নবি-সিদ্দিক-শহিদগণের সঙ্গে জান্নাত লাভের সহজ পথ
দুনিয়া পরকালের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার কাজই মানুষকে পরকালের চিরস্থায়ী বাসস্থানের ফয়সালা করবে। আর মুমিনদের জন্য নেক আমলের সঙ্গে থাকবে আল্লাহর রহমত। তবে এমন অনেক কাজ আছে যাতে সহজেই মানুষ নবি-সিদ্দিক ও শহিদগণের সঙ্গে জান্নাতে বসবাসের সুযোগ পাবে। যা পালন করা মুসলিম উম্মাহর জন্য খুবই জরুরি।
দুনিয়াতে যারা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করবে, তারা পরকালে আল্লাহর রহমতে সুপথ প্রাপ্ত হবে। আল্লাহর রাসুলের এক সাহাবা পরকালীন সফলতার ব্যাপারে তাঁর কাছে সে কথাই জানতে চেয়েছেন।
কেয়ামতের দিনের সে সফলতার কথা প্রিয়নবিও সাবলিল ভাষায় তুলে ধরেছেন-
হজরত আমর বিন মুররা জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন কুজায়া বংশের এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (আমি) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, সম্পদের জাকাত আদায় করি, রমজানের রোজা রাখি; আমার সাওয়াব কতটুকু হবে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ কাজ করে যে মৃত্যুবরণ করল, সে কেয়ামতের দিন আম্বিয়া, সিদ্দিকিন ও শহিদগণের সঙ্গে এমনভাবে থাকবে; এ বলে তিনি দু’টি আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন। তবে এর (মর্যাদার) জন্য শর্ত হলো- সে যেন পিতা-মাতার নাফরমানি না করে।’ (ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজায়মা) অর্থাৎ কোনোভাবেই পিতা-মাতার সঙ্গে অবাধ্য আচরণ করা যাবে না।
আরও পড়ুন > পিতামাতার জুলুম সত্ত্বেও সন্তানের করণীয়
মনে রাখতে হবে
- পিতা-মাতার আনুগত্য করা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। আল্লাহর ইবাদতের পরপরই তিনি পিতামাতার সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেন-
‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতিত অন্য কারো ইবাদত না করার জন্য এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের প্রতি বিরক্তিসূচক উফ্ শব্দ ব্যবহার করো না, ধমক দিওনা, তাদের সহিত সম্মানসূচক নম্র কথা বলবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩)
- অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন-
‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রচি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তাকে দুগ্ধপান ছাড়াতে দু’বছর অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার প্রতি ও পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আর আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)
- এমনকি পিতামাতা যদি ইসলামের অনুসারী না হয়, সেক্ষেত্রে ইসলামের বিধানের বিপরীত তাদের কোনো হুকুম মানা যাবে না ঠিকই কিন্তু তাদের প্রতি তখনও খারাপ আচরণ করা যাবে না। পরবর্তী আয়াতে তখনও উত্তম আচরণ করার নির্দেশ রয়েছে কুরআনে-
‘তোমার পিতামাতা যদি আমার শরিক দাঁড় করাতে পীড়াপীড়ি করে, তুমি তাদের কথা মান্য করো না। তবে দুনিয়াতে তাদের সঙ্গে সদভাবে বসবাস করবে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৫)
- সুতরাং সব সময় আল্লাহর কাছে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করতে হবে।আল্লাহ তাআলা সন্তানদেরকে পিতামাতার জন্য তার কাছে দোয়া করারও নির্দেশ দিয়েছেন-
‘মমতাবেশে মাতাপিতার প্রতি বিনয়াবত থেকো এবং বলো, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে তারা শৈশবে (ছোটকালে) আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
আরও পড়ুন > বাবা-মা’র জন্য দোয়া করার পদ্ধতি
পরিশেষে…
নবি সিদ্দিক ও শহিদগণের সঙ্গে জান্নাতে বসবাসের সে উত্তম সুযোগ লাভে ইসলামের বিধিবিধান পালনের সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার সঙ্গেও উত্তম আচরণ করি। যে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা-
‘আর আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তার মা তাকে বড় কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তাকে অতি কষ্টের সঙ্গে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভ ধারণ করতে এবং প্রসবের পর দুধ ছাড়াতে ৩০ মাস লেগেছে। এমনকি যখন সে স্বীয় যৌবনে উপনীত হয় এবং চল্লিশ বছর বয়সে পৌছে তখন সে বলে, হে আমার রব! আপমি আমাকে তাওফিক দিন! যেন আমি আপনার সে নেয়ামতের শোকরগুজারী করতে পারি, যা আপনি আমাকে ও আমার মাতা-পিতাকে দান করেছেন এবং আমি যেন নেক কাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আমার জন্য আমার সন্তান-সন্তদের মধ্যেও যোগ্যতা দান করুন। আমি আপনারই দরবারে তাওবা করছি এবং আমি তো একজন আত্মসমর্পণকারী। (সুরা আহকাফ : আয়াত ১৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবি সিদ্দিক ও শহিদগণের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস লাভের তাওফিক দিন। ইসলামের ফরজ বিধানগুলোর পালন করার সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করতে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ ও নসিহতগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম