ইবাদত-বন্দেগিতে কঠোরতা অবলম্বনের বিধান
ইসলাম শান্তি ও সুন্দরের ধর্ম বা জীবন ব্যবস্থা। ইসলামি জীবন ব্যবস্থা ও ইবাদতে কোনো ধরনের কঠোরতা ও বাড়াবাড়ির স্থান নেই। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের জীবন ব্যবস্থা ও ইবাদত সম্পর্কে বাড়াবাড়ি বা কঠোরতা পরিহারের বিধান পেশ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার খুতবা দেয়ার সময় দেখতে পেলেন এক ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি সাহাবাগণকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, ‘এ ব্যক্তি হলো আবু ইসরাইল। সে মানত করেছে যে, রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়ায় যাবে না, কারো সাথে কথা বলবে না এবং রোজা রাখবে ‘
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এ কথা) শুনে বললেন, ‘তোমরা তাকে নির্দেশ দাও সে যেন কথা বলে, (রোদ থেকে) ছায়ায় যায়, বসে এবং তার রোজা পূর্ণ করে।’ (বুখারি)
উল্লেখিত হাদিসের শিক্ষা
>> যদি কেউ এমন মানত করে; যার কারণে নিজের জীবন বা ধর্মের জন্য ক্ষতিকর তা আদায় করা যাবে না। যেমন- আলোচ্য ব্যক্তি রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, ছায়ায় না বসা, কথা না বলার মানত করেছিল। সাথে সাথে সে উল্লেখিত কষ্টগুলো স্বীকার করে রোজা রাখারও মানত করেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এ বিষয়গুলো পরিহার করে রোজা রাখার নির্দেশ করেছিলেন।
>> এমনিভাবে মানত করার মাধ্যমে নিজেদের জন্য কোনো বৈধ বিষয়কে অবৈধ মনে করা যাবে না। আবার অবৈধ জিনিসকে বৈধ করা যাবে না। যেমন কেউ মানত করল- ‘আমি ইলেকশনে জিতে গেলে একটি গানের আসর করব। এ ধরনের মানত পালনযোগ্য নয় ‘
>> আর যা মানত করা হয়, তা যদি সাওয়াবের বিষয় হয়; তবে তা আদায় করতে হবে। আর যদি অনর্থক
কোনো বিষয় হয় তবে তা আদায় করবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে আল্লাহর হুকুম মান্য করার মানত করেছে সে যেন তা করে। আর যে আল্লাহর নাফরমানির মানত করেছে সে যেন তা না করে বিরত থাকে।’
>> একান্ত প্রয়োজন না হলে কোনো বিষয়ে মানত করা উচিত নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও মানত করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। কেননা কোনো কিছু মানত করলে তা পূরণ করতেই হবে। মানত পূরণ করতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
>> ইবাদত-বন্দেগী বিষয়েও কোনো কঠোরতা আরোপ করা উচিত নয়। ইবাদতে কঠোরতা অবলম্বন করা একটি চরমপন্থা। রোজার ব্যাপারে আবু ইসরাইল যে ছায়ায় না বসা, রোদে দাঁড়িয়ে থাকা আর কথা না বলার যে মানত করেছিল সেটা ইসলামের সৌন্দর্যের পরিপন্থী ছিল। তাই এ সব কঠোরতা ত্যাগ করতে হবে।
>> খুতবার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। তাই তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
>> এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, খুতবার সময় প্রয়োজনে খতীব কথা বলতে পারেন। কাউকে কোনো প্রয়োজনীয় বিষয়ের আদেশ বা কোনো কাজ থেকে নিষেধ করতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। ইসলাম ও জীবন সম্পর্কে বাড়াবাড়ি ও কঠোরতা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম