নারীর নিরাপদ পথচলায় ইসলাম কী বলে?
নারীর নিরাপদ পথচলায় ধর্মীয় বিধান ও দিক-নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বচ্ছ বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন। বিবেক-বুদ্ধিকে সদা জাগ্রত রাখার জন্য কুরআনুল কারিমের অসংখ্য আয়াতে নারী-পুরুষ সবাইকে তাকওয়ার অধিকারী হতে বলেছেন। কারণ তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় মানুষকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন থেকে হেফাজত করে।
ঘরে-বাইরে, পাড়া-মহল্লায় কিংবা চলার পথে বিশ্বব্যাপী নারীরা অহরহ যৌন হয়রানিসহ নানা সমস্যায় পড়ছে। অথচ আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজকে নিরুৎসাহিত করেছেন। নারীদের কল্যাণে পুরুষরা যাতে নিজেদেরকে সংযত করে কুরআনে সে নির্দেশ প্রদান করছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
'হে রাসুল!) ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য অধিক পবিত্র।' (সুরা নুর : আয়াত ৩০)
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা কর্মনীতি পেশ করেছেন। জীবন পরিচালনায় এক দিকে যেমন পুরুষদেরকে নারীদের প্রতি কুদৃষ্টি ও ধ্যান-ধারণার নিষেধ করেছেন। আবার নারীদেরকে পুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন।
নারী-পুরুষ উভয়ের কল্যাণে আলাদা আলাদা আদেশ, নিষেধ, উপদেশ বর্ণনা করেছেন। শুধু পুরুষের জন্য আইন প্রণয়ন করে যেমন নারীর নিরাপদ পথচলা নিশ্চিত করা যাবে না। তেমনি নিরাপদ পথচলায় নারীর জন্যও রয়েছে করণীয়। ঘরের বাইরে নারীদেরকে শালিন ও সভ্য পোশাকে চলতে হবে। যাবতীয় উচ্ছৃঙ্খলতাও পরিহার করতে হবে। তাইতো আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে লক্ষ্য করে ঘোষণা করেন-
'হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য এমন পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে রাখবে এবং যা হবে (তোমাদের জন্য) ভূষণ। আর পরহেজগারির পোশাক, এটিই সর্বোত্তম।' (সূরা আরাফ : আয়াত ২৬)
আরও পড়ুন > ফেসবুকে অবাধ চ্যাটিং সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
পুরুষরা বেশির ভাগ সময় ঘরের বাইরে বিভিন্ন কাজে অবস্থান করে। তাদের এ অবস্থানকালীন সময়ে কোনোভাবেই যেন কোনো অন্যায় সংঘটিত না হয়। রাস্তার হক নষ্ট না হয়, আনন্দ-বিনোদনে নারীরা যাতে হেয় কিংবা আক্রমণের শিকার না হয়। সে জন্য কুরআন হাদিসে এসব নির্দেশনা ও তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। অগত্যা যদি রাস্তাঘাটে বসতেই হয়, তখন রাস্তার হক আদায় করবে। রাস্তার হক হলো- তোমরা তোমাদের চোখকে অবনত রাখবে, কাউকে কষ্ট দেবে না, কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেবে, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে।’ (বুখারি)
হাদিসের নির্দেশনায় চোখ নিচু রাখার অর্থই হলো কোনো নারী যেন তার কুদৃষ্টির শিকার না হয়। নারীর প্রয়োজনে পথ চলায় যেন কোনো হয়রানির শিখার না হয়।
বিশেষ করে নারীর নিরাপদ পথচলায় করণীয় হলো-
- কোনো নারীই ঘরের বাইরে উগ্র পদচারণা কিংবা চলাফেরা না করা। কোনো পর পুরুষের সঙ্গে আবেদনময়ী স্বরে কথা না বলা। ব্যক্তিগত পারিবারিক কিংবা চাকরির প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন রাস্তায় চলাফেরায় নম্র ও সতর্ক থাকতে হবে। অন্য পুরুষের (গায়রে মাহরাম) সঙ্গে আবেগ তথা দরদি স্বরে কথা না বলা সর্বোত্তম।
- সুস্থ সংস্কৃতি ও পারিবারিক বন্ধন, পরস্পরের প্রতি সঠিক মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখানোসহ সবক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা জরুরি। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষাই উচ্ছৃঙ্খল ও বেহায়াপনামুক্ত সমাজ উপহার দিতে পারে।
- পর্দার সঙ্গে পথচলা নারীর জন্য সর্বোত্তম কাজ। পর্দার বাস্তবায়নই নারী-পুরুষের পথচলা নিরাপদ ও নির্বিগ্ন করতে পারে। নারীদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত আর কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩১)
- এমনকি নবি পত্নীদের উদ্দেশ্য আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলি যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩২)
সুতরং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা জরুরি। তবেই অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা থেকে মুক্ত থাকবে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র। নারী-পুরুষ উভয়েই থাকবে নিরাপদ।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে সমাজে ‘নারী ও পুরুষ নির্যাত ‘-নামক কোনো শব্দই থাকবে না। তাই ব্যক্তি পরিবার কিংবা সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ উভয়ের শ্রদ্ধা ও সম্মানজন মনোভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জাতীয় কবির ভাষায় বলতে হয়-
'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। নারীর নিরাপদ পথচলায় ধর্মীয় অনুশাসনে নিজেদের পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস