নিজে আমল না করে অন্যকে নসিহত করা যাবে কি?
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দিচ্ছ, অথচ কিতাব পাঠ করা সত্ত্বেও নিজেদেরকে ভুলে যাও। তোমরা কি একথাটিও বুঝতে পার না? (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৪৪)। এ আয়াতে কারিমাটি বনি ইসরাইলদেরকে উদ্দেশ্য করে নসিহত বা উপদেশ প্রদান সম্পর্কে নাজিল হয়েছে।
যদিও আয়াতটি বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে নাজিল করা হয়েছে। কিন্তু তাতে রয়েছে মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্য শিক্ষা। বনি ইসরাইল সম্প্রদায় নিজেরা অন্যকে ভালো কথা ও কাজের উপদেশ দিত ঠিকই তাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ ছিল সর্বশেষ নবি ও রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কুরআন নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করবেন; তখন তারা শরিয়তে মুহাম্মাদির ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। কিন্তু তারা তা থেকে নিজেদেরকে বিরত রেখেছে।
আলোচ্য আয়াত থেকে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য শিক্ষা হলো- তাঁরা মানুষকে হেদায়েত ও ভালো কাজের নসিহত বা উপদেশ প্রদান করবে এবং নিজেরাও সে সব হেদায়েতি কথা ও উপদেশ মেনে চলবে। ফলে যাকে নসিহত প্রদান করা হবে; আর যে ব্যক্তি নসিহত প্রদান করবে; এ আয়াতের শিক্ষায় উভয়েরই ফায়েদা হাসিল হবে।
এ কারণে ইসলামে নসিহত প্রদানের মানদণ্ডই হলো- নিজে ভাল কাজ করবে; অন্যকে ভাল করতে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাবে। আর এ ভালো কাজে নিয়োজিত আছে পৃথিবীর অগণিত অসংখ্য বনি আদম।
ভালো কাজের উৎসাহ বা উপদেশ প্রদানে ইসলামি স্কলারগণের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
>> আল্লামা ইবনে কাছির রাহমাতুল্লাহি আলাইহ স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘ভালো কাজের নির্দেশ দেয়া যেমন কর্তব্য, তেমনি ভাল কাজ করাও একটি স্বতন্ত্র কর্তব্য। অতএব নিজেও ভাল কাজ করবে এবং অন্যকেও ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
>> আল্লামা আলুসি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা করা একটি বিশেষ কর্তব্য। যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করে আর অপরকে ভালো কাজের উপদেশ দেয়। তার একটি কাজ ভালো আর অপরটি মন্দ কাজ। আর যদি অপরকে নসিহত করা বর্জন করে, তবে দু’টি কাজই হবে মন্দ। তাই বে-আমল লোকও সত্যের নির্দেশ দিতে পারবে।
>> তাফসিরে রুহুল মাআনি নসিহত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘বে-আমল উপদেশ দানকারীর প্রতি তিরস্কার রয়েছে ঠিক। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সে অপরকে নসিহত বা উপদেশ প্রদান করতে পারবে না। বরং অপরকে নসিহতের পাশাপাশি নিজেও আমল করতে স্বচেষ্ট হবে।
>> তাফসিরে মারেফুল কুরআনে আল্লামা মুফতি শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া একটি স্বতন্ত্র নেক কাজ। নিজে আমল না করার জন্য নসিহত প্রদান করা থেকে বিরত থাকার কোনো যুক্তি নাই। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন-
যদি প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে পাপী বলে অন্যকে পাপ কার্য থেকে নিষেধ করা ছেড়ে দেয়, আর সে এ কথা মনে করে যে, যেদিন নিজে সম্পূর্ণ নিঃস্পাপ হবে সেদিনই অপরকে নসিহত করবো। তাহলে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। সত্যের নির্দেশ দেয়ার কেউ থাকবে না। এ পৃথিবীতে কে এমন আছে যে সম্পূর্ণ নিঃষ্পাপ?
এ প্রসঙ্গে মুফতি শফি সাহেব হজরত হাসান বসরির একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন-
‘শয়তানের আকাঙ্ক্ষা তো এই যে, মানুষ এ ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে আল্লাহর দ্বীনের প্রচারের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকুক।’
তাইতো আশরাফ আলি থানবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ‘বে-আমল আলেমের পক্ষে ওয়াজ-নসিহত করাও বৈধ। বরং যারা নসিহত করবে তাদের জন্যসহ সকলের জন্য বে-আমল হওয়া জায়েজ নয়। তাই নসিহতের পাশাপাশি নিজের সংশোধনের চেষ্টা করা কর্তব্য।
পরিশেষে...
অন্যকে ভাল কাজের উপদেশ প্রদানের সঙ্গে সেঙ্গ নেককার হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং পথহারা জাতিকে সত্যের পথে পরিচালিত করার দায়িত্বও মুসলিম উম্মাহকেই পালন করতে হবে।
মনের রাখতে হবে, অপরকে সত্যের নসিহত প্রদান করে নিজে নসিহত বর্জন করা হবে নিতান্ত গর্হিত কাজ। তাই আত্ম-সংশোধনের চেষ্টা করার পাশাপাশি অন্যকে সংশোধনে নিজেকে আত্ম-নিয়োগ করতে হবে।
তবে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে প্রথমে অন্যায় অপরাধ থেকে নিজের বেঁচে থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে ‘নিজে বাঁচ এবং তোমার আহল তথা পরিবার-পরিজনকেও বাঁচাও।’ তাই নিজে আমল করে অন্যকে আমল করার তাগিদ দেয়া জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে সত্য ও সঠিক পথ গ্রহণ করে অন্যকে নসিহত প্রদান এবং অসৎ ও অন্যায় পথ বর্জন করতে উপদেশ প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম