কেয়ামতের ময়দানের প্রথম বিচার
ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা বহির্ভূত ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। যাদের ইবাদতে একনিষ্ঠতা নেই; আছে রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছার হিসাব-নিকাশ ও বিচার-ফয়সালা হবে প্রথম। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে সে প্রসঙ্গ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।
দুনিয়ার খ্যাতি ও যশ লাভে যে ব্যক্তি কোনো ভাল ইবাদত-বন্দেগি করে তার কোনো ভালকাজই গ্রহণ যোগ্য হবে না। নিয়তবিহীন অন্তসারশূন্য আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। এ ব্যাপারে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তিকে বিচারের জন্য পেশ করা হবে; সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর এজলাসে উপস্থিত করা হবে।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে (দুনিয়া প্রদত্ত) নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন; আর সেও তা স্মরণ করবে। তারপর আল্লাহ তাআলা তোকে জিজ্ঞাসা করবেন, আচ্ছা বলতো শুনি এত সব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতায় তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবে, ‘আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি শহীদ হয়েছি।
তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ; বরং তুমি এ উদ্দেশ্যে লড়াই করেছ যে, লোকেরা তোমাকে বীর বাহাদুর বলবে। (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) দুনিয়াতে তোমাকে তা বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে আদেশ দেয়া হবে যে, তখন তাকে উপুড় করে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর সেই ব্যক্তিকে বিচারের জন্য উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দ্বীনি ইলম অর্জন করেছে এবং অপরকেও শিক্ষা দিয়েছে। আর পবিত্র কুরআন নিজে অধ্যয়ন করেছে (এবং অন্যকেও শিক্ষা দিয়েছে) তাকে আল্লাহর দরবারে হাজির করা হবে।
আল্লাহ তাআলা তাকে প্রথমে নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সেও তা স্মরণ করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ সব নেয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ তুমি কি আমল করেছ?
উত্তরে সে বলবে, ‘আমি নিজে স্বয়ং ইলম অর্জন করেছি এবং অপরকে শিক্ষা দান করেছি এবং তোমার স্নতুষ্টির জন্য কুরআন অধ্যয়ন করেছি।
তখন আল্লাহ তাআলা বলনে, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির জন্য নয়; বরং লোকেরা তোমাকে বিদ্বান ও কারি বলবে এ জন্য তুমি দ্বীন শিক্ষা দিয়েছ এবং কুরআন অধ্যয়ন করেছ। (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে বিদ্বান ও কারি বলাও হয়েছে।
অতঃপর (ফেরেশতাদেরকে) তার সম্পর্কে আদেশ দেয়া হবে; সুতরাং তাকে উপুড় করে টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে বিচারের জন্য আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে, যাকে আল্লাহ তাআলা বিপুল ধন-সম্পদ দান করেছেন। তাকে আল্লাহ তাআলা নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। তখন সে সব নেয়ামতের কথা অকপটে স্বীকার করবেন।
তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি এ সব নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ কি আমল করেছ? সে উত্তরে বলবে, ‘যে সব ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যয় করতে তুমি খুশি; এমন একটি পথও আমি সম্পদ দানে বিরত হইনি।
তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি মিথ্যা বলছ। আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নয়; বরং লোকে তোমাকে দানবীর বলবে এ কারণে তুমি দান করেছ। (তোমার অভিপ্রায় অনুযায়ী) তোমাকে দানবীর বলা হয়েছে। অতঃপর (ফেরশতাদের) তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হবে। নির্দেশ মোতাবেক তাকে উপুড় করে টেনে-হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)
ইসলাম যেমন কল্যাণের ধর্ম। সে ধর্ম পালনে নিয়তের পরিশুদ্ধতা আবশ্যক। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া আমল হবে নিষ্ফল। এ কারণেই মানুষের জ্ঞানার্জনকে ফরজ করা হয়েছে। রিয়া বা প্রদর্শনমূলক ইবাদতকে হারাম করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই ইবাদত-বন্দেগি করার এবং জ্ঞানার্জন করার তাওফিক দান করুন। পরকালের সফলতা লাভে এ হাদিস থেকে শিক্ষা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস