দুনিয়ার কাজ হোক পরকালের পাথেয়
মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আখেরাত বা পরকাল। দুনিয়া হচ্ছে পরকালের সঞ্চয় জমানোর স্থান। এ স্থানে মানুষ সুনির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে উত্তম আমল ও আখলাকের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করে।
দুনিয়া মহব্বত ততটুকু করতে হবে; যতটুকু করলে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে যথেষ্ট হবে। কারণ দুনিয়া হলো মানুষের প্রয়োজন পূরণের স্থান। আর রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণায় তা হলো পরকালে আবাদ ভূমি। তিনি বলেছেন-
‘দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র।’
আখেরাতের সম্বল সংগ্রহে মানুষকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে একটা সময় ফ্রেম দিয়ে দিয়েছেন। কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ভাল-মন্দ সংমিশ্রণ করে বিবেক বা জ্ঞানের পরীক্ষায় ফেলেছেন। দুনিয়ার কাজ-কারবার, স্ত্রী-পুত্র, বন্ধু-বান্ধব, ধন-সম্পদ, রং-তামাশা ও সংসার দিয়েছেন।
আবার এ জীবন-সংসারকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য বিধান দিয়েছেন। অন্তরে দুনিয়ার প্রেম-মহব্বত খুব বেশি দিয়েছেন। এর সবই মানুষের জন্য পরীক্ষাগার।
দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে মানুষের জীবনাচারই প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়; বরং মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল আখেরাত বা পরকাল। যেখানে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাই দুনিয়ার এ নির্ধারিত ক্ষণস্থায়ী জীবনের মোহে পড়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ থেকে উদাসীন হওয়া যাবে না।
দুনিয়ার জীবনের প্রেম-মোহ যেন মানুষকে গাফেল করে না ফেলে এ জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন-
‘তোমরা জেনে রেখ, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্বপ্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা হলো ‘বৃষ্টি’, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য ভাণ্ডার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সুরা হাদিদ : আয়াত ২০)
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রকৃত বন্ধু ও অভিভাবক। তিনিই মানুষকে অতি ভালবেসে সৃষ্টি করেছেন। যে কারণে আল্লাহ দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে কোনো মানুষকেই রিজিক, আলো-বাসাতসহ তাঁর প্রদত্ত কোনো নেয়ামত থেকেই বঞ্চিত করেননি। ভাল-মন্দের চূড়ান্ত ফয়সাল যা হওয়ার; তা হবে পরকালে।
সুতরাং কুরআনের সতর্কবার্তার পর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সতর্কবার্তাও মানুষের সঠিক পথে চলার পাথেয়। তিনি বলেছেন-
‘সাবধান! দুনিয়া অভিশপ্ত তবে আল্লাহর স্মরণ (বিধি-বিধান পালন) তাঁর প্রিয় আমল। আর আলেম ও মুতাআল্লিম (জ্ঞানী ও জ্ঞান অন্বেষণকারী) ব্যতিত পৃথিবীতে যতকিছু আছে সবই অভিশপ্ত।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
পরিশেষে…
স্মরণযোগ্য কথা হলো দুনিয়া ও পরকাল পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানের জায়গা। যার একটিকে প্রাধান্য দিতে গেলে অন্যটি মারাত্মকভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হবে। তাই দুনিয়াকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহের স্থান মনে করে সঠিক পথে চলতে হবে।
দুনিয়াকে আমলের স্থান হিসেবে মর্যাদা দিয়ে আল্লাহর বিধানের হক আদায় করতে হবে। আর পরকালকে চূড়ান্ত জীবনকাল মনে করে দুনিয়ার নেয়ামতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। তবেই আসবে সফলতা। তবেই সার্থক হবে প্রিয়নবির ঘোষণা, ‘দুনিয়ার পরকালের শস্যক্ষেত্র।’
তাই সঠিক পথে চলার জন্য প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ অমীয় বাণীকে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেছেন-
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে মহব্বত করল সে তার পরকালকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। আর যে ব্যক্তি পরকালকে মহব্বত করল সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করল। সুতরাং তোমরা অস্থায়ী বস্তুর ওপর চিরস্থায়ী বস্তুকে প্রাধান্য দাও।’ (মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি, মিশকাত)
মানুষকে পরকালের পাথেয় সংগ্রহের নসিহত প্রদান করে অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন-
‘দুনিয়া পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে। আর পরকাল সামনে চলে আসছে। (মানুষের অন্তরে) এ দু’টির প্রতিটিরই রয়েছে (প্রবল) আসক্তি। সুতরাং তোমরা পরকালের প্রতি আসক্ত হও। দুনিয়ায় আসক্ত হইও না। কারণ এখন (দুনিয়া) আমলের সময়; কিন্তু (কোনো) হিসাব নেই। আর আগামীকাল (পরকাল) হবে হিসাবের; সেখানে আমল করার (কোনো) সুযোগ নেই।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চিরস্থায়ী পরকালের জন্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাঁর বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম