সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করতে হয় কেন?
‘সাঈ’ হলো হজ ও ওমরার রোকন। হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারিত নিয়মে সাঈ করতে হয়। এটি আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আল্লাহ বলেন-
‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহে হজ এবং ওমরা সম্পন্ন করে; তার জন্য এ (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোনো পাপ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)
‘সাঈ’ শব্দের অর্থ হলো দৌড়ানো। আর সাফা-মারওয়া পাহাড় দু’টির মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাত বার দৌড়ানোকে সাঈ বলে। এভাবে ‘সাঈ’ করা বাইতুল্লায় হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য ওয়াজিব কাজগুলোর একটি।
তবে ‘সাঈ’ পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করতে হয়। যদি কেউ পায়ে হেঁটে সাঈ করতে অপারগ হয়। তবে ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে বিকল্প বাহনের ব্যবস্থা। তবে বিনা ওজরে বাহন ব্যবহার করলে ‘দম বা কুরবানি’ করা হওয়াজিব।
মনে রাখতে হবে
সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পুরুষরা দৌড়ে অতিক্রম করবে আর নারীরা দৌড়াবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে, সাফা-মারওয়ায় এত দ্রুত অতিক্রম করা যাবে না যে, সঙ্গে কোনো নারী সঙ্গী থাকলে যেন হারিয়ে যায়।
আরও পড়ুন > কাবা শরিফে ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করবেন কেন?
‘সাঈ’ যেভাবে হজ ও ওমরার রোকন
ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা ও শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ পবিত্র ঘর কাবা শরিফের সন্নিকটে সাফা ও মারওয়ার পাদদেশে উন্মুক্ত মরুভূমিতে রেখে যান।
মা ও শিশু ইসমাইলের সঙ্গে থাকা সামান্য খাবার ও পানি শেষ হয়ে যায়। এ সময় হজরত হাজেরা পানির চাহিদা মেটাতে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে সাফা পাহাড়ের পাদদেশে রেখে সাফা পাহাড়ের চুড়ায় ওঠেন। সেখানে পানি সন্ধান না পেয়ে সেখান থেকে মারওয়া পাহাড়ে যান। উভয় পাহাড়ের নিচু উপত্যকা দৌড়ে অতিক্রম করেন। কেননা ওই স্থান থেকে শিশু ইসমাইলকে দেখতে পেতেন না।
হজরত হাজেরা এভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ৭ বার আসা-যাওয়া (দৌড়াদৌড়ি) করেন। যা আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দ হয়ে যায়। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তামাম মুসলিম মিল্লাতের জন্য হজরত হাজেরার এ কাজকে স্মৃতি স্মারকস্বরূপ হজ ও ওমরায় রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
এ কারণেই হজ ও ওমরায় পুরুষরা সাঈ’র মধ্যে পাহাড়ের উপত্যকার স্থানটুকু (কিছুটা হাল্কা দৌড়ের মতো) অতিক্রম করেন। যা বর্তমানে সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত আছে।
তবে এ স্থানটুকু নারীদের দৌড়াতে হয় না; কারণ হজরত হাজেরার দৌড়ানোর বদৌলতে এবং তাঁর সম্মানে আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত সব নারীকে দ্রুত চলা থেকে অব্যহতি দিয়েছেন।
হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় পাহাড়ে ৭ বার দৌড়াদৌড়ির পর সন্তানের কাছে ফিরে এসে দেখতে পান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম-এর পায়ের নিচ থেকে মাটি ফেটে পানির ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
হজরত হাজেরা পানির প্রবাহ রোধে পাথর দিয়ে বাঁধ দেন। আর মুখে বলতে থাকেন ‘জমজম’ থামো থামো। আর তখন থেকেই এ পানির উৎস কুপটি ‘জম জম কুপ’ হিসেবে পরিচিত। আর এ পানিকে বলা হয় জম জম পানি।
আল্লাহ তাআলার কুদরতে প্রাপ্ত এ পানি অনেক বরকতময় পানি। যাতে রয়েছে মানুষের জীবন ধারনে তথা জীবিকা নির্বাহের সব উপাদান। যাতে রয়েছে সব রোগের প্রতিশেধক।
হজরত হাজেরার সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানোর পুণ্যময় স্মৃতিকে তিনি তার নির্দশন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই হজ ও ওমরায় এ কাজকে রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাফা ও মারওয়া সাঈ বা দৌড়ানোর বিধানকে যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। সাফা-মারওয়ার কাজ ও দোয়াকে কবুল করে নিন। মুসলিম উম্মাহকে সাফা-মারওয়ার জিয়ারত ও সাঈর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর