সাহরি ও ইফতারে খেজুর-পানি কেন খাবেন?
রমজান। আত্ম সংযমের মাস রমজান। কুরআন নাজিলের মাস। তাকওয়া অর্জনের মাস। ইবাদত-বন্দেগির মাস। সাহরি খাওয়ার মাস। ইফতার করার মাস। এ সবই রোজাদার মুমিন বান্দার একান্ত করণীয় কাজ।
আত্ম সংযমের রয়েছে তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। সাহরি গ্রহণে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। ফেরেশতারা সাহরি গ্রহণকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।
ইফতার রোজাদারের জন্য আনন্দের। রোজাদারের আনন্দের ফলে এ সময়ের সব আবেদন আল্লাহ কবুল করে থাকেন।
প্রকৃত মুমিন কখনোই সাহরি ও ইফতার নিয়ে ব্যস্ত থাকে না। সাজিয়ে বসে না ইফতার ও সাহরির পসরা। তাদের লক্ষ্যই থাকে আল্লাহকে রাজি খুশি করানো।
আরও পড়ুন > রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া
যারা সুবহে সাদেকের আগে সামান্য সাহরি গ্রহণ করে দিনের বেলায় কুরআনের নির্দেশ অনুসারে ক্ষুধার যন্ত্রণা উপভোগের মাধ্যমে উপবাস করে এবং দিন শেষ ইফতার গ্রহণ করে তাদের জন্যই চূড়ান্ত সফলতা।
সাহরি প্রসঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন কতিপয় সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। আর তাহলো-
সাহরি খাওয়া বরকতের, তাই বলে সাহরি খাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি একদমই ঠিক নয়। বিশাল আয়োজনে পেট ভরে সাহরি গ্রহণের কোনো দিক-নির্দেশনাও নেই। বরং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে ইবাদত-বন্দেগিতে অলসতা চলে আসে। রমজানের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে বঞ্চিত হয় মুমিন মুসলমান।
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজ কত রাকাআত পড়বেন?
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়ায় বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা (সাহরি) খেতে ছেড়ো না; যদিও তোমরা তাতে এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সাহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন এবং ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি বলেছেন, ‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সাহরি হলো খেজুর।’
ইফতার প্রসঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন কতিপয় সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। আর তাহলো-
সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা অর্থাৎ সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতাড়ি ইফতার করা। ইফতারে দেরি না করে সময় মতো ইফতারে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। আর তাহলো-
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম
>> হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারি, মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইয়াহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো ইফতার দেরিতে করা। (আবু দাউদ)
ইফতারি প্রসঙ্গে প্রিয়নবি হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী। (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরাসিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে সাওয়াব স্থির হলো। (আবু দাউদ ও মিশকাত)
তাইতো ইফতারের সময় হলে প্রথমে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করা অতি উত্তম। এর রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। রোজা খুলতে ইফতারের সময় প্রথমে খেজুর এবং পানি দেহে সুক্রোজ তৈরি করে থাকে। ফলে মুহূর্তেই তৃষ্ণা এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
ইফতারের পর রোজাদার ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ আদায় করে। এ সময়ে রোজাদারের পাকস্থলী সারাদিন বসে থাকার পর একটু কাজ পেয়ে সক্রিয় বা কর্মক্ষম হয়ে নেয়।
মাগরিব পরবর্তী সময়ে রোজাদার ব্যক্তি রাতের খাবার গ্রহণে পর্যাপ্ত মাছ-মাংস অর্থাৎ আমিষ জাতীয় খাদ্য খেলেও কোনো অসুবিধা নেই।
এতে রোজাদারের স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি রোজার আত্মিক-আধ্যাত্মিক প্রাপ্তিও অর্জিত হয়। হাদিসে এসেছে, ‘অতিরিক্ত পানাহার থেকে বিরত থাক। তা না হলে তোমার অন্তরাত্মার মৃত্যু ঘটবে।’ (মুসলিম)
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের মুনাজাত
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী সাহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত খাবার গ্রহণ করলে পবিত্র রমজান মাস জুড়ে রোজাদার অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন সুস্থ্য ঝরঝরে ও ফুরফুরে থাকবে।
পরিশেষে...
ইফতারের সময়টি যেহেতু মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত মহামূল্যবান। তাই এ সময়ে বিশ্বনবির ইফতারের অনুসরণ আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ।
বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস ছিল- শুধু খেজুর আর পানি খেয়ে সাহরি ও ইফতার করা এবং অতঃপর যথাক্রমে ফজর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির শেখানো পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সাহরি ও ইফতার গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর