়ে দেয়া নামাজগুলোর কাযা আদায় হয়ে যাবে।
>> অতিরিক্ত না ঘুমানো
রমজানের শেষ দশকের ইবাদাত-বন্দেগি ও ই’তিকাফের জন্য বিশ্বনবি কোমরে কাপড় বেধে লেগে যেতেন। কারণ একটাই- লাইলাতুল কদর তালাশ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। কারণ শেষ দশকের যে কোনো বিজোড় রাতেই লাইলাতুল কদর নিহিত থাকে।
>> অধিক খাবার গ্রহণ না করা
রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগি করতে সুস্থ সবল দেহ ও মন প্রয়োজন। মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেশি খাওয়ার ফলে ঘুম ও ক্লান্তিতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আরও পড়ুন > রমজানের শেষ দশকে শবে কদরে যে দোয়া বেশি পড়বেন
>> রসুম-রেওয়াজ ত্যাগ করা
২৬ রমজান দিবাগত রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ ভেবে রাতভর ইবাদত বন্দেগির রসুম-রেওয়াজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কুরআনের ভাষায়, ‘হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এ রাত’ রমজানের শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের শেষ দশকে নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন, দান-খয়রাত, মা-বাবার খেদমতসহ ভালো কাজের মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদর তালাশ করার তাওফিক দান করুন। শবে কদরের ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর