প্রিয়নবির যে আমলে মুক্তি সুনিশ্চিত
আল্লাহ তাআলা রাহমানুর রাহিম। তাঁর দয়ার তুলনা হয় না। তিনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করেন আর যে ব্যক্তি ক্ষমা প্রার্থণাকারী তাকে আরো বেশি ভালবেসে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমের বহু আয়াতে ক্ষমা, তাওবা ও ক্ষমার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। যাতে মানুষ অন্যায় করার পর তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাঁরই দিকে ফিরে আসে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা ছিল প্রিয়নবি অত্যন্ত প্রিয় আমল। যা তাঁর বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। মুসলিম শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার অন্তরে অন্যমনষ্কতার (অবস্থা) তৈরি হয়; আমি নিশ্চয়ই প্রতিদিন ১০০ বার আল্লাহর কাছে ইসতেগফার করি।’
অন্য হাদিসে প্রিয়নবি বলেন, ‘আল্লাহ শপথ! প্রতিদিনি আমি সত্তর বারের চেয়েও অধিক আল্লাহর কাছে ইসতেগফার ও তাওবা করি।’ (বুখারি)
প্রিয়নবি ছিলেন নিষ্পাপ। তারপরও আল্লাহ তাআলা ‘তাঁর আগের এবং পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন’ বলে কুরআনে ঘোষণা করেছেন।
তাইতো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ বলবে; তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। যদিও সে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে থাকে।’ (তিরমিজি, হাকেম, আবু দাউদ)
আল্লাহর কাছে ক্ষমা মর্যাদা এত বেশি যে তিনি জেহাদের ময়দানে মুসলিম সৈনিককে হত্যা করার পরও তাঁর হত্যাকারীকে ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন। কেয়ামতের ময়দানে তাদের উভয়কে দেখে আল্লাহ তাআলা হাসবেন। এর রকম একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন দুই ব্যক্তির প্রতি (ব্যাপারে) হাসবেন, যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করবে এবং উভয়েই জান্নাতে যাবে।
তাদের একজন আল্লাহর পথে লড়াই করে জীবন দান করবে। তারপর আল্লাহ হত্যাকারীর তাওবা কবুল করবেন এবং সে ইসলাম গ্রহণ করে (পরবর্তীতে ইসলামের জন্য) শাহাদাত লাভ করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
প্রথম ব্যক্তি ইসলামের জন্য শহিদ হবে। আর হত্যাকারী হলো অমুসলিম। এ অমুসলিম ইসলাম কবুল করে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করবে আবার ইসলামের জন্য জীবন দানের মাধ্যমে সেও শাহাদাত লাভ করবে।
এ হাদিস থেকেও বুঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা গুরুত্ব কত বেশি। মুসলিম উম্মাহর উচিত সদা-সর্বদা তাওবা-ইসতেগফার করা। তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে দুনিয়ার সব অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর নৈকট্য ও পরকালের সফলতা লাভের চেষ্টা করা।
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (এ কথা) বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন-
‘হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং আমার কাছে প্রত্যাশা করতে থাকবে; ততক্ষণ আমি তোমার গোনাহ ক্ষমা করতে থাকব।
তোমার গোনাহের পরিমাণ যত বেশিই হোক এবং যত বড়ই হোক না কেন। এ গোনাহের পরিমাণ যদি আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং তুমি যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলেও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। এ ব্যাপারে আমি কোনো পরোয়া করব না।
হে আদম সন্তান! তুমি যদি আমার কাছে পৃথিবীর সমান গোনাহসহ উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরিক (অংশীদার) না করে থাক; তাহলে আমিও ঠিক পৃথিবী সমান ক্ষমা নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে যাব। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, দারেমি ও মুসতাদরেকে হাকেম)
পরিশেষে…
তাওবা ও ইসতেগফার এমন এক ইবাদত যা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অন্যায় অপরাধ থেকে মুক্ত করে ইসলামের সুন্দর ও সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় দান করে। মানুষ লাভ করে ইসলামের সুন্দর জীবনে নিশ্চিত ঠিকানা। গঠন করে গোনাহমুক্ত জীবন। তাওবা ও ইসতেগফারের মূল বিষয়িই হলো আল্লাহর দিকে ফিরে আসা। আর এ কারণেই তাওবা ও ইসতেগফার ছিল প্রিয়নবির প্রিয় আমল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠ আমল ‘তাওবা ও ইসতেগফার’ বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস