ভালো কাজ করলেই কি তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য?
জীবনের সার্বিক বিষয়াবলী থেকে নিজেদের রক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নেক আমল তথা ভালো কাজ। যে ব্যক্তি নেক আমল তথা ভালো কাজ করবে; দুনিয়ার জীবনের সফলতার পাশাপাশি পরকালের সফলতা লাভ করবে এটাই আল্লাহ পাকের ঘোষণা।
এ নেক আমল তথা ভালো কাজ করলেই কী মানুষ মুক্তি পাবে? নেক আমল তথা ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কি আলাদা কোনো শর্ত প্রযোজ্য? ‘হ্যাঁ’ নেক আমল তথা ভালো কাজ করলেই জীবনের সব বিষয় থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা কিংবা দুনিয়া বা পরকালের সফলতা লাভ করা যায় না।
নেক আমল তথা ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, ঈমানবিহীন আমল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত নেক আমল তথা ভালো কাজ গ্রহণযোগ্য হতে সর্বপ্রথম ঈমান থাকা শর্ত।
আল্লাহ তাআলা সুরা আসরের ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং নেক আমল তথা ভালো কাজ করেছে।’ (সুরা আসর : আয়াত ২ ও ৩)
আমলে সালেহ বা নেক কাজের ভিত্তি হলো ঈমান। ঈমান ছাড়া ভালো কাজের ফল লাভ করা যাবে না। ভালো কাজটি যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন।
আরও পড়ুন > নেক আমল না থাকলেও আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করবেন
সাধারণত অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন
পাখা, মাইক, এয়ারকন্ডিশন, বাতি তথা বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কার ভালো কাজে ব্যবহার হয়। আর এ সবের অধিকাংশ আবিষ্কারক বিজ্ঞানী বিধর্মী। তাদের আবিষ্কৃত জিনিস মসজিদে ব্যবহার করা হয়। ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যবহার করা হয়। তাহলে তারা কি মানুষের ইবাদত-বন্দেগি থেকে সাদকায়ে জারিয়া পাবে না?
এ কথার জবাবে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, সব ভালো কাজের প্রতিদান তখনই পাওয়া যাবে, যখন ওই ব্যক্তির ঈমান থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘ঈমান এনে যেকোনো পুরুষ বা নারী আমলে সালেহ তথা ভালো কাজ করবে, আমি তাকে দান করবো উত্তম পবিত্র জীবন এবং তাদের পুরস্কার দেবো তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর ভিত্তিতে। (সূরা আন-নহল : আয়াত ৯৭)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ তথা ভালো কাজ করবে, তার জন্যে থাকবে সর্বোত্তম পুরস্কার এবং তার প্রতি আমার বিষয়গুলো বলবো সহজভাবে। (সূরা কাহফ : আয়াত ৮৮)
আমলে সালেহ বা ভালো কাজের বিবরণ
ঈমান লাভের পর যে কাজে ন্যূনতম ৪টি বিষয় পাওয়া যাবে তাকে আমলে সালেহ বা ভালো কাজ বলে ধরা হবে। আর তাহলো-
- ইলম বা জ্ঞান। অর্থাৎ যে কাজটি করা হচ্ছে, সে কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার হুকুম রয়েছে কিনা তা জানা।
- সবর।
- পরিশুদ্ধ নিয়ত।
- একান্ত আন্তরিকতা ও একনষ্ঠিতা।
হাদিসে পাকে আমলে সালেহ ৪টি কাজকে ভালো কাজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাহলো-
- আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা।
- নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
- জাকাত আদায় করা।
- রমজানের রোজা পালন করা।
সুতরাং আমলে সালেহ তথা ভালো কাজ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যখন মানুষ আল্লাহ তাআলার প্রতি অগাধ ও পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস লাভ করবে। আর তখনই মানুষের সব নেক আমল গ্রহণ যোগ্য হবে। কাজ যত ভালো ও কল্যাণকর হোক না কেন ঈমানবিহীন আমল কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ ঈমান লাভের তাওফিক দান করুন। ঈমান গ্রহণপূর্বক নেক আমল তথা ভালো কাজ করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম