রোজার বিধানে যে সব পরিবর্তন হয়েছে
সাওম বা রোজা পৃথিবীর প্রথম নবি হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়ে আসছে। যার ক্রমধারা আমাদের নবি ও রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে বর্তমান সময় পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
তবে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর প্রতি মাসে ৩টি করে রোজা রাখতেন এবং আশুরার দিনের রোজাও রাখতেন।
মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে রোজার বিধানে ৩টি পরিবর্তন সাধিত হয়। আর তাহলো-
আরও পড়ুন > ইফতারের সময় দোয়া কবুলে প্রিয়নবির ঘোষণা
প্রথমত পরিবর্তন
প্রিয়সকি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর প্রতি মাসে ৩ দিন রোজা রাখতেন আর আশুরার দিন রোজা পালন করতেন। অতঃপর যখন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে’ এ আয়াতে কারিমা নাজিল হয়; তখন থেকে রমজান মাস ব্যাপী রোজা পালন করা উম্মতের জন্য আবশ্যক হয়ে যায়। আশুরা ও প্রতি মাসের ৩ রোজা আবশ্যকভাবে পালন স্থগিত হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত পরিবর্তন
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ রমজানের রোজা পালন করতো আর কেউ কেউ রোজা রাখার বিনিময়ে মিসকিনকে খাবার খাওয়াতো। অতঃপর আল্লাহ তাআলা ‘তোমাদের মধ্যে যে এ (রমজান) মাস পবে; সে যেন রোজা রাখে’-এ আয়াত নাজিল করেন, তখন সবার জন্য রোজা পালন আবশ্যক কর্তব্য হয়ে যায়। আর তা থেকে মুক্ত থাকবে শুধু অসুস্থ ও সফররত ব্যক্তিরাই। যারা পরবর্তীতে রোজা আদায় করে নিবে।
তৃতীয়ত পরিবর্তন
রমজানের প্রথম দিকে খাওয়া-দাওয়াসহ যাবতীয় কাজ রাতে ঘুমানোর আগে সম্পন্ন করাই বৈধ ছিল। রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে আর খাওয়া-দাওয়াসহ কোনো কাজেরই অনুমতি ছিল না। ঐ সময় একটি ঘটনা ঘটে। আর তাহলো-
হজরত কায়েস বিন সারমা রাদিয়াল্লাহু আনহু নামক একজন আনসারী সাহাবি সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি গিয়ে ইশার নামাজ আদায় কররেন। এরপর তিনি (রামজানের রাতে) ঘুমিয়ে পড়লেন। ফলে দ্বিতীয় দিন কোনো ধরনের খাবার গ্রহণ ছাড়াই রোজা রাখলেন। এ কারণে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত আশংকাজনক হয়ে পড়ল।
রাসুলুল্রাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, কী হয়েছে? তখন প্রিয়নবিকে বিস্তারিত ঘটনা জানানো হলো।
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজ কত রাকাআত পড়বেন?
অন্য দিকে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহ আনহু রমজানের রাতে ঘুমানোর পর স্ত্রী-সহবাস করেন। তখন আল্লাহ তাআলা রোজার বিধানে পরিবর্তন করে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-
‘রমজানে রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সহবাস হালাল করা হলো। স্ত্রীগণ তোমাদের জন্যে পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাক। তোমরা স্বীয় ক্ষতি সাধন করেছিলে এ সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। এ জন্য তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করলেন এব তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন, অতএব এখন তোমরা তোমাদের পত্নীদের সঙ্গেসহবাস করতে পার এবং আল্লাহ পাক যা তোমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তার অন্বেষণ কর এবং পানাহার কর যে পর্যন্ত না ভোরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা দেখা না যায়। অতঃপর রোজাকে রাত পর্যন্ত পূর্ণ কর এবং মসজিদে ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করো না। এটিই আল্লাহর নির্ধারিত সীমা।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)
এ আয়াত নাজিলের ফলে মাগরিবের পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত রমজানের রাতে খাওয়া-দাওয়া ও স্ত্রী সহবাস প্রভৃতি কাজের অনুমতি দেয়া হলো।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজায় তার বিধানের পরিবর্তনগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর