হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শের ফজিলত
পবিত্র কাবা শরিফের ৪টি রোকন বা কর্ণার রয়েছে। এ ৪টি কোনকে রোকন বলা হয়। এগুলোর নামও আলাদা। যেখান থেকে তাওয়াফ শুরু করা হয়, সেটি হলো রোকনে হাজরে আসওয়াদ। বাকি ৩টি রোকন হলো যথাক্রমে রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামেনি।
রোকনে ইরাকি ও রোকনে শামির মধ্যে হাতিমে কাবা অবস্থিত। যা আগে পবিত্র কাবা শরিফের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
তাওয়াফের সময় এ রোকনগুলো মধ্যে রোকনে ইয়ামেনি ও রোকনে হাজরে আসওয়াদকে ইসতেলাম তথা স্পর্শ বা চুম্বন করা সুন্নাত। এ দুটি রোকনকে স্পর্শ বা চুম্বনে রয়েছে বিশেষ ফজিলত। যা তুলে ধরা হলো-
- হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনি) উভয়কে স্পর্শ করলে পাপ মোচন হয়।’ (নাসাঈ, ইবনে খুযায়মা, তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকেম)
- হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম হলো জান্নাতের ইয়াকুত থেকে দুটি ইয়াকুত। আল্লাহ তাআলা এ দু’টির নূর(আলোক প্রভা)কে নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। যদি এ উভয়টির আলোর প্রভাকে নিষ্প্রভ না করতেন তবে উদয় ও অস্তস্থল অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তকে জ্যোতির্ময় করে রাখতো।’ (তিরমিজি, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)
- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হাজরে আসওয়াদ হলো জান্নাতের পাথর। যা দুধের চেয়েও বেশি সাদা ছিল। কিন্তু আদম সন্তানের গোনাহ একে কালো করে দিয়েছে।’ (তিরমিজি, নাসাঈ)
- অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হাজরে আসওয়াদ বরফের চেয়েও সাদা ছিল কিন্তু শিরকপন্থীদের পাপ তাকে কালো বানিয়ে ফেলেছে।’ (বায়হাকি, মুসনাদে আহমদ)
- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই এ পাথর (হাজরে আসওয়াদ) কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে; এর দুটি চোখ হবে, যা দ্বারা সে দেখবে। এর জিহ্বা হবে, যা দ্বারা সে কথা বলবে। সেদিন (এ পাথর) সেই ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দান করবে, যে ব্যক্তি তাকে যথাযথভাবে চুম্বন বা স্পর্শ করবে।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকি, ইবনে খুজায়মা)
পরিশেষে…
হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যাতে ইসতেলাম তথা স্পর্শ করা প্রিয়নবির সুন্নাত। এ দুই রোকের মধ্যবর্তী স্থানের জন্য প্রিয়নবি একটি দোয়া নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। এ স্থানে প্রিয়নবি বলতেন-
‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান নার’
সুতরাং যারা হজ ও ওমরাহ পবিত্র নগরী মক্কায় গমন করে, তাদের উচিত হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনি স্পর্শ করা। সম্ভব হলে চুম্বন করার চেষ্টা করা। সম্ভব না হলে দূর থেকে হলেও মনের ঐকান্তি টান ও আগ্রহ নিয়ে এ উভয় রোকনের দিকে ইশারা করা।
আশা করা যায়, সহিহ নিয়তে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনিতে স্পর্শ বা চুম্বন বা ইশারা করায় আল্লাহ তাআলা হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। কেয়ামতের দিন এ রোকনদ্বয় তার স্পর্শকারী ও চুম্বনকারীর জন্য গোনাহ মাফ ও নাজাতের সুপারিশ করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ ও ওমরাহ পালনকারীকে হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামেনিতে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে স্পর্শ, চুম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম