আজকের তারাবিতে পড়া হবে ‘কুরআনের আলোচ্য বিষয় মানুষ’
আজ শাবান মাস শেষ। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। বাদ ইশা দেশব্যাপী আয়োজিত হবে কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ নামাজ। অধিকাংশ মসজিদেই কিয়ামুর রমজান তথা তারাবিহ নামাজ পড়া হবে পুরো কুরআন মাজিদ দিয়ে।
ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ তারাবিহ নামাজ আদায়ে অপেক্ষা প্রহর গুনছে। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে সুরে সুরে কথা বলে যাবেন। যে কথাগুলো নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪শত বছর আগে।
রমজানজুড়ে হাফেজে কুরআনগণ তারাবিহ নামাজ আদায়কারীদের শোনাবেন কুরআনে বিধি-বিধান ও চমৎকার কাহিনী। যা শুনে মুমিন মুসলমানের হৃদয় হবে তরতাজা।
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া
বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা এ পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেছেন মানুষের হেদায়েত তথা জীবন পরিচালনার জন্য। এ জীবন পরিচালনার যাবতীয় রসদ রয়েছে এ কুরআনে। যা মানুষকে সঠিক পথের দিকে নিয়ে যাবে।
আজ অনুষ্ঠিত হবে প্রথম কিয়ামুর রহমান তথা তারাবিহ। কুরআনুল কারিমের সুরা ফাতেহা থেকে শুরু করে সুরা বাকারার ২০৩নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে আজ। যার শুরুতে আল্লাহ তাআলা তার প্রশংসা এবং বান্দার ইবাদতের স্বীকৃতির বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন সুরা ফাতেহায়।
দ্বিতীয় সুরার শুরুতেই আল্লাহ তাআলা মানুষের পরিচয় ও শ্রেণী বিন্যাস তুলে ধরেছেন। প্রথমেই ওঠে এসেছে সফলকাম ঈমানদারদের কথা, তারপর অবিশ্বাসী কাফেরদের কথা অতঃপর আলোচিত হয়েছে মুনাফিকদের কথা।
মনে রাখতে হবে
এ পবিত্র কুরআনুল কারিমের আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে ‘মানুষ’। আর আল্লাহ তাআলা সমগ্র কুরআনে মানুষের জীবনের যাবতীয় দিক ও ইতিহাস নিয়েই আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন > রোজার নিয়ত ও সাহরি-ইফতারের দোয়া
প্রথম তারাবিতে কুরআনের যে সকল বিষয়গুলো পঠিত হবে, সংক্ষেপে সে বিষয়গুলো ক্রমধারা তুলে ধরা হলো-
প্রথম তারাবিহ-এর পঠিত অংশ : সুরা ফাতিহা ও সুরা বাক্বারা : আয়াত ০১-২০৩। আজকের বিষয়গুলোকে ১০টি পর্বে ভাগ করে উল্লেখ করা হলো-
প্রথম পর্ব : (আয়াত ১-২৯)
>> মুত্তাকি ঈমানদারদের পথনির্দেশিকা, সফলতা ও পরিচয়;
>> কাফেরদের পরিচয় এবং
>> মুনাফিকের পরিচয়। (১-২০)
>> সমগ্র মানবজাতির প্রতি ইবাদাতের আহ্বান; >> কুরআনের সন্দেহপোষণকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ; >> মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনা; >> আল্লাহর অবাধ্যকারী কাফের-ফাসেকদের ক্ষতিগ্রস্তের বিবরণ (২১-২৯)।
দ্বিতীয় পর্ব (আয়াত ৩০-৩৯)
>> মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও ও হজরত আদম আলাইহিস সালামের খিলাফাত (৩০-৩৩);
>> হজরত আদম আলাইহিস সালামের মর্যাদা ও সম্মান ও তাকে দুনিয়া প্রেরণ; >> মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি; >> তাওবার শিক্ষা এবং >> ইবলিসের (শয়তানের) পতন (৩৪-৩৯)।
তৃতীয় পর্ব : (আয়াত ৪০-৭৪)
>> ইয়াহুদিদের ইতিহাস; >> মুসলমানদের দুর্দশার কারণ; >> দুনিয়ায় আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি (৪০-৪৬);
>> অকৃতজ্ঞ ইয়াহুদি জাতির বর্ণনা (৪৭-৬৪);
>> ইয়াহুদিদের হঠকারিতা (৬৫-৬৬); এবং
>> সুরা বাকারার নামকরণের তাৎপর্য (৬৭-৭৪)
চতুর্থ পর্ব : (আয়াত ৭৫-১০৩)
>> মুমিনদের অবস্থার বর্ণনা (৭৫-৭৭)
>> বনি ইসরাঈলের ইতিবৃত্ত (৭৮-৮০);
>> মানুষের পাপ-পূণ্যের বিচার (৮১-৮২);
>> ইয়াহুদিদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ (৮৩-৮৭);
>> বিশ্বনবির সঙ্গে ইয়াহুদিদের প্রতারণা (৮৮-৯৩);
>> পরকালের সফলতার বিষয়ে ইয়াহুদিদের গলাবাজি (৯৪-৯৬);
>> জিবরিল আলাইহিস ও বিশ্বনবির সঙ্গে ইয়াহুদিদের শত্রুতা পোষণ (৯৭-৯৮)
>> বিশ্বনবির প্রতি কুরাআন নাজিল ও তাঁর সত্যয়ন (৯৯-১০১)
>> ইয়াহুদিদের জাদু বিদ্যা বা জাদু প্রীতি (১০২-১০৩)
পঞ্চম পর্ব : (আয়াত ১০৪-১২৩)
>> ইয়াহুদিদের শিষ্টাচার বিবর্জিত আচরণ (১০৪-১০৫);
>> কুরআনের আয়াত রহিত সম্পর্কিত ব্যাখ্যা (১০৬-১০৮);
>> ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত্র (১০৯);
>> মুসলমানের চেতনাকবোধ জাগ্রত (১১০);
>> ইয়াহুদিদের প্রতিপক্ষ নাসারাদের গলাবাজি (১১১-১১২);
>> ইয়াহুদি-খ্রিস্টান পরস্পরের ঝগড়া (১১৩);
>> কিবলা পরিবর্তনে ইয়াহুদিদের অপপ্রচার (১১৪-১১৫);
>> ইয়াহুদি-খ্রিস্টান-মুশরিকদের ভ্রান্ত বিশ্বাস (১১৬-১১৮, ১২০-১২১);
>> নির্ভেজাল তাওহিদের ঘোষণা (১১৯);
>> অন্যদের সঙ্গে ঈমানের সবচেয়ে বড় আদর্শিক সংঘাত (১২২-১২৩);
ষষ্ঠ পর্ব : (আয়াত ১২৪-১৪১)
>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম মুসলিম মিল্লাতের ইমাম বা নেতা;
>> পবিত্র বায়তুল্লাহ বা কাবা ঘর নির্মাণ;
>> বাইতুল্লাহ নির্মাণকাল হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া (১২৬-১২৮);
>> নিজ কাওমে রাসুল প্রেরণের দোয়া (১২৯);
>> হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধরদের আলোচনা (১৩০-১৪১)।
সপ্তম পর্ব : (আয়াত ১৪২-১৫৭)
>> মুসলিম উম্মাহর জাতীয় ঐক্যের প্রতীক কিবলা পরিবর্তনের রহস্য আলোচনা;
>> মুসলিম জাতির গুণ ও পরিচয় এবং অমুসলিমদের কার্যাবলী;
>> বিশ্বনবির নবুয়ত;
>> আল্লাহর শুকরিয়ার সঠিক ধারণা ও প্রাসঙ্গিকতা;
>> ধৈর্য ও নামাজ দ্বারা আল্লাহর সাহায্য লাভ;
>> ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা ও শহিদের মর্যাদা;
অষ্টম পর্ব : (আয়াত ১৫৮-১৭৭)
>> হজ ও ওমরা, সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নির্দশন;
>> সত্য গোপনকারী অবিশ্বাসী নেতাদের ভয়াবহ পরিণতি ও হুশিয়ারি;
>> তাওহীদের মূলনীতি, ঈমানি চিন্তাধারা, হালাল-হারাম সম্পর্কিত কুরআনি নীতিমালা;
>> পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুকরণের কুপ্রভাব;
>> ইবাদাত-বন্দেগিতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী
নবম পর্ব : আয়াত ১৭৮-১৮৮
>> ইসলামে কিসাস বা হত্যাকারীর শাস্তির বিধান;
>> মুক্তিপণের সময়সীমা;
>> ওয়ারিশদের প্রতি মৃত ব্যক্তির অসিয়তের বিধান;
>> রোজা বিধান, শিক্ষা ও তাৎপর্য;
>> সাহরি খাওয়ার বিধান;
>> ই’তিকাফের বিধান;
>> আল্লাহর কাছে বান্দার সাহায্য কামনার আদেশ;
>> অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ ও তার বিধান;
দশম পর্ব : আয়াত : ১৮৯-২০৩
>> চাঁদের আবির্ভাব, ক্রমবৃদ্ধি ও ক্রমহ্রাসের বিবরণ;
>> কুসংস্কারের মুলোৎপাটন;
>> পবিত্র হারাম মাসসমূহে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ;
>> জিহাদে লক্ষ্য উদ্দেশ্য, বিধান;
>> আল্লাহর পথে ব্যয়;
>> হজ ও ওমরা বিধি-বিধান;
>> হজের সমাপ্ত পর্বের আলোচনা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিমের উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝে পড়ার এবং দৈনন্দিন জীবনে তা বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনে উল্লেখিত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম