‘কিরান’ হজ পালনে যে ১৪টি কাজ করতেই হবে
আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম হজ পালনকারীদের সর্বোত্তম হজ হলো ‘কিরান’। যা এক ইহরামে ওমরা ও হজ সম্পাদন করতে হয়। আর এ হজ পালনে অনেক কষ্ট ও সতর্ক থাকতে হয়। কিরান হজ পালনকারীদের জন্য করণীয়গুলো তুলে ধরা হলো-
কিরান হজ
এক ইহরামে ওমরা ও হজ সম্পাদন করাকে কিরান হজ বলে। এ হজ পালনে হাজিদেরকে দীর্ঘ দিন ইহরাম অবস্থায় থাকতে হয়। তাইতো এ হজ সর্বোত্তম।
এ হজ পালনে যদি প্রথমে হজ পালন করতে হয় তবে হজ সম্পাদনের পর ওমরাকে জড়িয়ে নেয়া।
আর যদি প্রথমে ওমরা করার ইচ্ছা করে তবে ওমরা করে ইহরাম থেকে না বেরিয়ে হজ পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং হজ সম্পাদন করা।
কিরান হজের নিয়ত
اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا وَ عُمْرَةً فَيَسِّرْهُ لِى وَ تَقَبَّلْهُ مِنِّى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া ওমরাতান। ফাইয়াসসিরহু লি ওয়া তাকাব্বালহু মিননি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি ওমরা ও হজ পালনের ইচ্ছা করছি; আপনি আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং তা কবুল করুন।’ অতঃপর উচ্চস্বরে ৪ ভাগে ৩ তালবিয়া পড়া।
কিরান হজ আদায়কারীকে মনে রাখতে হবে- হজ ও ওমরা আদায় ছাড়া ইহরাম থেকে বের হওয়া বা হালাল হওয়া যাবে না। মুহরিম অবস্থায় নিষিদ্ধ সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
> হজ ও ওমরার ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
কিরান হজ পালনের জন্য হজ ও ওমরার ইহরাম বাঁধা ফরজ। হজ ও ওমরা আদায় ছাড়া ইহরাম থেকে বের হওয়া বা হালাল হওয়া যাবে না।
> ওমরার তাওয়াফ (ওয়াজিব)
কিরান হজ আদায়কারী আগে ওমরা করলে তাওয়াফ করা ওয়াজিব। এ তাওয়াফে ইজতিবা ও রমল করা আবশ্যক।
আরও পড়ুন > কাবা শরিফ তাওয়াফে ‘ইজতিবা ও রমল’ করার রহস্য
> তাওয়াফে কুদুম (সুন্নাত)
মক্কায় আগমনকারী সব হাজিগণই তাওয়াফ করে থাকেন। হাজিদের জন্য এ তাওয়াফকে ‘তাওয়াফে কুদুম’ বলা হয়; যা আদায় করা (সুন্নাত)।
> সাঈ (ওয়াজিব)
ওমরা আদায়ের জন্য সাঈ রোকন। তবে ক্বিরান হজ আদায়ের নিয়তকারীদের জন্য ওমরার সাঈ’র পর চুল ছাঁটা, কাঁটা বা মুণ্ডন নিষেধ। বরং ইহরামের সব বিধান মেনে চলা। অর্থাৎ সব ধরনের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা।
হজের প্রস্তুতি
জিলহজ মাসের ৭ তারিখ হারাম শরিফে হজের নিয়মাবলীর ওপর যে খুতবা দেয়া হবে, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা বা হজের বিষয়াবলী বুঝে নেয়া। অতঃপর ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের আগে মিনায় গিয়ে উপস্থিত হওয়া।
> মিনায় অবস্থান (সুন্নাত)
জিলহজের ৮ তারিখ জোহর থেকে ৯ তারিখ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত (জোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর) নামাজ মিনায় পড়া (মুস্তাহাব) এবং তথায় অবস্থান করা (সুন্নাত)। ৯ জিলহজ ফজরের পর সম্ভব হলে গোসল অথবা ওজু করে দুপুরের আগে আরাফাতের ময়দানে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
> আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
৯ জিলহজ জোহরের আগেই হজের অন্যতম রোকন পালনে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। আর এটাই হলো হজের অন্যতম রোকন। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় আসার প্রস্তুতি স্বরূপ গোসল করে একবার তাকবিরে
তাশরিক-
‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা। জোহরের নামাজের আগেই আরাফাতের ময়দানে আসা।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শোনা এবং নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করা। অতঃপর আরাফাতের ময়দান থেকে ৯ জিলহজ সুর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।
> মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফাতের ময়দান থেকে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার নামাজ এক আজানে ও একই ইক্বামাতে একসঙ্গে আদায় করা। রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান (সুন্নাত)। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজের পর সূর্য ওঠার আগে কিছু সময় অবস্থান আবশ্যক।
তবে ১০ জিলহজ ফজরের পর সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা ত্যাগ করে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।
মুজদালিফা থেকে কংকর সংগ্রহ : মুজদালিফায় অবস্থানকালীন সময়ে কংকর সংগ্রহ করা।
> কংকর নিক্ষেপ (প্রথম দিন)
১০ জিলহজ মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি (সাত) কংকর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)। আর তা করতে হবে জোহরের আগে।
> কুরবানি করা (ওয়াজিব)
কংকর নিক্ষেপের পর মিনায় কুরবানির পশু জবাই করা অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে জবাইয়ের সময় নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
> মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
কুরবানি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাথা হলক বা ন্যাড়া করার মাধ্যমে বিশ্ব নবির আদর্শের অনুসরণ করা। (ওয়াজিব)
সতর্কতা
১০ জিলহজ মিনায় জামরাতে আকাবায় কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি এবং মাথা মুণ্ডনের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি। মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক (স্ত্রী সহবাস) ছাড়া সব কাজ করা যাবে।
> তাওয়াফে জিয়ারাত (ফরজ)
হজের সর্বশেষ রোকন হলো তাওয়াফে জিয়ারত। যা ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে সম্পন্ন করতে হবে। ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগে করতে না পারলে দম বা কুরবানি দিতে হবে।
> সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফে কুদুমের সময় সাঈ করতে না করলে তাওয়াফে জিয়ারতের পর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা ওয়াজিব।
> কংকর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করা। উভয় দিন মিনায় হজ মন্ত্রণালয় ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে ৩ জামরাতে ৭টি করে প্রতিদিন ২১টি কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।
কংকর নিক্ষেপে প্রথমে ছোট জামরায় তারপর মধ্যম, অতঃপর বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করা। সব ক্ষেত্রেই দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম।
> মিনায় রাত যাপন : ১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় রাত যাপন করা (সুন্নাত)।
১৩ জিলহজ : যারা ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবে না বা করতে পারবে না; তাদের জন্য রাতে মিনায় অবস্থান করা এবং ১৩ জিলহজ আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করা। তবে এর মাঝে মক্কায় এসে তাওয়াফে জিয়ারাত সম্পন্ন করে আবার মিনায় যাওয়া।
মিনা ত্যাগ : ১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করা। সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ তারিখও কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন।
> বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করা ওয়াজিব। তবে হজ শেষে যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে পরিণত হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজে কিরান যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর