সাগরবুকে ইসলামের জয়গান গাইছে মরক্কোর দ্বিতীয় হাসান মসজিদ
সৃষ্টি শৈলীর কারুকাজে অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপনা উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোর সমুদ্র তীরবর্তী শহর কাসাব্লাঙ্কার বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিদ। মরক্কোর সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম মসজিদ এটি। দেখতে যেন আটলালিন্টক মহাসাগরের বুকে চিরে গড়ে ওঠা এক সুন্দর স্থাপনা। রাতে বেলা জ্বলে ওঠা এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
সমুদ্র তীরবর্তী মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরে এ মসজিদটিকে দূরের কোনো জাহাজ থেকে দেখলে মনে হবে সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে দুলছে মসজিদটি। আর এ ঢেউয়ের মধ্যেই যেন নামাজ পড়ছে মানুষ।
২২ একর জায়গার ওপর নির্মিত মসজিদটির এক তৃতীয়াংশই সাগরের কুল ঘেঁষে পানির ওপর নির্মিত। হয়, ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে। আর মুসল্লিরা নামাজ পড়ছেন সেই পানির ওপর। নির্মাণশৈলীতেও অনন্য এ মসজিদটির তিনভাগের একভাগই সাগরের ওপর অবস্থিত।
বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান তার শাসনামলে ফরাসি স্থপতি পিনচিউ নকশায় বয়গিস কোম্পারনির প্রকৌশলীদের দিয়ে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
কাসা পোর্ট রেল স্টেশন থেকে মসজিদটি হাঁটা পথে ২০ মিনিটের দূরুত্বে অবস্থিত। দূর সাগর থেকে মসজিদটিকে দেখতে ছোট মনে হলেও এটি বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম মসজিদ। এ মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার লোক নামাজ পড়তে পারে।
মূল মসজিদের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। ২০০ মিটার (৬৬০ ফিট) দৈর্ঘ্য এবং ১০০ মিটার (৩৩০ফিট) প্রস্থ হলো মূল মসজিদ। আর মসজিদ গ্রাউন্ডে অতিরিক্ত ৮০ হাজার লোক নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে অজুখানার পাশাপাশি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, সমৃদ্ধ পাঠাগার ও বিশাল কনফারেন্স রুম।
মসজিদের মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৯০ফিট)। দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার তথা ১৯ মাইল দূর থেকেই মিনার দেখা যায়। মসজিদের ফ্লোর থেকে ছাদের উচ্চতা দীর্ঘ ৬৫ মিটার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মসজিদের ছাদ খুলে যায় বিধায় এর ভেতরে আলো-বাসাত প্রবেশ করতে পারে। তবে বৃষ্টির সময় মসজিদের ছাদ বন্ধ থাকে।
মসজিদের নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনে মোট ২৫০০ শ্রমিক এবং ১০ হাজার আটিস্ট দীর্ঘ ৭ বছর কাজ করেন। ২৫০০ শ্রমিকের মধ্যে ১৪০০ লোক দিনে আর ১১০০ লোক রাতে অবিরাম কাজ করে যান।
মসজিদটিতে রয়েছে ২৫০০ খুঁটি এবং দামি টাইলসে মোড়ানো পুরো মসজিদ। মসজিদের আঙ্গিনাজুড়ে রয়েছে ১২৪টি ঝরণা এবং মসজিদের অভ্যন্তরকে আলোকিত করতে লাগানো হয়েছে ৫০টি ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি।
যদিও মসজিদটি বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের ৬০তম জন্মদিনে সম্পন্ন করার কথা ছিল। অবশেষে ১১ রবিউল আউয়াল ১৪১৪ হিজরি মোতাবেক ১৯৯৩ সালের ৩০ আগস্ট মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।
দরিদ্র্য আয়ের দেশ মরক্কো কাসাব্লাঙ্কার বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিটি নির্মাণে ব্যয় করেন ৫৮৫ মিলিয়ন ইউরো। মসজিদটি নির্মাণে মরক্কো সরকার পাবলিক অনুদান থেকে সংগ্রহ করেন।
১২ মিলিয়ন লোক এ মসজিদ নির্মাণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এদের মধ্যে সর্বনিম্ন দান ছিল ৫ মরক্কো দিরহাম। যাদের প্রত্যেককে দেয়া ডোনেশন সার্টিফিকেট। এ ছাড়াও সহযোগিতা করেছেন দেশের ব্যবসায়ী ও বিদেশি রাষ্ট্র কুয়েত এবং সৌদি আরব।
সাগর বুকে স্থাপিত সুউচ্চ মিনার বিশিষ্ট বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান মসজিদ যেন ইসলামের জয়গান গাইছে।
এমএমএস/এমএস