রমজানের রোজার উচ্চ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের কারণ
রমজান মাসের রোজা বান্দার জন্য আল্লাহর একান্ত মহা অনুগ্রহ। মানুষ এ মাসে আল্লাহর ভালোবাসায় অন্য সময়ের বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকে। অন্য সব রোজার থেকে আল্লাহর ফরজ করা নির্ধারিত রোজার মর্যাদা অনেক বেশি। কেননা এ মাসের রোজা আল্লাহর কুরআন, প্রিয়নবির হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে কেয়ামত পর্যন্ত পালন করা ফরজ।
কুরআনে পাকে আল্লাহ বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাস, যে মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। যা মানব জাতির জন্য পথ প্রদর্শক আর তাতে রয়েছে হেদায়েতের নিদর্শনসমূহ এবং যা হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
আরও পড়ুন- রোজা কী ও কেন
আবার হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের ভিত্তিকে ৫টি কাজের ওপর স্থাপন করেছেন। এ পাঁচটি কাজের মধ্যে চতুর্থ হচ্ছে রমজান মাসের রোজা পালন করা।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে ৫টি কাজ। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল একথা সাক্ষ্য দেয়া; নামাজ প্রতিষ্ঠা করা; জাকাত আদায় করা; রমজানের রোজা রাখা এবং সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লায় হজ করা।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)
হজরত তালহা ইবনে আবদুল্লাহ’র বর্ণিত হাদিসটি দ্বারাও রমজানের রোজার উচ্চ মর্যাদার কথা প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি প্রিয়নবিকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার ওপর আল্লাহ কি কি রোজা ফরজ করেছেন, তা আমাকে বলে দিন।
প্রিয়নবি জবাবে বললেন, ‘রমজান মাসের রোজা।’
লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, এ ছাড়া অন্য কিছু কি আমার কর্তব্য আছে? প্রিয়নবি বললেন, ‘না, তবে তুমি যদি নফল রোজা রাখ, তাহলে ভিন্ন কথা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আরও পড়ুন- রোজা পালনে নারীদের করণীয়
রমজান মাসের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্য কোনো মাসে নেই। তাই এ মাসের রোজা পালনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অনেক। আর তাহলো-
>> এ মাসের নাম পবিত্র কুরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে।
>> মহান আল্লাহ এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন।
>> আবার এ মাসেই পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করা হয়েছে।
>> এ মাসের ইবাদত বন্দেগির ব্যাপারে প্রিয়নবি সাহাবাদেরকে সুসংবাদ দিতেন; রজব ও শাবন মাস জুড়ে রমজানের ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেদেরকে তৈরি করতে তিনি নিজেও দোয়া পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে দোয়া করতে বলতেন।
>> রমজান মাসে রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়।
>> এ মাসের জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়।
>> রমজানের রাত ও দিনে মুসলমানের দোয়া অনবরত আল্লাহর দরবারে কবুল করা হয়।
>> কুরআনের ঘোষণায় এ মাসের রয়েছে বরকতময় লাইলাতুল কদর।
>> এ মাসের প্রতি রাতে ক্ষমা লাভে ফেরেশতারা মানুষকে আহ্বান করতে থাকে।
>> এ পবিত্র মাসেই আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রথম সমর অভিযান বদরে বিজয় দান করেছিলেন।
>> রমজান মাসে উমরা আদায় আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে হজ পালনের সাওয়াব পাওয়া যায়।
সর্বোপরি মুসলিম উম্মাহ কুরআন ও হাদিসের আলোক একমত যে, রমজানের রোজা ফরজ। তা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম একটি। সুতরাং যে কেউ পবিত্র রমজান মাসের রোজা অস্বীকার করবে সে ইসলামকে ইসলামকে অস্বীকারকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।
পরিশেষে…
রমজানের রোজা উচ্চ মর্যাদা ঘোষণায় প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের প্রতি স্বাগত ভাষণে ঘোষণা করেন-
হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষ দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের কাছে একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং বরকতপূর্ণ মাস উপস্থিত। এতে রয়েছে, এমন এক রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
এ মাসে আল্লাহ তাআলা সিয়াম (রোজা) ফরজ করেছেন এবং রাতে দীর্ঘ নামাজ আদায় করাকে তোমাদের জন্য পূণ্যের কাজ হিসেবে দিয়েছেন।
যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করলো। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ আদায় করলো, সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ কাজ আদায় করলো।
এ মাস ধৈয্যের মাস, আর ধৈয্যের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। এ মাস হচ্ছে সহানুভূতি প্রদর্শনের মাস।’ (মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভ করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম